এ স্মার্ট ফেব্রিকটি মূলত এক ধরনের শক্তি সংগ্রাহক যন্ত্র। এটি ‘ট্রাইবোইলেক্ট্রিক ইফেক্টে’র শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে, যেখানে পদার্থের মধ্যে ঘর্ষণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
Published : 21 Apr 2024, 04:44 PM
সম্প্রতি গবেষকরা এক ফেব্রিকভিত্তিক এক সেন্সর উদ্ভাবন করেছেন, যা ব্যবহারে কেবল স্পর্শের মাধ্যমেই বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
প্রযুক্তিবিষয়ক জার্নাল ‘ডিভাইস’-এ প্রকাশিত হয়েছে যুগান্তকারী এ গবেষণাটি। ওয়ারএবল বা পরিধানযোগ্য প্রযুক্তি তৈরি করতে উন্নত মেশিন লার্নিংয়ের সঙ্গে প্রচলিত বিভিন্ন এমব্রয়ডারি কৌশলকে এখানে সমন্বয় করা হয়েছে। এটি মোবাইল অ্যাপ ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ফাংশনের মধ্যে নির্বিঘ্নে যোগাযোগ করতে পারে।
সেন্সরটি বানিয়েছেন ‘নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা। ওয়ারএবল বা পরিধানযোগ্য ইলেকট্রনিক্স খাতে বড় এক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এই উদ্ভাবনী সেন্সর, যেখানে পোশাকের সঙ্গে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সমন্বয় ঘটানো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
ব্যবহারকারীর পোশাকে বসানো এই ফেব্রিক সেন্সরটি দেখতে সাধারণ এমব্রয়ডারি করা বোতামের মতোই, বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে যেটি দিয়ে সরাসরি ইলেকট্রনিক ডিভাইস চালানো যাবে।
এ স্মার্ট ফেব্রিকটি মূলত এক ধরনের শক্তি সংগ্রাহক যন্ত্র। এটি ‘ট্রাইবোইলেক্ট্রিক ইফেক্টে’র শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে, যেখানে পদার্থের মধ্যে ঘর্ষণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
এ সেন্সরটি দুটি ভিন্ন ট্রাইবোইলেকট্রিক উপাদান থেকে তৈরি সুতা ব্যবহার করে তৈরি, যেখানে একটি ধনাত্মক চার্জ ও অন্যটি ঋণাত্মক চার্জ রয়েছে।
এরপরে এসব সুতা এমব্রয়ডারি মেশিন ব্যবহার করে প্রচলিত বিভিন্ন জটিল থিডি নকশায় বোনা হয়, যা কার্যকরী ও চাপ-সংবেদনশীল ফেব্রিক তৈরি করে।
থ্রিডি বা ত্রি-মাত্রিক কাঠামোর কারণে এই সেন্সরের নকশাটি বিশেষভাবে উদ্ভাবনী কারণ এমব্রয়ডারিতে সাধারণত দ্বি-মাত্রিক প্রকৃতি দেওয়াই চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।
“ফেব্রিকের মধ্যে একটি ত্রিমাত্রিক ফাঁক তৈরির কাজটি ছিল মূল চ্যালেঞ্জ,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান গবেষক রং ইয়িন।
এমব্রয়ডারির মধ্যে একটি নল বা চেম্বার বানিয়ে গবেষকরা এ গুরুত্বপূর্ণ ফাঁক তৈরি করতে সক্ষম হন, যা এ সেন্সরের সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা ও নির্ভুলতাও বাড়িয়ে দেয়।
সেন্সরটিতে একবার কোনও স্পর্শ বা অঙ্গভঙ্গি শনাক্ত হলে, সে ডেটা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় ফেব্রিকে এমবেড করা মাইক্রোচিপে।
এ মাইক্রোচিপটিকে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম দিয়ে সাজানো হয়েছে ও এর বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য তৈরি করতে এক ধরনের ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করা হয়, যা ফেব্রিকের স্বাভাবিক গতিবিধির সময় অপ্রাসঙ্গিক বা দুর্ঘটনাজনিত বিভিন্ন স্পর্শকে ফিল্টার করে থাকে।
এ প্রযুক্তির ব্যবহারিক প্রয়োগ অনেক বিস্তৃত।
উদাহরণ হিসেবে, গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, কীভাবে সেন্সরটি এমন একটি মিউজিক অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যেখানে গানের ট্র্যাক প্লে, পজ, স্কিপ ও ভলিউমে সামঞ্জস্য আনার মতো বেশ কিছু কমান্ড আছে।
এমনকি পাসওয়ার্ড সেটআপ ও ভিডিও গেইম নিয়ন্ত্রণের মতো অন্যান্য কাজেও সম্ভাবনা দেখাচ্ছে এ প্রযুক্তি, যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কাপড় থেকেই।
ফেব্রিকভিত্তিক এই সেন্সরটি এখনও নির্মাণাধীন পর্যায়ে থাকলেও ওয়ারএবল প্রযুক্তিকে আরও সমন্বিত ও ব্যবহারবান্ধব করার ক্ষেত্রে একে বড় অগ্রগতি হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে নোরিজ।