কণ্ঠস্বর থেকেই আক্রান্ত কি না জানাবে নতুন কোভিড অ্যাপ

“সাধারণ ভয়েস রেকর্ডিং ও সূক্ষ্মভাবে সমন্বয় করা এআই অ্যালগরিদমের মাধ্যমেই উচ্চ মাত্রার নির্ভুলতা অর্জন করা সম্ভব, যা বলে দেবে কোন রোগী কোভিড-১৯ আক্রান্ত।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Sept 2022, 01:43 PM
Updated : 5 Sept 2022, 01:43 PM

বিজ্ঞানীরা এমন এক মোবাইল অ্যাপ তৈরি করছেন, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তির কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণ করে ‘নির্ভুলভাবে’ শনাক্ত করতে পারে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীকে।

বার্সেলোনায় অবস্থিত ‘ইউরোপিয়ান রেসপিরেটরি সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেসে’ অ্যাপটি গবেষণার জন্য উপস্থাপিত হয়েছে সোমবার, যেখানে তারা খুঁজে পান, রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত ‘ল্যাটারাল ফ্লো’ টেস্টের তুলনায় বেশি নির্ভুল ছিল এটি। ‘এআই’ মডেলটির নির্ভুলতার মাত্রা ছিল ৮৯ শতাংশ।

বিভিন্ন ব্র্যান্ড বিবেচনায় এই নির্ভুলতা ভিন্ন হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ব্রিটিশ অনলাইন সংবাদপত্র ‘দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট’।

নেদারল্যান্ডসের মাসস্ট্রিচ ইউনিভার্সিটির ও অন্যান্য গবেষকরা বলেছেন, বিভিন্ন নিম্ন আয়ের দেশে ব্যবহার করা যেতে পারে অ্যাপটি, যেখানে ‘পিসিআর’ পরীক্ষা তুলনামূলক ব্যয়বহুল।

“এমন সম্ভাবনাময় ফলাফল থেকে বোঝা যায় যে সাধারণ ভয়েস রেকর্ডিং ও সূক্ষ্মভাবে সমন্বয় করা এআই অ্যালগরিদমের মাধ্যমেই উচ্চ মাত্রার নির্ভুলতা অর্জন করা সম্ভব, যা বলে দেবে কোন রোগী কোভিড-১৯ আক্রান্ত।”

মাত্র ‘এক মিনিটেরও কম’ সময়ে অ্যাপটি দূরবর্তী এবং ভার্চুয়াল পরীক্ষা করতে পারে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

“উদাহরণ হিসেবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে বড় কোনো জনসমাগমের প্রবেশস্থলে, র‍্যাপিড স্ক্রিনিং ব্যবস্থা সক্রিয় করার মাধ্যমে।” --এক বিবৃতিতে বলেছেন মাসস্ট্রিচ ইউনিভার্সিটির ‘ইনস্টিটিউট অফ ডেটা সায়েন্স’ বিভাগের গবেষক ওয়াফা আলজবাওই।

কোভিড যেহেতু শ্বাসযন্ত্রের উপরের অংশে এবং কণ্ঠস্বরে প্রভাব ফেলে, সেই কারণে কণ্ঠস্বর বদলে যায় আক্রান্ত ব্যক্তির। – বলেছেন গবেষকরা।

নতুন গবেষণায় তাদের জিজ্ঞাস্য ছিল– এআই ব্যবহার করে কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণের মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করা সম্ভব কি না।

চার হাজার তিনশ ৫২ জন সুস্থ ও অসুস্থ অংশগ্রহনকারীর কাছ থেকে পাওয়া আটশ ৯৩ টি অডিও নমুনা পরীক্ষা করে দেখেছে বিজ্ঞানীরা, যেখানে তিনশ আট জনের কোভিড পরীক্ষার ফলাফল ‘পজিটিভ’ এসেছে।

অ্যাপটি একবার ফোনে ইনস্টল করার পর নিজের ব্যক্তিগত তথ্য, চিকিৎসার ইতিহাস ও ধুমপান করার অভ্যেস আছে কি না, সেগুলো রেকর্ড করতে হয় অংশগ্রহনকারীকে।

এর পর তিনবার কাশি দিয়ে, তিন থেকে পাঁচবার মুখের মাধ্যমে জোরে শ্বাস নিয়ে ও স্ক্রিনে দেখানো একটি ছোট বাক্য তিনবার পড়ার মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রের কয়েকটি আওয়াজ রেকর্ড করতে বলা হয় তাদের।

‘মেল-স্পেক্টোগ্রাম অ্যানালাইসিস’ নামে পরিচিত একটি কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণের কৌশল ব্যবহার করেছেন বিজ্ঞানীরা। কণ্ঠে জোরের মাত্রা, শক্তি ও সময় বিবেচনায় কণ্ঠের ভিন্নতার মতো বিভিন্ন ফিচার শনাক্ত করে অংশগ্রহনকারীর কণ্ঠস্বরের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করেছেন তারা।

ভিন্ন ভিন্ন এআই মডেল বানিয়ে গবেষকরা খুঁজে বের করেছেন যে, কোনটি কোভিড রোগী শনাক্তের জন্য সেরা হবে।

তারা জানিয়েছেন, অন্যান্য মডেলের চেয়ে ভালো ফলাফল দেখিয়েছে ‘লং-শর্ট টার্ম মেমোরি (এলএসটিএম)’ নামে পরিচিত একটি মডেল, যেখানে সামগ্রিক নির্ভুলতার মাত্রা ছিল ৮৯ শতাংশ।

“ল্যাটারাল ফ্লো টেস্টের ৯৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ স্পেসিফিসিটি রেট তুলনামূলক উচ্চমাত্রার হলেও এর সেন্সিটিভিটি কেবল ৫৬ শতাংশ।”

“এটি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর থেকে বোঝা যায় যে আমাদের পরীক্ষার তুলনায় সংক্রমিত ব্যক্তিকে কোভিড-১৯ নেগেটিভ হিসেবে বেশি ভুলভাবে শনাক্ত করছে ল্যাটারাল ফ্লো টেস্ট।” --বলেছেন আলজবাওই।

“অন্য কথায় বললে, ‘এআই এলটিসিএম’ মডেলের সাহায্যে একশটি ঘটনার মধ্যে কেবল ১১টি ঘটনায় ভুল করেছি আমরা, যারা সংক্রমণ ছড়াতে পারে।” --যোগ করেন তিনি।

“অন্যদিকে ল্যাটারাল ফ্লো টেস্ট ভুল করেছে একশটির মধ্যে ৪৪টি।”

বিজ্ঞানীরা অবশ্য সতর্ক করেছেন যে, এই সব ফলাফলকে গ্রহনযোগ্য করতে ব্যপক সংখ্যক অংশগ্রহনকারী প্রয়োজন।

এই গবেষণার একটি সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তারা বলেছেন, যেসব রোগী বর্তমানে অ্যাপটির সঙ্গে ব্যপকভাবে সম্পৃক্ত অর্থাৎ যারা দৈনিক বা প্রতি সপ্তাহেই এটি ব্যবহার করছেন, কেবল তারাই এআই মডেলিংয়ের পর্যাপ্ত তথ্য দিতে পারবেন।

“এই ব্যবস্থায় কোন মাত্রার নির্ভুলতা গ্রহনযোগ্য হবে ও ‘এক্সাসারবেশন অ্যালার্ট সিস্টেম’ কীভাবে কাজ করবে, সেগুলো নির্ধারণ করতে রোগীর সম্পৃক্ততা নিয়ে আরও বেশি গবেষণা দরকার।” --বলেছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টল অংশের প্রকল্প প্রধান জেমস ডড।

“বিভিন্ন সেন্সিং প্রযুক্তির আত্মপ্রকাশ ঘটিয়ে মনিটরিং ব্যবস্থা ও রোগ শনাক্ত করতে পারে এমন মডেলের কার্যক্ষমতা আগের তুলনায় বাড়ানো যেতে পারে।”