‘এক্সএমএম-নিউটন’ নামের স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা তারার বাইরের বায়ুমণ্ডল থেকে এক্স-রে নির্গমন দেখতে পান, যা মূলত অ্যাস্ট্রোস্ফিয়ার নামে পরিচিত।
Published : 18 Apr 2024, 07:34 PM
প্রথমবারের মতো সূর্যের মতো দেখতে একটি তারার বায়ুপ্রবাহ পরিমাপের দাবি করেছেন বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল।
এ গবেষণায় তিনটি তারার সরাসরি নাক্ষত্রিক বায়ুপ্রবাহ পরিমাপের মাধ্যমে এই যুগান্তকারী কৃতিত্ব অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে উঠে এসেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজের প্রতিবেদনে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনা’র অধ্যাপক ক্রিস্টিনা কিসলিয়াকোভার নেতৃত্বে এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে মহাকাশবিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’তে।
‘এক্সএমএম-নিউটন’ নামের স্পেস টেলিস্কোপের সহায়তায় বিজ্ঞানীরা এ তারার বাইরের বায়ুমণ্ডল থেকে এক্স-রে নির্গমন দেখতে পান, যা মূলত ‘অ্যাস্ট্রোস্ফিয়ার’ নামে পরিচিত।
সূর্যের মতো একইরকম বিভিন্ন তারা থেকে বেরিয়ে আসা প্রোটন ও ইলেকট্রন মহাকাশে তৈরি করে বড় আকারের গরম প্লাজমা বুদবুদ।
এ ধরনের নাক্ষত্রিক বায়ুর গতিবিধি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিভিন্ন গ্রহ কীভাবে বিবর্তিত হয় তাতে প্রভাব ফেলতে পারে এটি। আর এ ধরনের বায়ুপ্রবাহ বিভিন্ন গ্রহকে হয় বাসযোগ্য না হয় প্রাণহীন পাথরে পরিণত করতে পারে।
লাখ লাখ বছর ধরে গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে এ ধরনের বায়ুপ্রবাহ। এমনকি গ্রহগুলোর প্রাণ সঞ্চার করার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে থাকে এটি।
গবেষণাটিতে ‘৭০ ওফিউচি’, ‘এপিসিলন এরিডানি’ ও ‘৬১ সিগনি’ নামের তিনটি তারার ওপর নজর দেওয়া হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো আমাদের সূর্যের মতো এদের জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।
তারার অ্যাস্ট্রোস্ফিয়ার থেকে আসা এক্স-রে’গুলোকে এ অঞ্চলের অন্যান্য এক্স-রে থেকে আলাদা করতে নতুন একটি কৌশল ব্যবহার করেছেন গবেষকরা । তবে, বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং ছিল এদের সংকেতের অস্পষ্টতা ও তারার বড় দূরত্বের কারণে।
এক্স-রে বর্ণালীর বিভিন্ন রেখা, বিশেষ করে অক্সিজেনের বিভিন্ন আয়ন বিশ্লেষণ করে বায়ুপ্রবাহের কারণে এসব তারা থেকে হারিয়ে যাওয়া ভরের পরিমাণ অনুমান করতে পেরেছে দলটি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই তিন তারার নাক্ষত্রিক বায়ুপ্রবাহ সূর্যের বায়ুপ্রবাহের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। এর পেছনের কারণ সম্ভবত তারার শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র।
কিসলিয়াকোভা বলেছেন, পৃথিবী থেকে দূরবর্তী বিভিন্ন তারায় এক্স-রের নির্গমন পর্যবেক্ষণ করা জটিল হলেও এর বায়ুপ্রবাহের গঠনপ্রক্রিয়া থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তার নেতৃত্বে এ গবেষণা দলের কৌশলটি প্রথমবারের মতো এ ধরনের নির্গমন শনাক্ত করতে পেরেছে। পাশাপাশি, তারার বায়ুপ্রবাহ ও এর আশপাশের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বোঝার ক্ষেত্রেও সহায়ক ছিল এটি।
এ গবেষণার আগে বিজ্ঞানীদের কাছে এ ধরনের বায়ুপ্রবাহের কেবল পরোক্ষ প্রমাণ ছিল। এক্স-রে’র মাধ্যমে সরাসরি বায়ুপ্রবাহ পর্যবেক্ষণের নতুন এই পদ্ধতিকে বড় অগ্রগতি হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে নোরিজ।
ভবিষ্যতে ‘ইউরোপিয়ান অ্যাথেনা’ মিশনের ‘এক্স-আইএফইউ’ স্পেকট্রোমিটারের মতো উদীয়মান উচ্চ-রেজোলিউশনের বিভিন্ন টুল দিয়ে তারার বায়ুপ্রবাহের বিশদ পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে।
এ গবেষণার সহ-লেখক দিমিত্রা কাউট্রুম্পা বলেছেন, ভবিষ্যতে বিভিন্ন টুলের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে এর চেয়েও ক্ষীণ সংকেত পরীক্ষা ও এ ধরনের তারার বায়ুপ্রবাহ কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা আরও তথ্য জানতে পারবেন।