“জনগণ কথা বলেছে। আমার লোকেশনে থাকা অ্যাকাউন্টগুলো থেকে শীঘ্রই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।” --শনিবার এক টুইটে বলেন মাস্ক।
Published : 17 Dec 2022, 05:39 PM
নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার এক দিনের মাথায় অনলাইনে সমালোচনার মুখে পড়ে টুইটারে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মীর অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে এনেছেন সামাজিক প্ল্যাটফর্মটির মালিক ইলন মাস্ক।
শুক্রবারের ওই ‘নজিরবিহীন স্থগিতাদেশের’ বিপরীতে, বিশ্বের বিভিন্ন অংশের সরকারী কর্মকর্তা, আইনজীবি দল ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোর কাছ থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে অ্যাকাউন্টগুলো পুনর্বহাল করেছে টুইটার।
সামপ্রতিক এই ঘটনায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে টুইটার বিপদের মুখে ফেলছে বলেও সমালোচনা উঠে এসেছে।
এর পরপরই মাস্ক টুইটারে এক জরিপ চালিয়ে দেখেন, বেশিরভাগ উত্তরদাতাই তাদের অ্যাকাউন্ট তাৎক্ষণিকভাবে ফেরানোর পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
“জনগণ কথা বলেছে। আমার লোকেশনে থাকা অ্যাকাউন্টগুলো থেকে শীঘ্রই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।” --শনিবার এক টুইটে বলেন মাস্ক।
Unsuspend accounts who doxxed my exact location in real-time
— Elon Musk (@elonmusk) December 16, 2022
এই প্রসঙ্গে টুইটারের বক্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারেনি রয়টার্স। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন ও ওয়াশিংটন পোস্টের বিভিন্ন সাংবাদিকের নিষিদ্ধঘোষিত অ্যাকাউন্ট পুনর্বহালের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংবাদমাধ্যমটি।
এর আগে, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন কর্মকর্তা এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
এই ঘটনাকে ‘থার্সডে নাইট ম্যাসাকার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এক সুপরিচিত নিরাপত্তা গবেষক। আর সমালোচলকদের কাছে এটি বিবেচিত হচ্ছে নিজেকে ‘বাক স্বাধীনতার ধারক’ দাবি করা মাস্কের ‘দ্বিমুখী আচরণের জলজ্যান্ত প্রমাণ’ হিসেবে। কারণ, এতে তিনি নিজেই ব্যক্তিগত অপছন্দের বিভিন্ন বক্তব্য ও ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছেন।
Everybody sticking around Twitter because they didn't want to cede the space should probably take account of this Thursday Night Massacre and move their main posting elsewhere.
— Alex Stamos (@alexstamos) December 16, 2022
You can find me at:https://t.co/tRrvGDI7UV https://t.co/YLWzu6BgWW
২০২০ সালের মার্চের পর থেকে সাপ্তাহিক হিসাবে সবচেয়ে বড় লোকসানের মুখে পড়েছে মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি টেসলার শেয়ার। শুক্রবার, এর শেয়ারের দাম কমেছে চার দশমিক সাত শতাংশ। এই বিষয়ে মাস্কের বিক্ষিপ্ত মনোভাব ও তুলনামূলক মন্থর বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণে শঙ্কা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও।
শুক্রবার ফ্রান্সের শিল্পমন্ত্রী রঁলা লেসকিউর টুইট করেন, সাংবাদিকদের ওপর মাস্কের স্থগিতাদেশের পর তিনি নিজেও টুইটারে কার্যক্রম বন্ধ করে দেবেন।
Suite à la suspension de comptes de journalistes par @elonmusk, je suspends toute activité sur @Twitter jusqu’à nouvel ordre.
— Roland Lescure (@RolandLescure) December 16, 2022
জাতিসংঘের যোগাযোগ প্রধান মেলিসা ফ্লেমিং টুইট করেন, স্থগিতাদেশের কারণে তিনি ‘গভীরভাবে বিরক্ত’ ও ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কোন খেলনা নয়’।
Deeply disturbed by reports of journalists being arbitrarily suspended from Twitter.
— Melissa Fleming ???????? (@MelissaFleming) December 16, 2022
Media freedom is not a toy. A free press is the cornerstone of democratic societies and a key tool in the fight against harmful disinformation.
জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তর টুইটারকে সতর্ক করেছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিপদের মুখে ফেলবে এমন পদক্ষেপে তাদের আপত্তি আছে।
ইলনজেট
এই স্থগিতাদেশের গোড়াপত্তন হয় ‘ইলনজেট’ নামের এক টুইটার অ্যাকাউন্ট নিয়ে তৈরি মতামতের অমিল থেকে। মাস্কের ব্যক্তিগত প্লেনের সর্বজনীনভাবে উন্মুক্ত বিভিন্ন তথ্য অনুসরণ করে এটি।
বুধবার, ওই অ্যাকাউন্ট’সহ ব্যক্তিগত জেট সম্পর্কিত অন্যান্য সকল অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় টুইটার। তবে, এর আগের টুইটে বাক স্বাধীনতার কারণ দেখিয়ে ইলনজেট-এর অ্যাকাউন্টে নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ার কথা বলেছিলেন মাস্ক।
পরপরই, নিজস্ব ‘লাইভ লোকেশন’ তথ্য শেয়ারিং সংশ্লিষ্ট প্রাইভেসি নীতিমালায় পরিবর্তন আনে টুইটার।
পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার বিকেলে নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন এবং ওয়াশিংটন পোস্ট’সহ বেশ কিছু সংবাদকর্মীর অ্যাকাউন্ট টুইটারে কোনো নোটিশ ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায়।
টুইটারের নিরাপত্তা প্রধান এলা আরউইন এক ইমেইল বার্তায় রয়টার্সকে বলেন, ইলনজেটের অ্যাকাউন্টের সরাসরি লিংক পোস্টের মাধ্যমে নতুন প্রাইভেসি নীতিমালা লঙ্ঘন করা সকল অ্যাকাউন্ট নিজ হাতে পর্যালোচনা করে দেখেছে তার দল।
“আমি বুঝতে পেরেছি, এর সকল ফোকাস মূলত সাংবাদিকদের অ্যাকাউন্টের দিকে। তবে, আজ আমরা সাংবাদিক-অসাংবাদিক, সব অ্যাকাউন্টে সমানভাবে এই নীতিমালা প্রয়োগ করেছি।” --ইমেইল বার্তায় বলেন আরউইন।
মার্কিন সংগঠন ‘সোসাইটি ফর অ্যাডভান্সিং বিজনেস এডিটিং অ্যান্ড রাইটিং’ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, টুইটারের আচরণ ‘প্রথম সংশোধনীর চেতনার পাশাপাশি সামাজিক প্ল্যাটফর্মের ওই নীতির লঙ্ঘন করেছে, যা সবার কাছে সমানভাবে তথ্য পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে।’
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে নিজের ‘রিয়েল টাইম লোকেশন’ পোস্ট করার অভিযোগ তুলেছনে মাস্ক, যা তার পরিবারের জন্য ‘হত্যার ঝুঁকি’ হিসেবে বিবেচিত।
সংবাদকর্মীদের উপস্থাপনায় ‘টুইটার স্পেসেস’ নামে পরিচিত এক অডিও আলাপচারিতায় অল্প সময়ের জন্য উপস্থিত ছিলেন মার্কিন এই ধনকুবের। এর ফলে সাংবাদিকরা মাস্কের রিয়েল-টাইম লোকেশন প্রকাশ করে নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
“আমাকে ‘ডক্স’ করলে আপনি নিষিদ্ধ হবেন। এটাই শেষ কথা।” --বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন মাস্ক।
‘ডক্স’ বলতে অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করাকে বোঝায়।
ওই অডিও চ্যাটে আরও ছিলেন টুইটারে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়া ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক ড্রিউ হারওয়েল। ইলনজেটের লিঙ্ক পোস্ট করে মাস্ক বা তার পরিবারের সঠিক লোকেশন শেয়ারের ধারণা তিনি পুরোপুরি নাকচ করেন।
We’re fixing a Legacy bug. Should be working tomorrow.
— Elon Musk (@elonmusk) December 16, 2022
এর পরপরই, স্পেসেস চ্যাট উপস্থাপন করা মার্কিন গণমাধ্যম বাজফিডের প্রতিবেদক কেটি নটোপলোস টুইট করেন, অডিও সেশনটি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় ও এর রেকর্ডিং মিলছে না।
“আমরা একটি লিগাসি বাগ নিয়ে কাজ করছি। কাল থেকে এটি কাজ করবে।” -- ওই ঘটনা সম্পর্কিত এক টুইটের জবাবে বলেন মাস্ক।।