“অবৈধ কনটেন্ট ও প্ল্যাটফর্মের কার্যবিধি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারার একমাত্র কারণ হতে পারে, আপনাদের কাছে এর জবাব নেই।”
Published : 16 Oct 2023, 03:28 PM
শিশু নিপীড়ন বিরোধী তদন্তে সহযোগিতায় ব্যর্থ হওয়ায় ইলন মাস্কের সামাজিক মাধ্যম এক্স’কে তিন লাখ ৮৬ হাজার ডলার জরিমানা করেছে অস্ট্রেলিয়ার এক নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
নিজস্ব কনটেন্ট মডারেশন ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ আসার পর থেকেই প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপনদাতাদের ধরে রাখতে কাঠখড় পোড়াচ্ছে এক্স। ফলে, এই খবরকে কোম্পানির জন্য ‘বড় ধাক্কা’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
এক্স’কে এই জরিমানা করেছে অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ই-সেইফটি কমিশন। তাদের দাবি, প্ল্যাটফর্মে শিশু নিপীড়ন সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট ঠেকাতে কোম্পানি কত সময় নেয় বা কোন পদ্ধতিতে এগুলো শনাক্ত করা হয়, এমন প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে এর আগে টুইটার নামে পরিচিতি পাওয়া সামাজিক মাধ্যমটি।
২০২২ সালের অক্টোবরে চার হাজার চারশ কোটি ডলারে মাস্কের টুইটার অধিগ্রহণের তুলনায় এ সংখ্যা নেহাতই কম হলেও বিজ্ঞাপনদাতারা প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ কমিয়ে দেওয়ায় আয় কমতে থাকা কোম্পানিটির সুনামে বড় আঘাত এই জরিমানা।
অন্যদিকে, কনটেন্ট মডারেশন নিয়ে কাজ করা দল ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি হাজার হাজার নিষিদ্ধঘোষিত অ্যাকাউন্টকেও ফেরার সুযোগ দিয়েছে সামাজিক মাধ্যমটি।
সম্প্রতি ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণ সংশ্লিষ্ট ভুল তথ্য ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে এক্স-এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ইইউ।
“আপনার কাছে যদি এইসব প্রশ্নের জবাব থাকে বা আপনি বিশ্বব্যাপী অবৈধ কনটেন্ট ঠেকানোর মতো যথেষ্ট জনবল বা প্রযুক্তি রাখাকে অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য করেন, তবে বিষয়টি সহজ।” --বলেন অস্ট্রেলিয়ার ই-সেইফটি কমিশনার জুলি ইনম্যান গ্রান্ট। এ ছাড়া, ২০১৬ সাল পর্যন্ত টুইটারের জননীতি বিভাগের পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।
“অবৈধ কনটেন্ট ও প্ল্যাটফর্মের কার্যবিধি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারার একমাত্র কারণ হতে পারে, আপনাদের কাছে এর জবাব নেই।”
মাস্কের অধিগ্রহণের পর এক্স-এর অস্ট্রেলীয় দপ্তরটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে কোম্পানির স্থানীয় মুখপাত্রের খোঁজ পায়নি রয়টার্স। এ ছাড়া, কোম্পানির স্যান ফ্রান্সিসকোর দপ্তর থেকেও তাৎক্ষণিক জবাব মেলেনি।
২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় কার্যকর হওয়া আইন অনুসারে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অনলাইন সুরক্ষাবিষয়ক তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধ্যকতা আছে বিভিন্ন কোম্পানির। আর এ নির্দেশ না মানলে জরিমানার মুখে পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
গ্রান্ট বলেন, এক্স জরিমানা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে পারে।
টুইটারকে প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে পরিচালনা শুরুর পর এক পোস্টে মাস্ক বলেন, কোম্পানির ‘প্রথম অগ্রাধিকার থাকবে শিশু নিপীড়ন বিষয়ক কনটেন্ট সরানোর দিকে’। তবে, অস্ট্রেলীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা যখন জিজ্ঞেস করে যে, এক্স কীভাবে শিশু নিপীড়নের কনটেন্ট ঠেকাচ্ছে, তখন এর জবাবে এক্স বলেছে, ‘বেশিরভাগ তরুণ ব্যবহারকারীই তাদের পরিষেবা ব্যবহার করেন না’।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিকে এক্স আরও বলেছে, তাদের কাছে থাকা ‘অ্যান্টি-গ্রুমিং’ প্রযুক্তিটি ‘পুরোপুরি নির্ভুল নয়’।
এ ছাড়া, কমিশন গুগলকেও একই ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্র্যান্ট। তবে, গুগলের কিছু জবাবকে ‘সুনির্দিষ্ট নয়’ বলে আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি। এদিকে, গুগল বলেছে, তারা সংস্থাটিকে সব সময় সহযোগিতা করলেও তাদের দেওয়া সতর্কবার্তার কারণে কোম্পানি হতাশ।
“আমরা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পাশাপাশি, অস্ট্রেলীয়দের অনলাইনে সুরক্ষিত রাখতে আমরা দেশটির ই-সেইফটি কমিশনার, সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক উপায়ে কাজ করতে আগ্রহী।” --বলেন গুগলের অস্ট্রেলিয়া অংশের সরকারী ও জননীতি বিভাগের পরিচালক লুসিন্ডা লংক্রফট।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, এক্স-এর বেলায় প্রশ্নগুলো কিছুটা গুরুতর। এর মধ্যে রয়েছে শিশু নিপীড়ন বিষয়ক কনটেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারা কত সময় নেয়, লাইভস্ট্রিমে শিশু নিপীড়ন শনাক্তে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় ও তাদের কনটেন্ট মডারেশন, সুরক্ষা ও জননীতি বিভাগে কতজন কর্মী রয়েছেন।
নিজেদের বৈশ্বিক কর্মী সংখ্যা থেকে ৮০ শতাংশ ছাঁটাইয়ের বিষয়টি সংস্থাটির কাছে নিশ্চিত করেছে এক্স। এ ছাড়া, মাস্কের অধিগ্রহণের আগে কোম্পানির অস্ট্রেলিয়া অংশের জননীতি বিভাগে দুইজন কর্মী কাজ করলেও এখন আর কেউই নেই।
মাস্ক কোম্পানিকে প্রাইভেট করে ফেলার পর প্ল্যাটফর্মের শিশু নিপীড়ন সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট শনাক্ত করার ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে যায়।
সংস্থাটি বলেছে, এক্স নিয়ন্ত্রকদের জানিয়েছে যে তারা ব্যক্তিগত বার্তা শনাক্ত করার ব্যবস্থা ব্যবহার করছে না কারণ ‘ওই প্রযুক্তি নিয়ে এখনও কাজ চলছে’।