জেমস ওয়েবে ধারণ করা সাম্প্রতিক এ যুগান্তকারী ছবিটি মূলত প্রায় ছয়শ কোটি আলোকবর্ষ দূরের ‘ক্রেটার’ নক্ষত্রপুঞ্জে থাকা ‘আরএক্স জে১১৩১-১২৩১’ নামের এক কোয়াসারের।
Published : 08 Jul 2024, 02:58 PM
সম্প্রতি দূরবর্তী এক রত্নখচিত কোয়াসারের বিস্ময়কর দৃশ্য দেখিয়েছে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ।
কোয়াসার হল মহাকাশের দূরবর্তী জায়গায় থাকা এমন বিশাল বস্তু, যা থেকে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়ে থাকে।
জেমস ওয়েবে ধারণ করা সাম্প্রতিক এ যুগান্তকারী ছবিটি মূলত প্রায় ছয়শ কোটি আলোকবর্ষ দূরের ‘ক্রেটার’ নক্ষত্রপুঞ্জে থাকা ‘আরএক্স জে১১৩১-১২৩১’ নামের এক কোয়াসারের।
কোয়ারসারটিকে “মহাকর্ষীয় লেন্সিং’য়ের অন্যতম মনোমুগ্ধকর নজির” বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ, যেখানে একটি অগ্রভাগের ছায়াপথ কোয়াসারের আলোকে উজ্জ্বল এক বৃত্তাকার পরিধির মধ্যে ভেঙে ফেলে। এতে করে ওই বস্তুটির চারটি আলাদা ছবি তৈরি হয়।
‘মহাকর্ষীয় লেন্সিং’ বিষয়ে প্রথম অনুমান করেছিলেন আইনস্টাইন। এটি মূলত প্রাকৃতিক টেলিস্কোপের মতো কাজ করে, যার মাধ্যমে কোয়াসারের ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি থাকা বিভিন্ন বস্তু নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ মেলে।
যখন দূরের কোনো বস্তু থেকে আসা আলো পথে কোনো ছায়াপথ বা এর মতো বিশাল কোনো কিছুর পাশ দিয়ে যায়, তখন সেই আলো ছায়াপথের আকর্ষণে ছায়াপথ ঘেঁষে বেঁকে বেরিয়ে যায়। এর ফলে আলো বক্র পথে ভ্রমণ করে।
এর ফলে ওই আলোতে দেখা দূরের বস্তুও অনেক কাছের বলে মনে হয় এবং এই পুরো প্রক্রিয়াটি অনেকটা ম্যাগ্নিফায়িইং গ্লাসের মতো কাজ করে। এর ফলে জ্যোতির্বিদরাও দূরের এমন বস্তুকে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পান, যেগুলো এই আলোর অভাবে দেখতে খুবই অস্পষ্ট বা দূরবর্তী বলে দেখাতো।
কোয়াসার থেকে আসা এক্স-রে নিরীক্ষা করে কোয়াসারের কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাক হোল কী গতিতে ঘুরছে, সে বিষয়ে তথ্য বের করার সম্ভাবনা আছে। এ থেকে ব্ল্যাক হোলটি কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় হচ্ছে, সে বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে।
দুটি ব্ল্যাক হোল সংঘর্ষের প্রাথমিক প্রক্রিয়ায় বড় ব্ল্যাক হোল তৈরি হলে, তা বিভিন্ন পদার্থের এক স্থিতিশীল ডিস্ক গঠন করবে। আর পরবর্তীতে এর মাধ্যমেই ব্ল্যাক হোলে দ্রুত ঘুর্ণন শুরু হয়।
তবে, ব্ল্যাক হোলটি যদি অনেকগুলো ছোট পর্বের মাধ্যমে বড় হতে থাকে, তখন তা এর আশপাশের বিভিন্ন দিক থেকে এলোমেলোভাবে উপাদান সংগ্রহ করবে।
‘আরএক্স জে১১৩১-১২৩১’ থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য অনুসারে, কোয়াসারের ব্ল্যাক হোল যে গতিতে ঘুরছে, তা আলোর গতির অর্ধেকেরও বেশি। এর থেকে ধারণা মেলে, ব্ল্যাক হোলটি বিভিন্ন দিক থেকে উপাদান টেনে আনেনি, বরং একাধিক ব্ল্যাক হোল সমন্বিত হওয়ার মাধ্যমে বড় হয়েছে।
ছবিটি ধারণ করা হয়েছিল জেমস ওয়েবের ‘মিরি (মিড-ইনফ্রারেড ইনস্ট্রুমেন্ট)’ নামের যন্ত্র দিয়ে, যা ‘ডার্ক ম্যাটার’ সংশ্লিষ্ট এক গবেষণা প্রকল্পের অংশ।
ডার্ক ম্যাটার মূলত পদার্থের এমন এক অদৃশ্য রূপ, যেখান থেকে মহাবিশ্বের বেশিরভাগ ভর তৈরি হয়েছে।
নোরিজ বলছে, এ কোয়াসার নিয়ে জেমস ওয়েবের পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিদদের আগের চেয়ে ছোট পরিসরে ডার্ক ম্যাটারের প্রকৃতি খুঁজে বের করতে সাহায্য করতে পারে।