Published : 08 Jan 2023, 04:54 PM
যুক্তরাষ্ট্রের শহর নিউ ইয়র্কের পাবলিক স্কুলগুলোর বিভিন্ন ডিভাইস এবং ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে নিষিদ্ধ হয়েছে ওপেনএআই’র ‘চ্যাটজিপিটি’।
নভেম্বরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত এই চ্যাটবট উন্মোচন করেছে ওপেনএআই। উন্মোচনের পর দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও এটি বিভিন্ন সংস্থার রোষাণলে পড়ে। এই ক্ষেত্রে, উদ্বেগের বিষয় হলো এই চ্যাটবট ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় নকল বা তারা একে দিয়ে প্রবন্ধ লিখিয়ে নিতে পারে। ফলে, তাদের শেখার গতি ‘স্থবির হয়ে যেতে’ পারে বলে উঠে এসেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট এনগ্যাজেটের প্রতিবেদনে।
চ্যাটজিপিটি (‘জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফর্মার’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ) শুরুতে অতি চমকপ্রদ একটি অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে বিবেচিত হলেও, এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অবিশ্বাস্য ক্ষমতার ‘ভালো ও খারাপ’ উভয় দিকেরই ঝলক মিলেছে।
এআই আর্টের ‘টেক্সট-ভিত্তিক’ সংস্করণের মতোই, এটি বিভিন্ন যুক্তি-ভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে ও সেইসব প্রবন্ধ ও আর্টিকল লিখতে পারে, যা বিভিন্ন মানব-লিখিত কনটেন্টে বোঝা জটিল। এ ছাড়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে এদের পার্থক্য বলতে পারাও তুলনামূলক জটিল হয়ে উঠবে। এআই আর্ট বানানোর টুল ‘ডাল-ই ২’ও তৈরি করেছে ওপেনএআই।
“এই টুল দ্রুততার সঙ্গে সহজ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারলেও, এটি বিভিন্ন ‘জটিল-চিন্তা বা সমস্যা-সমাধানের’ দক্ষতা রপ্ত করেনি। একাডেমিক ও এর পরবর্তী জীবনে সাফল্য পেতে এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” --মার্কিন গণমাধ্যম এনবিসি নিউজকে ইমেইল বার্তায় বলেন নিউ ইয়র্ক শহরের পাবলিক স্কুলগুলোর মুখপাত্র জেনা লাইল।
এর পরও, সংস্থাটির এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ‘কাঠ খড় পোড়াতে’ হতে পারে। কারণ, স্কুলের ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক ও ডিভাইসে এই চ্যাটবট নিষিদ্ধ করা সহজ হলেও, নিজস্ব ডিভাইসে থাকা বিভিন্ন সেলুলার নেটওয়ার্ক ও স্কুলের বাইরে থাকা ওয়াইফাইয়ের সহায়তায় শিক্ষার্থীরা এটি চালানো বন্ধ করবে না বলে প্রতিবেদনে সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছে এনগ্যাজেট।
এর বিপরীতে, ওপেনএআই একটি সামাধান আনার কথা বলছে। তাদের দাবি, এটি চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে তৈরি করা বিভিন্ন লেখা শনাক্তে সাহায্য করবে।
ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠিত স্টার্টআপের এই পদক্ষেপ স্বাগত জানানোর মতো হলেও, বাজারের রেওয়াজ বলছে ভিন্ন কথা। অতীতে বড় কোনো ব্যবসাই নিঃস্বার্থভাবে সমাজের জন্য সেরা পণ্য বেছে দেয়নি, তারা সবসময়ই লাভের হিসাব কষেছে বলে উঠে এসেছে এনগ্যাজেটের প্রতিবেদনে। এআই’র লেখা শনাক্তে ওপেনএআই সমাধান আনার বিষয়টিকে অনেকটা পরিবেশকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য জীবাশ্ম-জ্বালানী খাতের ওপর ভরসা করার মতোই শোনায় বলে মন্তব্য করেছে সংবাদমাধ্যমটি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি বড় ব্যবসা। এদিকে, দুই হাজার নয়শ কোটি ডলারের মূল্যে‘ ওপেনএআই’র শেয়ার বিক্রির কথাও শোনা যাচ্ছে, যা বাস্তবায়িত হলে এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দামী স্টার্টআপ হয়ে উঠবে।
শিক্ষা খাতের সকলেই এআই চ্যাটবটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। অনেক বছর নিউ ইয়র্কের পল রবসন হাই স্কুলে শিক্ষাদান করা ব্রুকলিন টেকনিকাল হাই স্কুলের শিক্ষক অ্যাডাম স্টিভেনস চ্যাটজিপিটিকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
“১৫ বা ২০ বছর আগে গুগলকে নিয়েও লোকজন এমন কথা বলেছে। সে সময় শিক্ষার্থীরা ‘অনলাইনেই উত্তর খুঁজে পেতেন’।” --অলাভজনক সংস্থা চকবিটকে বলেন তিনি।
তার যুক্তি হলো, বটের কোনো নমুনা প্রবন্ধের লেখায় উন্নতি ঘটাতে পুরো ক্লাসের শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে কাজ করলে, এটি শিক্ষকের সহায়ক হিসেবেও কাজ করতে পারে।