মহাবিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে বিস্তারিতভাবে থ্রিডি মানচিত্র তৈরি করেছে ‘ডিইএসআই’, যা সময়ের সঙ্গে মহাবিশ্ব কিভাবে প্রসারিত হয়েছে তা পরিমাপ করার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব নির্ভুলতা দেয়।
Published : 09 Apr 2024, 01:31 PM
শুধু কয়েক বছর নয়, কোটি কোটি বছর পিছনে ফিরে দেখাতে পারবে এমন কিছু কি আদৌ আছে? সম্প্রতি পাহাড়ের চূড়ায় থাকা একটি টেলিস্কোপে পাঁচ হাজার ক্ষুদ্র রোবটের সাহায্যে কোটি বছরের মহাবিশ্বকে ফিরে দেখার মতো সক্ষমতা অর্জনের দাবি করছেন গবেষকরা।
এইসব রোবট ‘ডার্ক এনার্জি স্পেকট্রোস্কোপিক ইন্সট্রুমেন্ট’ বা ‘ডিইএসআই’ নামের এক ব্যবস্থার মাধ্যমে এক হাজার একশ কোটি বছর আগের মহাবিশ্বে ফিরে যেতে গবেষকদের সাহায্য করছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানবিষয়ক সাইট নোরিজ।
এই অবিশ্বাস্য টুলটি পৃথিবীর দূরবর্তী বস্তু থেকে আলো ধারণ করে, যার মধ্যে কিছু পৃথিবীতে পৌঁছানোর আগেই শত কোটি বছর ধরে ভ্রমণ করেছে। এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের তরুণ বয়সের ঝলক মেলার পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর অগ্রগতি বুঝতেও সাহায্য করে।
‘ডার্ক এনার্জি’ নামে পরিচিত রহস্যময় শক্তির উৎস ও মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ রহস্য উদঘাটনের জন্য এর অতীত বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
‘ডার্ক এনার্জি’ অনেকটা অদেখা হাতের মতো, যা মহাবিশ্বের দ্রুতই সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে। এর রহস্য উদঘাটনের চাবিকাঠি হল, গত এক হাজার একশ কোটি বছরে ডার্ক এনার্জি কীভাবে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণে প্রভাব ফেলেছে, তা খুঁজে বের করা।
মহাবিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে বিস্তারিত থ্রিডি ম্যাপ বানিয়েছে ‘ডিইএসআই’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহাবিশ্ব কীভাবে প্রসারিত হয়েছে, তা পরিমাপে অভূতপূর্ব নির্ভুলতা দেয় এটি।
প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা তরুণ মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে এত নির্ভুলতার সঙ্গে শনাক্ত করতে পেরেছেন, যা এর বিবর্তনের একটি পরিষ্কার ধারণা দেয়।
‘ডিইএসআই’র পর্যবেক্ষণের প্রথম বছরের নানা ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন একাডেমিক গবেষনা ও উপস্থাপনায়, যা বিজ্ঞান মহলে রীতিমতো সাড়া ফেলেছে।
‘ডিইএসআই’-এর প্রকল্প পরিচালক মাইকেল লেভির মতে, ডেটা বা তথ্য কেবল মহাবিশ্ব সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে আরও ভালভাবে শ্রেণীবদ্ধই করে না বরং সময়ের সঙ্গে ‘ডার্ক এনার্জি’র প্রভাব পরিবর্তনের সম্ভাব্য পার্থক্যরও ইঙ্গিতও দেয়।
‘ডিইএসআই’ একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংগঠন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিকোলাস ইউ. মায়াল টেলিস্কোপ মানমন্দিরে অবস্থিত। আর এর সঙ্গে যুক্ত আছেন নয়শ’র বেশি গবেষক।
সংগঠনটির কাজ হল, দূরবর্তী ছায়াপথ ও কোয়াসার থেকে আলো ধারণ করা, যা বিজ্ঞানীদের ভিন্ন ভিন্ন সময়ের মহাবিশ্ব গঠনপ্রক্রিয়া পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়।
‘ডিইএসআই’-এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের গঠন যতটা উন্মোচিত হয়েছে, তাতে দেখা যায়– বিভিন্ন বিস্তীর্ণ শূন্যতার মাধ্যমে বিভক্ত সূত্রগুলোর সঙ্গে গুচ্ছাকারে যুক্ত, যেটি মহাবিশ্বের শুরুতে ‘ব্যারিয়ন অ্যাকিউস্টিক অসিলেশন বা বাওস’ নামে পরিচিত মহাজাগতিক ঘটনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন নিদর্শন প্রতিফলিত করে৷
বাও মূলত দৃশ্যমান বিভিন্ন এমন পদার্থের ঘনত্বের তরঙ্গ, যেগুলো ডার্ক ম্যাটার ও স্বাভাবিক পদার্থের মিথস্ক্রিয়ায় তৈরি। এইসব তরঙ্গ পরিমাপ করে এগুলোকে গবেষকরা এমন ‘কসমিক রুলার’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, যার মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মহাবিশ্ব কিভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে তা ট্র্যাক করা সম্ভব।
‘ডিইএসআই’-এর বিভিন্ন অনুসন্ধান এরইমধ্যে হাবল ধ্রুবক’সহ বেশ কয়েকটি মূল মহাজাগতিক পরামিতি সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে উন্নত করেছে, যার মাধ্যমে মহাবিশ্বের বর্তমান সম্প্রসারণের হার ও নিউট্রিনোর ভর, মহাবিশ্বের অন্যতম মৌলিক কণা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা যায়।
যেহেতু ‘ডিইএসআই’ এখনও পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে তাই ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিমাপক ব্যবস্থা আরও পরিমার্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, ‘ডার্ক এনার্জি’র প্রকৃতি ও মহাবিশ্বের সামগ্রিক গতিবিদ্যা নিয়ে আরও খুঁটিনাটি তথ্য জানা যাবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।