২০২২ সালে বিভিন্ন ক্রিপ্টোমুদ্রার ‘অবৈধ ব্যবহারের’ পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে রেকর্ড দুই হাজার ১০ কোটি ডলারে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন কোম্পানির লেনদেন ‘আকাশচুম্বী’ অবস্থানে চলে যাওয়ায় এমনটি ঘটার কথা বৃহস্পতিবার উঠে এসেছে ব্লকচেইন বিশ্লেষক কোম্পানি ‘চেইনঅ্যানালিসিসের’ প্রতিবেদনে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের ক্রিপ্টোর বাজার বেশ ঘটনাবহুল ছিল। কারণ, এতে ‘ঝুঁকির ক্ষুধা’ কমে আসায় অনেক ক্রিপ্টো কোম্পানিই ধসের মুখে পড়ে। এর ফলে, বিনিয়োগকারীরা বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন ও গ্রাহকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হয়েছিল।
চেইনঅ্যানালিসিস বলেছে, গোটা ক্রিপ্টো খাতের লেনদেনের মাত্রা কমে আসার পরও টানা দ্বিতীয় বছর অবৈধ কার্যক্রম সম্পর্কিত বিভিন্ন ক্রিপ্টো লেনদেনের মূল্যমান বেড়েছে।
চেইনঅ্যানালিসিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়া বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে লেনদেনের মাত্রা বেড়েছে এক লাখ ভাগের বেশি। আর এগুলো থেকেই গত বছরের ৪৪ শতাংশ অবৈধ লেনদেন হয়েছে।
এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়া রাশিয়া ভিত্তিক ক্রিপ্টো একচেঞ্জ কোম্পানি ‘গারানটেক্স’কে ২০২২ সালের ‘বেশিরভাগ অবৈধ লেনদেন কার্যক্রম চালানোর জন্য’ দায়ী করা হয়।
চেইনঅ্যানালিসিস আরও যোগ করে, বেশিরভাগ লেনদেন কার্যক্রমই সম্ভবত ‘রাশিয়ার ব্যবহারকারীরা দেশটির এক ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করে করছেন’।
বিশ্লেষক কোম্পানিটির এক মুখপাত্র বলেন, কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়লে এইসব ওয়ালেট ‘অবৈধ’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
এই প্রসঙ্গে রয়টার্স এক ইমেইল বার্তায় গারানটেক্সের মন্তব্য জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক কোনো জবাব মেলেনি।
গত বছর, ‘ব্লেন্ডার’ ও ‘টর্নেডো ক্যাশ’ নামের দুই ক্রিপ্টোমুদ্রা সমন্বয়কারী সেবাও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। দেশটির দাবি, সাইবার অপরাধের মাধ্যমে কোটি কোটি ডলারের সম্পদ পাচারের উদ্দেশ্যে উত্তর কোরিয়া’সহ বিভিন্ন জায়গার হ্যাকাররা এগুলো ব্যবহার করছে।
২০২২ সালে ক্রিপ্টো তহবিল চুরির মাত্রা বেড়েছে সাত শতাংশ। তবে, অর্থ জালিয়াতি, মুক্তিপণ, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও মানব পাচারের মতো ক্রিপ্টো লেনদেন সম্পর্কিত অন্যান্য অবৈধ কার্যক্রমের মাত্রা কমে এসেছে।
“এটি ক্রিপ্টো বাজারে চলমান মন্দার একটি কারণ হতে পারে।” --বলেছে চেইনঅ্যানালিসিস।
“অতীতে আমরা অনুসন্ধান করে খুঁজে পেয়েছি, বাজারে মন্দা থাকাকালীন বিভিন্ন ক্রিপ্টো জালিয়াতির আয় কমে আসে।”
কোম্পানিটি বলেছে, তাদের দুই হাজার ১০ কোটি ডলারের হিসাবে কেবল ব্লকচেইনে রেকর্ড করা বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভূক্ত। তবে, বিভিন্ন ক্রিপ্টো ফার্মের হিসাবে জালিয়াতির মতো ‘অফ-চেইন’ ধরনের অপরাধ এর আওতাধীন নয়।
এই হিসাবে ক্রিপ্টো বহির্ভূত কাজে বিভিন্ন ক্রিপ্টোমুদ্রার লেনদেনও অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। এর উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, মাদক পাচারে অর্থ প্রদানের উপায় হিসেবে ক্রিপ্টোমুদ্রার ব্যবহারকে।
“আমরা জোর দিয়ে বলছি, এটি একটি নিম্নগামী অনুমান - আমাদের হিসাব অনুযায়ী, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এমন অবৈধ লেনদেনের মাত্রা নিশ্চিতভাবেই বেড়ে যাবে।” --প্রতিবেদনে লিখেছে চেইনঅ্যানালিসিস।
ক্রিপ্টো খাতে তুলনামূলক বেশি জালিয়াতি আবিষ্কৃত হওয়ায় ২০২১ সালের পরিসংখ্যানে এই খাতে জালিয়াতির মাত্রা এক হাজার চারশ কোটি থেকে এক হাজার আটশ কোটি ডলারে বেড়ে দাঁড়িয়েছে বলেও উল্লেখ করে কোম্পানিটি।