গবেষকরা বলছেন, এআই অনুমান করতে পারে, রোগীদের পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি কি না।
Published : 02 Mar 2025, 03:09 PM
সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো মানসিক রোগ শনাক্ত করতে সহায়তা করতে পারবে এআই– এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
গুরুতর পর্যায়ের মানসিক অসুস্থতা সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসঅর্ডার, যা বেশিরভাগ সময় কারো জীবনের শুরুর দিকে হতে পারে। তবে এ রোগ প্রথম দিকে ধরতে পারার বিষয়টি কঠিন। ফলে কার্যকর চিকিৎসা ও সঠিক রোগ নির্ণয় করতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে চিকিৎসকদের।
দেরিতে রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি এর চিকিৎসাকে আরও কঠিন করে তোলে। ফলে রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
‘আরহাস ইউনিভার্নিটি’ ও ‘আরহাস ইউনিভার্সিটি হসপিটাল’-এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এ প্রক্রিয়াটির গতি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভবিষ্যতে কে বা কারা সিজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হতে পারেন তা অনুমান করতে পারে বিভিন্ন মেশিন-লার্নিং বা এআই মডেল।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জেএএমএ সাইকিয়াট্রি’-তে।
মেডিকেল রেকর্ড বিশ্লেষণে এআইয়ের ব্যবহার
গবেষণায় উদ্বেগ ও বিষন্নতার মতো মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার জন্য চিকিৎসাধীন রয়েছেন এমন ২৪ হাজার চারশ ৪৯ রোগীর ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য রেকর্ড বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা।
এজন্য একটি মেশিনলার্নিং অ্যালগরিদম তৈরি করেছেন তারা। গবেষকরা বলছেন, এআই অনুমান করতে পারে, রোগীদের পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি কি না।
এআই যদি আক্রান্তদের উচ্চ ঝুঁকির পূর্বাভাস অনুমান করতে পারে তাহলে চিকিৎসকরা এসব রোগের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন লক্ষণের প্রতি আরও মনোযোগ দিতে পারবেন। ফলে আক্রান্তদের রোগ নির্ণয় ও সময়মত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হতে পারে, যা রোগীদের জন্য আরও ভালো ফলাফল দেবে।
এআই মডেলটি কতটা সঠিক?
রোগীদের মেডিকেল রেকর্ড থেকে এক হাজারটিরও বেশি তথ্য বিশ্লেষণ করেছে এআই। যার মধ্যে রয়েছে অতীত রোগের ইতিহাস, ওষুধ ও চিকিৎসকদের বিভিন্ন নোট। এআইয়ের ফলাফলে দেখা গেছে–
● উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত একশ রোগীর মধ্যে প্রায় ১৩ জন ব্যক্তি পাঁচ বছরের মধ্যে সিজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হবেন।
● কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত একশ জন রোগীর মধ্যে ৯৫ জনের পাঁচ বছরের মধ্যে কোনও মানসিক রোগা ধরা পড়েনি।
গবেষণার এসব ফলাফল আশার আলো দেখালেও তা বাস্তববিশ্বের ক্লিনিকাল ব্যবহারের জন্য এখনও যথেষ্ট নির্ভুল নয়।
গবেষকরা বলছেন, এআই কীভাবে চিকিৎসকদের নোটের ব্যাখ্যা করে সে বিষয়টি উন্নত করলে এআইয়ের এসব অনুমান আরও সুনির্দিষ্ট হতে পারে।
এআইয়ের অনুমানের চাবিকাঠি ডাক্তারদের নোট
এআইয়ের অনুমানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে চিকিৎসকদের ক্লিনিকাল বিভিন্ন নোট, যা রোগীর পরিদর্শনের সময় ডাক্তাররা লেখেন।
সমাজ থেকে দূরে থাকা, হ্যালুসিনেশন ও মানসিক হাসপাতালে ভর্তির মতো বিভিন্ন লক্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত নির্দিষ্ট শব্দ ও বাক্যাংশ এআইয়ের জন্য ভবিষ্যতে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে শক্তিশালী সূচক ছিল।
বর্তমান এআই মডেলটি কেবল নির্দিষ্ট কিছু শব্দ কতবার দেখছে তার ওপর ভিত্তি করে গণনা করে। বিভিন্ন বাক্যের অর্থ বা যে প্রসঙ্গে শব্দগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে তা পুরোপুরি বুঝতে পারে না এআই।
চ্যাটজিপিটিকে আরও শক্তিশালী করা গেলে বা আরও উন্নত বিভিন্ন এআই মডেল কেবল আলাদা শব্দের বদলে ডাক্তারদের বিভিন্ন নোটের পুরো অর্থ বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে আরও ভালো ফলাফল দিতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য নির্ণয়ে এআইয়ের ভবিষ্যত
গবেষকরা বলছেন, আরও পরিশীলিত বা উন্নত সংস্করণের বিভিন্ন এআই মডেল সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসঅর্ডার নিয়ে আরও নির্ভরযোগ্য অনুমান দেবে।
উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এআই চিকিৎসকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে, যা উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন এমন রোগীদের আগে শনাক্ত করতে ও দ্রুত চিকিৎসা দিতে সহায়তা করবে।
হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ব্যবহার করার আগে এআইয়ের আরও উন্নতির প্রয়োজন। সফল হলে, গুরুতর মানসিক রোগ নির্ণয়ের উপায় পরিবর্তন করতে পারে এআই।