এ অবিশ্বাস্য অনুসন্ধানে এমন এক জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া গেছে, যেখানে একটি ছোট ডাইনোসর ও বেড়াল-আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণীকে লড়াই করা অবস্থায় দেখা গেছে।
Published : 06 Nov 2024, 05:06 PM
প্রায় ১২-১৩ কোটি বছর আগে চীনের উত্তর পূর্বাংশে সবুজ বন, হ্রদ, ও একটি সক্রিয় বাস্তুতন্ত্র ছিল, যেখানে ডাইনোসর, পাখি, স্তন্যপায়ী, পোকামাকড় এবং অন্যান্য প্রাণির বড় সমাহার দেখা যেত।
ওই প্রাচীন জায়গাটির নাম এখন ‘ইয়িক্সিয়ান ফর্মেশন’, যেটি বিশ্বের অন্যতম জীবাশ্ম খনি হিসেবে বিবেচিত। ৮০’র দশকে ওই এলাকার গ্রামবাসীরা এ সংরক্ষিত জীবাশ্মের খোঁজ পেতে শুরু করেন, যাকে ‘জীবাশ্মের গোল্ড রাশ’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ অনুসন্ধান এতটাই বিস্তৃত ছিল যে মহাকাশ থেকেও এর খননের পরিধি দেখা যায়। ৯০’র দশকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন, এলাকাটিতে জীবাশ্মের এমন ভাণ্ডার আছে, যা অন্য কোথাও নেই।
এর মধ্যে অনেক জীবাশ্ম প্রায় সম্পূর্ণ, যেখানে বিভিন্ন প্রাণীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, পালক, পশম, ডোরাকাটা দাগ এমনকি পেটের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও দেখা গেছে।
এ অবিশ্বাস্য অনুসন্ধানে এমন এক জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া গেছে, যেখানে একটি ছোট ডাইনোসর ও বেড়াল-আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণীকে লড়াই করা অবস্থায় দেখা গেছে। আর এ মুষ্টিযুদ্ধের মাঝপথেই তারা হিমায়িত অবস্থায় মারা গেছে।
এ অনুসন্ধানের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের প্রথম পালকওয়ালা ডাইনোসর। এর থেকে প্রমাণ মেলে, পাখির অনেক আগেই ডাইনোসরদের পালক বিবর্তিত হয়েছে।
এইসব জীবাশ্ম ডাইনোসরের বিবর্তন সম্পর্কে প্রচলিত বোঝাপড়ায় বিপ্লব বয়ে আনার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। পাশাপাশি, আধুনিক সময়ের পাখিগুলো যে সরাসরি পালকওয়ালা ডাইনোসরের বংশধর, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে।
বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীদের প্রচলিত ধারণা ছিল, অগ্ন্যুৎপাতের ফলেই জীবাশ্ম সংরক্ষিত হয়ে থাকে, অনেকটা খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯ অব্দে মাটির নীচে চাপা পড়া পম্পেই নগরীর মতো।
এই তত্ত্বটি প্রস্তাব করে, গরম ছাইয়ের তরঙ্গ হঠাৎ করে প্রাণীদের মাটির নীচে চাপা দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবেই তাদের সংরক্ষণ করে। আর এজন্যই ইয়িক্সিয়ান ফর্মেশনের ডাক নাম ‘চীনা পম্পেই’ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু, ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এ প্রকাশিত নতুন এক গবেষণা এ তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ‘ইউনিভার্সিটি অফ দ্য উইটওয়াটার্সর্যান্ড’-এর গবেষক স্কট ম্যাকলেনান নেতৃত্বাধীন এ গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, এইসব জীবাশ্ম কোনো অগ্ন্যুৎপাতের নাটকীয় ঘটনা থেকে নয়, বরং গর্ত ধস ও মৌসুমি বৃষ্টিপাতের মতো সাধারণ প্রক্রিয়া থেকে হয়েছে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে মাটির স্তুপ জমা পড়েছে।
গবেষকরা নতুন প্রযুক্তি দিয়ে এইসব জীবাশ্মের তারিখ নির্ধারণ করেছেন, যেখানে ওই সুনির্দিষ্ট যুগের স্থায়িত্ব ছিল ৯৩ হাজার বছরের কম, যার সমাপ্তি ঘটেছে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি বছর আগে।
এ তুলনামূলক ছোট সময়কাল থেকে ইঙ্গিত মেলে, জীবাশ্মে রূপান্তরের এ প্রক্রিয়াটি হঠাৎ করে কোনো সিরিজ অগ্ন্যুৎপাত থেকে ঘটেনি, যা এর আগের প্রচলিত ধারণা ছিল। এর বদলে, গবেষণা দলটি বিশ্বাস করে, নিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং মাটির স্তুপ জমা পড়ার ঘটনা এইসব জীবাশ্ম সংরক্ষণে এর চেয়েও বড় ভূমিকা রেখেছে।
ম্যাকলেনানের গবেষণা দলটি ‘সিএ-আইডি-টিমস (কেমিকাল অ্যাব্রাশন আইসোটোপ ডিলুশন থার্মাল আয়োনাইজেশন ম্যাস স্পেক্ট্রোস্কপি)’ নামের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে জীবাশ্মগুলোতে থাকা ছোট ছোট জিরকনের কণা পরিমাপ করেছে বলে উঠে এসেছে নোরিজের প্রতিবেদনে।