অনেক বিজ্ঞানীর দাবি, তাত্ত্বিকভাবে কোনও গ্রহে জীবন ধারণের জন্য চাঁদ থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই।
Published : 25 Jun 2024, 04:48 PM
‘দ্বিতীয় পৃথিবী’র সন্ধান পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা দেখাচ্ছে বিভিন্ন ছোট গ্রহ, সম্প্রতি এমনই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
ভূপৃষ্ঠ ও মহাকাশে থাকা বিভিন্ন টেলিস্কোপ সাধারণত পৃথিবীর চেয়ে আকারে বড় গ্রহগুলোর ওপর বেশি নজর দিয়ে থাকে, কারণ ছোট গ্রহের তুলনায় এগুলোকে সহজেই শনাক্ত করা যায়। ফলে গবেষণার কাজটিও আরও সহজ হয়ে যায়।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্ল্যানেটারি সায়েন্স’-এ প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, জীবন ধারণের ক্ষেত্রে বড় সম্ভাবনা দেখাচ্ছে বড় চাঁদওয়ালা পাথুরে গ্রহ থাকার বিষয়টি। কারণ পৃথিবীতে জীবন ধারণের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়াদি চাঁদের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে দিনের দৈর্ঘ্য, সমুদ্রের জোয়ার ও স্থিতিশীল জলবায়ুর মতো বিষয়গুলো।
“পৃথিবীর চেয়ে আকারে তুলনামূলক ছোট গ্রহগুলো পর্যবেক্ষণ করা আরও কঠিন। আর এগুলোর চাঁদ খোঁজার বিষয়টিও মূল মনোযোগ ছিল না,” বলেন এ গবেষণার লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ রচেস্টার’-এর ভূতত্ত্ব ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিকি নাকাজিমা।
“তবে আমাদের অনুমান বলছে, চাঁদওয়ালা গ্রহ খোঁজার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা দেখাচ্ছে এগুলো।”
সবচেয়ে প্রচলিত তত্ত্ব হল, চাঁদের উৎপত্তি ঘটেছিল সাড়ে চারশ কোটি বছর আগে, যখন মঙ্গল গ্রহের সমান অথচ কম ঘনত্বের এক আদি গ্রহ পৃথিবীতে আঘাত হেনেছিল।
সংঘর্ষটি কক্ষপথে আংশিকভাবে বাষ্পীভূত ধ্বংসাবশেষের একটি তৈরি করে, যা পরবর্তীতে চাঁদে পরিণত হয়েছিল। অন্যান্য মডেল থেকে ইঙ্গিত মেলে, পৃথিবী এর চেয়ে বড় কোনো বস্তুর সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার পর পুরোপুরি বাষ্পীভূত একটি ডিস্ক তৈরি হয়েছিল, যেটি পরে চাঁদের রূপ নিয়েছে।
সৌরজগতে প্রায় তিনশটি চাঁদ রয়েছে, তবে এদের ভর সাধারণত এদের সংশ্লিষ্ট গ্রহের তুলনায় অনেক ছোট হয়। সে তুলনায় পৃথিবীর চাঁদের ভর কিছুটা বেশি, যা জীবন গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চাঁদগুলো অন্যান্য প্রক্রিয়া থেকেও গঠিত হতে পারে। তবে এরা সাধারণত এদের সংশ্লিষ্ট গ্রহের চেয়ে আকারে অনেক ছোট। এর বিপরীতে, বিশাল সংঘর্ষ থেকে তৈরি চাঁদ সাধারণত আকারে বড় হয়।
অনেক বিজ্ঞানীর দাবি, তাত্ত্বিকভাবে কোনও গ্রহে জীবন ধারণের জন্য চাঁদ থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে পৃথিবীর জটিল জীবনধারা বিকাশে বড় চাঁদ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, সে বিষয়টি স্বীকার করেন তারা।
এ ছাড়া, মহাসাগরে জোয়ার হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে পৃথিবীর ওপর চাঁদের মহাকর্ষীয় টান। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এর ফলে পৃথিবীতে নিউক্লিয়িক অ্যাসিড তৈরি হয়েছে, যা থেকে প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। এমনকি পৃথিবীর কক্ষপথ হেলে থাকার বিষয়টিও বজায় রাখে চাঁদের মহাকর্ষীয় টান, যার ফলে জলবায়ুর ভারসাম্যও বজায় থাকে। এতে করে বিভিন্ন জীববৈচিত্র্যও সহজে বিকশিত ও অভিযোজিত হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা পাঁচ হাজারের বেশি এক্সোপ্ল্যানেট শনাক্ত করেছেন, যেগুলোর অবস্থান সৌরজগতের বাইরে। তবে, এক্সোমুন অর্থাৎ যেসব চাঁদ এক্সোপ্ল্যানেট প্রদক্ষিণ করে সেগুলো খুঁজে পাওয়া কঠিন কারণ এরা প্রকৃতিগতভাবেই নিজের প্রদক্ষিণ করা গ্রহের চেয়ে আকারে অনেক ছোট হয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত মাত্র দুটি এমন সম্ভাবনাময় এক্সোপ্ল্যানেট শনাক্ত করা গেছে।
তবে, দ্বিতীয় পৃথিবী খোঁজার ক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এমনকি জীবন গঠনের আদর্শ পরিবেশ থাকতে পারে এগুলোয়। আর এই সম্ভাবনার কথাই উঠে এসেছে গবেষক নাকাজিমা ও তার গবেষণা দলটির সর্বশেষ গবেষণায়।
গবেষণাটি হচ্ছে মূলত আগের এক গবেষণার ভিত্তিতে, যেখানে চাঁদ গঠনের জন্য কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করা হয়েছিল। আর চাঁদ তৈরির ক্ষেত্রে তথাকথিত ‘স্ট্রিমিং ইনস্টেবিলিটি’ কীভাবে ভূমিকা রাখে, সেটি নিয়েও তদন্ত হয়েছিল সে গবেষণায়।
‘স্ট্রিমিং ইনস্টেবিলিটি’ এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে বিভিন্ন কণা একটি বাষ্প ডিস্কে ঘনীভূত হয়ে দ্রুতগতিতে ‘প্ল্যানেটেসিমাল’ অর্থাৎ গ্রহের প্রাণী ও ‘মুনলেট’ অর্থাৎ সে গ্রহের একটি উপগ্রহ তৈরি করে, যা মূলত বিভিন্ন গ্রহ ও এদের চাঁদ গঠনের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে বিবেচিত।
নতুন এ গবেষণায় উঠে এসেছে, ‘স্ট্রিমিং ইনস্টেবিলিটি’ বিশাল কোনো সংঘর্ষ থেকে সৃষ্ট বাষ্পীভূত ডিস্কে নিজস্ব মাধ্যাকর্ষণওয়ালা মুনলেট তৈরি করতে পারলেও সেগুলো ডিস্কের শক্ত টান ঠেকানোর মতো যথেষ্ট বড় নয়। ফলে নিজের সংশ্লিষ্ট গ্রহের মাধ্যমে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে এরা ধ্বংস হয়ে যায়।
“ডিস্ক যথেষ্ট ঠাণ্ডা হয়ে গেলে বা ডিস্কে থাকা বাষ্পের ভর কমে আসলে এইসব মুনলেটের আকার আরও বাড়তে পারে,” উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
“তবে, ততক্ষণে ডিস্কের ভরের বড় এক অংশ হারিয়ে যায়। আর অবশিষ্ট ডিস্কটি শুধু ছোট আকারের চাঁদ তৈরি করতে পারে।”