পর্যবেক্ষণ করা দুইশো ৬৩টি ছায়াপথের মধ্যে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ছায়াপথই একদিকে ঘোরে ও কেবল এক তৃতীয়াংশ ঘুরছে অন্যদিকে।
Published : 18 Mar 2025, 05:51 PM
উৎক্ষেপণের কেবল তিন বছরের মধ্যে মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিস্ময়কর সব আবিষ্কার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ বা জেডব্লিউএসটি।
ছায়াপথের অদ্ভুত ও অপ্রত্যাশিত এক ধরন প্রকাশ পেয়েছে জেডব্লিউএসটি’র বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে করা এ গবেষণায়। গবেষকদের ধারণা, গভীর মহাবিশ্বের বেশিরভাগ ছায়াপথ একই দিকে ঘুরছে।
গবেষণার জন্য ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ অ্যাডভান্সড ডিপ এক্সট্রাগ্যালাকটিক সার্ভে’ বা জেএডিইএস থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করেছেন ‘ক্যানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটি’র গবেষক লিওর শামির।
তিনি বলেছেন, পর্যবেক্ষণ করা দুইশো ৬৩টি ছায়াপথের মধ্যে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ছায়াপথই একদিকে ঘোরে ও কেবল এক তৃতীয়াংশ ঘুরছে অন্যদিকে।
এ এক বিস্ময়কর বিষয়। কারণ, এলোমেলো মহাবিশ্বে এ সংখ্যাটি তাত্বিকভাবে প্রায় সমান হওয়া উচিত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
শামির বলেছেন, “পার্থক্যটা এতটাই স্পষ্ট যে, এসব ছবি দেখলে যে কেউ তা বুঝতে পারবেন। এটি দেখার জন্য আপনার বিশেষ দক্ষতা বা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের দরকার নেই।”
গবেষকরা বলছেন, মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের বোঝার ধারণায় বড় এক প্রশ্ন সামনে এনেছে এ আবিষ্কার। যার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে, মহাবিশ্ব নিজেই ঘূর্ণায়মান অবস্থায় ‘জন্মেছিল’।
এ ধারণাটি ‘ব্ল্যাক হোল কসমোলজি’ নামে পরিচিত এক তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে উল্লেখ রয়েছে, পুরো মহাবিশ্ব একটি ব্ল্যাক হোলের ভেতরে থাকতে পারে। সত্যি হলে, এর মানে দাঁড়াবে মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের বর্তমান ধারণা অসম্পূর্ণ।
আরেকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যার সম্পর্ক রয়েছে বিজ্ঞানীরা কীভাবে দূরবর্তী বিভিন্ন ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ করে তার সঙ্গে। যেমন– মিল্কিওয়ের কেন্দ্রকে ঘিরে আবর্তন করছে পৃথিবী ও এর সৌরজগৎ। ‘ডপলার শিফট’ নামে পরিচিত এক ঘটনার মাধ্যমে দূরবর্তী ছায়াপথ থেকে আমরা কীভাবে আলো দেখি তার ওপরও প্রভাব ফেলেছে এ আবিষ্কারটি।
পৃথিবীর গতিবিধির বিপরীতে ঘোরা এসব ছায়াপথের আলো আরও উজ্জ্বল দেখাতে পারে, যার ফলে এদের শনাক্ত করা সহজ হয়। এ কারণেই ছবিতে এক দিকে ঘোরা আরও ছায়াপথ রয়েছে।
এ ব্যাখ্যাটি সঠিক হলে মহাবিশ্বের দূরত্ব কীভাবে পরিমাপ করবেন তা নতুন করে বিবেচনা করতে হবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের।
সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ছায়াপথ কত দূরে তা পরিমাপ করার বর্তমান বিভিন্ন পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন হতে পারে, যা মহাজাগতিকতার আরও কিছু রহস্য ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করবে। যেমন– বিভিন্ন গবেষণায় কেন মহাবিশ্ব বিভিন্ন হারে সম্প্রসারিত হচ্ছে বা কেন কিছু ছায়াপথকে মহাবিশ্বের চেয়েও পুরনো বলে মনে হচ্ছে।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘মান্থলি নোটিসেস অফ দ্য রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’তে। এ গবেষণার ফলাফল থেকে ইঙ্গিত মেলে, মহাবিশ্ব সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু জানার বাকি রয়েছে।
যেমন– মহাবিশ্ব ‘ঘূর্ণায়মান অবস্থায়’ জন্মেছে কি না বা বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন পরিমাপ কৌশলের সমন্বয়ের প্রয়োজন কি না তা এখনও অজানা রয়ে গেছে। এ আবিষ্কারটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মহাকাশের এখনও অনেক রহস্যই সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে।