এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি কৌতুক বেশিরভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগের পরিসর বাড়িয়ে তুললেও সেটা পেশাদার লেখকদের কর্মসংস্থানে সম্ভাব্য হুমকি।
Published : 09 Jul 2024, 05:39 PM
কৌতুক বলার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষ করে চ্যাটজিপিটি’র দক্ষতা মানুষের চেয়েও বেশি— এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
এই গবেষণায় চ্যাটজিপিটি ৩.৫ সংস্করণে তৈরি বিভিন্ন কৌতুকের সঙ্গে মানুষের লেখা বিভিন্ন কৌতুক তুলনা করে দেখেছেন গবেষকরা, যার বিভিন্ন ফলাফল খুবই বিস্ময়কর ছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
কৌতুকের তুলনা
এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘ইউএসসি ডর্নসাইফ কলেজ অফ লেটার্স, আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস’-এর সামাজিক মনোবিজ্ঞান বিভাগের ডক্টরাল শিক্ষার্থী ড্রু গোরেঞ্জ। তার ব্যাখ্যানুসারে, এ গবেষণায় তারা দেখতে চেয়েছিলেন, হাস্যরসের ক্ষেত্রে এআই মানুষের দক্ষতাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে কি না।
“চ্যাটজিপিটি’র নিজস্ব আবেগ অনুভূতি না থাকলেও এর আনকোড়া নতুন কৌতুক বলার দক্ষতা গড়পড়তা মানুষের চেয়ে ভালো। এ গবেষণায় দেখা গেছে, ভালো কৌতুক বলতে বা এর প্রশংসা করতে আসলে আবেগ অনুভূতির প্রয়োজন নেই।”
গবেষণার একটি অংশে অংশগ্রহণকারীদের এইসব কৌতুক মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছিল, যেখানে তারা জানতেন না কৌতুকগুলো কে লিখেছে।
এর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর কাছে চ্যাটজিপিটি’র কৌতুককেই মানুষের লেখা কৌতুকের চেয়ে রসবোধসম্পন্ন মনে হয়েছে।
এর বিপরীতে, প্রায় ২৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মানুষের তৈরি বিভিন্ন কৌতুক পছন্দ করেছেন। আর শুধু পাঁচ শতাংশের কাছে মানুষ ও চ্যাটজিপিটি উভয়ের লেখাই সমানভাবে মজার বলে মনে হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন বৈচিত্র্যের জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও এ ফলাফল সামঞ্জস্যপূর্ণ।
চ্যাটজিপিটি বনাম পেশাদার কৌতুক লেখক
চ্যাটজিপিটির রসবোধ দক্ষতাকে আরও ভালোভাবে পরীক্ষা করতে গবেষকরা একে জনপ্রিয় ব্যঙ্গাত্মক সংবাদ সাইট ‘ওনিয়ন’-এর আদলে শিরোনাম তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এক্ষেত্রে দুইশ জন অংশগ্রহণকারীর আরেকটি দল এআই দিয়ে তৈরি শিরোনাম ও অনিয়নের বিভিন্ন আসল শিরোনামের মজার মাত্রা মূল্যায়ন করেছেন। এতে দেখা যায়, তাদের কাছে চ্যাটজিপিটির তৈরি শিরোনাম আসল শিরোনামগুলোর মতোই মজার বলে মনে হয়েছে।
প্রথম গবেষণায় চ্যাটজিপিটি ও ১০৫ জন অংশগ্রহণকারীকে তিনটি করে কাজ দেওয়া হয়েছিল।
এর মধ্যে প্রথমটিতে তাদেরকে বিভিন্ন সংক্ষিপ্ত শব্দের জন্য বিভিন্ন নতুন রসাত্মক বাক্যাংশ তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়, যেখানে ‘হোয়াইট হাউসের কম পরিচিত ঘর: _____’ এমন শূন্যস্থানে হাস্যকর জবাব বসানোর নির্দেশ ছিল।
এর ফলাফলে, ৯৪৫টিরও বেশি কৌতুক লেখেন মানব লেখকরা ও চ্যাটজিপিটি লিখেছিল মাত্র ১৮০টি। পরবর্তীতে অংশগ্রহণকারীদের আরেকটি নতুন দল এইসব কৌতুকের হাস্যরস মূল্যায়ন করেছেন।
দ্বিতীয় গবেষণায়, চ্যাটজিপিটি’কে অনিয়নের বিভিন্ন আসল শিরোনাম দেওয়া হয়, যা থেকে নতুন শিরোনাম তৈরির নির্দেশ পেয়েছিল চ্যাটবটটি। পরবর্তীতে লেখকের নাম না জেনেই কৌতুকগুলো মূল্যায়ন করেছেন অংশগ্রহণকারীরা।
অপেশাদার স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান গোরেঞ্জ এবং ‘ইউএসসি’র মনোবিজ্ঞান ও মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক নরবার্ট শোয়ার্জের দাবি, গবেষণাটির ফলাফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে।
তা হল, এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি কৌতুক বেশিরভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যোগাযোগের পরিসর বাড়িয়ে তুললেও সেটা পেশাদার লেখকদের কর্মসংস্থানে সম্ভাব্য হুমকি।
বুধবার গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘প্লস ওয়ান’-এ।