“অ্যাপল আবারও দেখাল যে, তারা অ্যাপ স্টোরের আধিপত্য ধরে রাখার লক্ষ্যে গ্রাহক ও অ্যাপ নির্মাতাদের কাছ থেকে লভ্যাংশ তুলে নিতে একেবারেই ছাড় দেবে না।”
Published : 20 Jan 2024, 05:45 PM
যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন নতুন অ্যাপের কাছ থেকে কমিশন বাবদ ২৭ শতাংশ ফি কেটে নেওয়ার ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই আক্রমণ চালিয়েছে সুইডিশ অডিও স্ট্রিমিং জায়ান্ট স্পটিফাই।
গেল বুধবার অ্যাপল ঘোষণা দেয়, তারা বিভিন্ন অ্যাপ নির্মাতাকে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরের বাইরেও নিজেদের পণ্য বিক্রির অনুমতি দেবে, তবে এর জন্য গুনতে হবে আর্থিক কমিশন।
এর জবাবে স্পটিফাই বলেছে, অ্যাপলের এমন ঘোষণা ‘অবিশ্বাস্য’। পাশাপাশি, কোম্পানিটি নিজের লভ্যাংশ ধরের রাখার ক্ষেত্রে ‘একেবারেই ছাড় দেয় না’ বলেও অভিযোগও তুলেছে স্পটিফাই। এমনকি যুক্তরাজ্যে কোম্পানিটি যেন একই ধরনের আর্থিক ফি ব্যবস্থা চালু না করে, সে লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকারের কাছেও অনুরোধ জানিয়েছে মিউজিক স্ট্রিমিং কোম্পানিটি।
এ প্রসঙ্গে অ্যাপলের মন্তব্য জানতে চেয়েছিল বিবিসি।
ফোর্টনাইট গেইমের নির্মাতা এপিক গেইমসের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলা আইনি লড়াইয়ের ফলাফল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপ নির্মাতাদের কাছ থেকে কমিশন নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আইফোন নির্মাতা কোম্পানিটি।
এ মামলার একাধিক অভিযোগে অ্যাপলের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে আদালত। তবে, অ্যাপ নির্মাতাদেরকে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়াদি অন্যদের সঙ্গে শেয়ার না করার অভিযোগে কোম্পানিটিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে অ্যাপলের নিজস্ব অ্যাপ স্টোরের আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থার বিষয়টিও।
সে সময় লেনদেন ব্যবস্থাটি ব্যবহারের জন্য শীর্ষ অ্যাপ নির্মাতাদের গুনতে হতো আয়ের ৩০ শতাংশ ফি, যেখানে তুলনামূলক ছোট অ্যাপ নির্মাতাদের দিতে হতো প্রায় ১৫ শতাংশ। এমনকি ৮৫ শতাংশ অ্যাপ নির্মাতা কোনো আর্থিক ফি’ই দিতেন না বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
এ মামলার রায়ের পর যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থার জন্য নতুন নীতিমালা গ্রহন করেছে অ্যাপল, যার ফলে অ্যাপ স্টোরের বাইরে থেকেও বিভিন্ন সেবা ব্যবহারের সুযোগ মিলবে। তবে, অ্যাপ নির্মাতাদের এমনটি করার ক্ষেত্রে ২৭ শতাংশ কমিশনের খড়্গ ঝুলিয়ে দিয়েছে কোম্পানিটি।
আদালতে অ্যাপলের জমা দেওয়া নথি অনুসারে, এ কমিশন আদালতের রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই চালু হচ্ছে। কোম্পানিটি আরও যোগ করে, অ্যাপ স্টোরে থাকা অ্যাপ নির্মাতারা অ্যাপলের বিভিন্ন পরিষেবা থেকে লাভবান হয়ে থাকেন।
“অ্যাপ স্টোরের সকল অ্যাপ নির্মাতা, এমনকি তারাও যারা নিজেদের অ্যাপে বিভিন্ন বাটন বা লিংক যোগ করে থাকেন, তারাও অ্যাপলের প্ল্যাটফর্ম থেকে লাভের মুখ দেখে থাকেন।” --আদালতে জমা দেওয়া নথিতে বলেছে অ্যাপল।
এর পাশাপাশি, অ্যাপ নির্মাতাদের অন্যান্য লাভের খাতও তালিকাভুক্ত করেছে মার্কিন এ টেক জায়ান্ট, যার মধ্যে রয়েছে ‘বাজার ও বিজ্ঞাপনী প্রচারণা এমনকি ব্যবহারকারীদের অ্যাপ ডাউনলোড, অ্যাপ বা অ্যাপের কনটেন্ট কেনার ক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ’ পাওয়ার বিষয়টিও।
তবে, কোম্পানিটির এমন ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে স্পটিফাই বলেছে, অ্যাপলের এমন ঘোষণা ‘বাজারে প্রতিযোগিতার’ পরিপন্থী।
“অ্যাপল আবারও দেখাল যে, তারা অ্যাপ স্টোরের আধিপত্য ধরে রাখার লক্ষ্যে গ্রাহক ও অ্যাপ নির্মাতাদের কাছ থেকে লভ্যাংশ তুলে নিতে একেবারেই ছাড় দেবে না।” --এক বিবৃতিতে বলেছে স্পটিফাই।
এর আগেও বেশ কয়েকবার অ্যাপলের আর্থিক ফি ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে স্পটিফাইকে। এমনকি ২০২৩ সালের অক্টোবরে আইফোন নির্মাতা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে ‘ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ’ রাখার অভিযোগও তুলেছিল অডিও স্ট্রিমিং কোম্পানিটি।
তবে, এবার যুক্তরাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করছে সুইডেনের এই কোম্পানি।
“যুক্তরাজ্যের ‘ডিজিটাল মার্কেটস, কম্পিটিশন অ্যান্ড কনজিউমার বিল’-এর মাধ্যমে অ্যাপলের এমন অবান্তর আর্থিক ফি নেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিতভাবেই ঠেকানো উচিৎ।”
“আমরা যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতাদের বিলটি পাশ করানোর অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে অ্যাপল এখানে একই ধরনের আর্থিক ফি’র ঘোষণা দিতে না পারে। আর যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন গ্রাহক ও ব্যবসার জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি খাত তৈরির ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে এটি।”
গত বছর ডিজিটাল মার্কেটস বিলের খসড়া প্রকাশ করেছিল যুক্তরাজ্য সরকার, যার লক্ষ্য হল, প্রযুক্তি জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর লাগাম টেনে ধরা।
বিলটি পাশ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক ডিজিটাল বাজার বজায় রাখতে পারবে, যেখানে তারা অ্যাপ স্টোর লেনদেনে ‘যথোপযুক্ত ব্যবস্থা’ নেওয়ার ক্ষমতা পাবেন বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র।
তবে, বিলটি পাশ হওয়ার পর অ্যাপলের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না, সে সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি ওই মুখপাত্র।
“আমাদের এমন সুনির্দিষ্ট ঘটনা সম্পর্কে মন্তব্য করার এখতিয়ার নেই।” --বলেন তিনি।