বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্নে মাঠে নেমেছিল ফেইসবুক! টিকটকের জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে পরিকল্পিতভাবে প্রচারণার তহবিল জোগান দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগে বাজারশীর্ষ মাধ্যমটি।
Published : 31 Mar 2022, 07:03 PM
সামাজিক যোগাযোগের যতোগুলো প্ল্যাটফর্ম আছে, তার মধ্যে অল্প সময়ে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে টিকটক। চীনের প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্ম এতো দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, ফেইসবুক, ইউটিউব এবং ইনস্টাগ্রামের মতো পুরনো প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
এমন পরিস্থিতিতে বাজারের উদীয়মান প্রতিদ্বন্দ্বীর গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করতে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘টার্গেটেড ভিকটোরি’কে ফেইসবুক অর্থ সাহায্য দিচ্ছিল বলে একে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। আর ফেইসবুকের অর্থ সাহায্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে টিকটক বিরোধী প্রচারণা চালিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন বলছে, স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের সংবাদপত্রে মতামত নিবন্ধ এবং সম্পাদকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ‘টার্গেটেড ভিকটোরি’। ওয়াশিংটন পোস্টের হাতে আসা একটি ইমেইলে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের একজন অধীনস্তদের বলেন, তার প্রতিষ্ঠানকে এই বার্তাটি ছড়িয়ে দিতে হবে যে, “মেটা এখনকার ‘পাঞ্চিং ব্যাগ’ হলেও, টিকটক হচ্ছে আসল শত্রু। বিশেষ করে অ্যাপটির মালিকানা যখন বিদেশী প্রতিষ্ঠানের এবং তরুণ ব্যবহারকারীরা যে ডেটা শেয়ার করছেন সেই হিসেবে এক নম্বর।”
কয়েক সপ্তাহ আগেই ১৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিয়মিত ব্যবহারকারী সংখ্যা কমার খবর জানিয়েছিল ফেইসবুক। ফেইসবুকের সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালের শেষ নাগাদ প্রায় পাঁচ লাখ ব্যবহারকারী হারিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এমন বাস্তবতায় প্রতিদ্বন্দ্বীর সুনাম নষ্ট করতে ফেইসবুকের পরিকল্পিত প্রচারণার খবর জানালো ওয়াশিংটন পোস্ট।
‘টার্গেটেড ভিকটোরি’ বিভিন্ন সংবাদপত্রে যে মন্তব্য নিবন্ধগুলো প্রকাশ করিয়েছে সেগুলোতে টিকটক নিয়ে নেতিবাচক সংবাদের লিংক থাকতো এবং নিবন্ধগুলোর লেখকদের মধ্যে ডেমোক্রেট দলের সদস্যরাও আছেন বলে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ। তবে কোনো নিবন্ধেই অর্থ সাহায্য পাওয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফেইসবুকের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ ছিল না।
টানা কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের চাপের মুখে আছে ফেইসবুক। সামাজিক মাধ্যম খাতে প্রতিষ্ঠানটি বেআইনিভাবে একাধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে, এমন অভিযোগ শোনা যায় হরহামেশাই। ২০২০ সালের এক কংগ্রেস শুনানিতে ফেইসবুকের অভ্যন্তরীণ নথির বরাত দিয়ে আইনজীবিরা বলেছিলেন, ইনস্টাগ্রাম ফেইসবুকের কাছে মালিকানা বিক্রি করতে রাজি না হলে জাকারবার্গ ‘বিধ্বংসী মূর্তি’ ধারণ করতেন সে সময়ের উদীয়মান ফটো শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে।
সে সময় ডেমোক্রেটিক পার্টির জনপ্রতিনিথি প্রামিলা জায়পাল বলেছিলেন, “যখন একটি আধিপত্যকারী প্ল্যাটফর্ম সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের হুমকি দেয়, সেটা কখনোই স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কৌশল হতে পারে না।”
অন্যদিকে, রিপাবলিকান পার্টির পক্ষে প্রচারণা চালানো সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ‘টার্গেটেড ভিকটোরি’। ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটির আয় ছিল ২৩ কোটি ডলারের বেশি এবং এর সেবাগ্রাহকদের তালিকায় আছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
টিকটকের সবচেয়ে কঠোর সমালোচকদের মধ্যে রিপাবলিকান পার্টির সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয় বলে জানিয়েছে ভার্জ। সেন্সরশিপের অভিযোগে অ্যাপটি তদন্তের দাবি তুলেছিলেন সিনেটর মার্কো রুবিও। অ্যাপটি সরাসরি নিষিদ্ধ করেছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প।
২০২১ সালে এসে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।