রূপকথায় পঙ্খীরাজ আর জাদুর কাঠির পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা থাকে না। কিন্তু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে প্রতিটি কল্পনার থাকে বিজ্ঞান কেন্দ্রিক ব্যাখ্যা, থাকে ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের সাহায্যে সেই কল্পকাহিনী বাস্তবে আনার স্বপ্ন—এভাবেই রূপকথা আর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পার্থক্যটা বুঝিয়ে বললেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
Published : 11 Dec 2015, 08:50 PM
মঞ্চে যখন তিনি এভাবে সায়েন্স ফিকশন আর রুপকথার পার্থক্য ব্যাখ্যা করছেন, দর্শকের সারিতে বসে গভীর মনোযোগে তার কথা শুনছিল উপস্থিত শিশু-কিশোররা। ঘটনাটি বাংলাদেশের প্রথম সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যালের।
সায়েন্স ফিকশন বিষয়টি প্রচারে আর দেশে বিজ্ঞান নিয়ে কল্পনার বিস্তৃতি আরও বাড়ানোর লক্ষ্য প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে ‘সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যাল ২০১৫’। ১১ ডিসেম্বর, সকাল ১১টায় বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি (বিএসএফএস)--এর আয়োজনে শাহবাগে অবস্থিত গণগ্রন্থাগারে শুরু হয় এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে ছিলেন গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আশীষ কুমার সরকার, কার্টুনিস্ট ও উন্মাদ সম্পাদক আহসান হাবীব, অধ্যাপক মোহিত কামাল, সায়েন্স ফিকশন লেখক দীপু মাহমুদসহ আরও অনেকে।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের বক্তব্য শেষে সায়েন্স ফিকশন নিয়ে বিএসএফএসের প্রকাশনায় ‘বিজ্ঞান আনন্দ’ নামের একটি পত্রিকার উন্মোচন করা হয়। তারপর অনুষ্ঠান উদ্বোধনের পালা। বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। মঞ্চ থেকে তিনি নেমে আসতেই পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গনে তার চারপাশে হুমড়ি খেয়ে পড়ে উপস্থিত শিশু-কিশোর আর সায়েন্স ফিকশনপ্রেমিরা। বেলুন উড়ানোর পর তিনি গেলেন অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ‘রিবো’ উদ্বোধন করতে। ফটোগ্রাফার, শিশু-কিশোর, অতিথিসহ উৎসুক মানুষের ভীড়ে তখন রিবোকে এক নজর দেখা দায়।
‘হিউম্যানোয়েড রোবট’ বা মানুষের দৈহিক গঠনের সঙ্গে মিল রেখে ডিজাইন করা রোবট ‘রিবো’। চেহারায় আন্তরিকতার কোনো কমতি না রেখে উপস্থিত শিশু-কিশোরদের সঙ্গে হাত মেলাতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে রিবোকে। “রিবো, হ্যান্ডশেক কর”—নির্মাতা এমন নির্দেশের উত্তরে ভারী গলায় রিবোর পাল্টা প্রশ্ন “হ্যান্ডশেক কি করবো?” নির্মাতা “ইয়েস” কমান্ড দিতে না দিতেই সামনের দাঁড়ানো কিশোরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে রিবো বলে উঠে, “নাইস টু মিট ইউ”।
শুধু এতেই থেমে নেই সে, একবার আদেশ দেওয়া হলো, “রিবো, ড্যান্স”। ব্যাস, চোখে ফূর্তির ভাব এনে দুই হাত তুলে নাচ শুরু করে রিবো। সব মিলিয়ে উপস্থিত শিশু-কিশোরদের মন মাতানোর একটি সুযোগও ছাড়েনি এই ‘পিচ্চি রোবট’; লম্বায় খুব বেশি নয় যে রিবো, মোটে ৪ ফুট ৪ ইঞ্চি। পুরো সায়েন্স ফিকশন ফেস্টিভ্যালে যেন ‘মধ্যমণি’ হয়েছিল রোবটটি।
“আমাদের অনেকদিনের প্ল্যান ছিল এমন একটা রোবট বানানোর। এর আগে একটা রোবট বানিয়েছিলাম, সাস্ট ২। সেটাতে কিছু টেকনিক্যাল কাজ ছিল, এতে রোবটের কথা শোনা, দেখা, হাত নাড়ার মতো কিছু ফিচার ছিল। মানুষকে সঙ্গ দিতে পারবে এমন একটি সোশাল রোবট বানানোর চিন্তা ছিল আমাদের। তো... এমআইটির একটা রোবটকে দেখে কিছু বিষয় শিখি, ফেশিয়াল রিকগনিশন, ভয়েস রিকগনিশন, ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন এমন বিষয়গুলো নিয়ে আমরা পড়াশোনা করি। তারপরই রিবোকে বানানো।”- রিবোকে নির্মাণের পেছনের গল্প এভাবেই অল্পকথায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে খুলে বলেন নির্মাতাদের দলনেতা নওশাদ সজীব।
অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিকালে ছিল এলিয়েন উৎসব। এখানে শিশুদের আঁকা এলিয়েনের ছবি থেকে বাছাইকৃত সেরা ছবি আঁকিয়েদের দেওয়া হয় পুরস্কার। আর সবশেষে সব এলিয়েনকে মহাশূন্যে উড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানায় বিএসএফএস।
ছবিঃ ফুয়াদ তানভীর অমি