নতুন এই গবেষণা থেকে যে বিষয়টি আরও ভালভাবে বোঝা যেতে পারে তা হচ্ছে, কেন কিছু মানুষ ‘অ্যালকোহল ইউজ ডিসঅর্ডার (এডিডি)’-এর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
Published : 18 Sep 2024, 03:31 PM
আনন্দের মুহূর্তে বন্ধুদের সঙ্গে মদ্যপান করার বিষয়টি প্রায়ই কাউকে আরও মিশুক, উৎসাহী ও সুখী করে তোলে। অন্যদিকে একা মদ্যপান কখনও কখনও দুঃখ বা একাকীত্বের অনুভূতি আনতে পারে। কিন্তু কেন এমন হয়?
সম্প্রতি এর কারণ খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
জীববিজ্ঞানী কিউং-আন হান-এর নেতৃত্বে এ গবেষণাটি করেছেন ‘টেক্সাস ইউনিভার্সিটি অফ এল পাসো (ইউটিইপি)’-এর গবেষকরা, যেখানে গবেষণা করা হয়েছে অ্যালকোহলের প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া কীভাবে সামাজিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলে তা নিয়ে৷
এ গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাডিকশন বায়োলজি’-তে। সাম্প্রতিক এ গবেষণায় নজর দেওয়া হয়েছে সামাজিক মদ্যপানের প্রতি মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া ও কীভাবে এটি মানুষের উচ্ছ্বাসের অনুভূতি বাড়ায় সে সম্পর্কে।
নতুন এই নতুন গবেষণা থেকে যে বিষয়টি আরও ভালভাবে বোঝা যেতে পারে তা হচ্ছে, কেন কিছু মানুষ ‘অ্যালকোহল ইউজ ডিসঅর্ডার (এডিডি)’-এর ঝুঁকিতে রয়েছেন। এটি এমন এক অবস্থা, যা গোটা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে প্রভাবিত করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ গবেষণায় সাধারণ ধারণার বাইরের এক বিষয় নিয়ে এগিয়েছেন হানের দল, যা হচ্ছে ফলের মাছি। ছোট ও সরল কাঠামো হলেও যেসব জিন মানুষের দেহে রোগ বাঁধায় তার প্রায় ৭৫ শতাংশই পাওয়া যায় এই মাছিতে।
ফলে, এসব মাছি অ্যালকোহলের প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় তা গবেষণার মাধ্যমে মানুষও কীভাবে অ্যালকোহলের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন বিজ্ঞানীরা।
এ গবেষণা করতে হলে মাছিকে আগে “মদ্যপান” করাতে হবে। সেটি কীভাবে? গবেষকরা বিভিন্ন ফলের মাছিকে একা বা দলবদ্ধভাবে ইথানল বাষ্পের (অ্যালকোহল) সংস্পর্শে আনেন গবেষকরা। এরপর এদের গতিবিধি পরিমাপ করেন তারা।
দেখা গেছে একা ‘মদ্যপান’ করা মাছিদের গতিবিধি সামান্যই বেড়েছে। তবে দলবদ্ধভাবে মদ্যপান করা মাছিদের গতিবিধি ও চলাচল বেড়েছে। যা থেকে ইঙ্গিত মেলে, অ্যালকোহলের বিভিন্ন প্রভাবকে আরও শক্তিশালী করে তোলে নানা সামাজিক সম্পর্ক।
এরপর ডোপামিনের ভূমিকার ওপর নজর দেন গবেষকরা। মস্তিষ্কের একটি রাসায়নিক উপাদান ডোপামিন, যা মানুষের আনন্দ ও অনুপ্রেরণার অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। সাধারণ ডোপামিনের মাত্রাসহ একদল মাছিকে উচ্চ ডোপামিনের মাত্রার অন্য দলের মাছির সঙ্গে তুলনা করেছেন গবেষকরা।
গবেষণার এসব ফলাফল থেকে দেখা গেছে, একটি নির্জন পরিবেশে একা একা মদ্যপান করা মাছি ও একটি দলে মদ্যপান করা মাছিরা অ্যালকোহলের প্রতি একইভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, কেবল এদের গতিবিধির সামান্য বৃদ্ধি ঘটে। তবে দল হিসাবে উচ্চ ডোপামিন মাত্রাসহ বিভিন্ন মাছি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়তা দেখায়।
গবেষকরা বলছেন, এর মানে হচ্ছে নানা সামাজিক সম্পর্ক ও ডোপামিন উভয়ই অ্যালকোহলের প্রভাব বাড়ানোর জন্য সম্ভবত একসঙ্গে কাজ করে।
এক্ষেত্রে ‘ডি১’ ডোপামিন রিসেপ্টরকে এই প্রক্রিয়াটির মূল খেলোয়াড় হিসাবে নির্দেশ করেছেন গবেষকরা। এটি মস্তিষ্কের এমন একটি উপাদান, যা ডোপামিনের বিভিন্ন প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
তবে মজার বিষয় হচ্ছে, মানুষের মধ্যে অ্যালকোহল ব্যবহারের বিভিন্ন রোগের সঙ্গেও যুক্ত এ রিসেপ্টরটি, যা কিছু মানুষ কেন মদ্যপানের সমস্যার ঝুঁকিতে রয়েছে তা ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করতে পারে।
“আমরা দেখিয়েছি যে, নানা সামাজিক সম্পর্ক ও ডোপামিন একসঙ্গে অ্যালকোহলের প্রতি মানুষের মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে তোলে,” বলেন হান।