আর্কিয়ান যুগের জিরকন নামের বিরল প্রকৃতির খনিজের মিশ্রণ কেবল ‘সাবডাকশন’ নামের প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তৈরি হতে পারে।
Published : 08 Aug 2024, 03:26 PM
পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশ কীভাবে গঠিত হয়েছিল, তা নিয়ে নতুন ধারণা মিলেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
কোটি কোটি বছর আগে মহাদেশ গঠনের এ প্রক্রিয়াটি পৃথিবীতে জীবন ধারণের মঞ্চ তৈরি করেছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
তবে, ভূখণ্ডগুলোর অস্তিত্ব বা এগুলো এখনও চলমান বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া থেকে গঠিত হয়েছিল কি না, তা বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের বিতর্কের বিষয়।
এ বিতর্কের আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় শিকাগো’র ভূতত্ত্ব ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডেভিড হার্নান্দেজ উরিবে নেতৃত্বাধীন সাম্প্রতিক এক গবেষণা, যেটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার জিওসায়েন্স’-এ।
মহাদেশ গঠনের বিভিন্ন প্রধান তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে তার এ গবেষণা।
এ গবেষণায় বিভিন্ন কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে ‘ম্যাগমা’র গঠনপ্রক্রিয়া খতিয়ে দেখেছেন উরিবে। ম্যাগমা হল ভূগর্ভে থাকা এমন ধরনের উত্তপ্ত তরল উপাদান, যা ঠাণ্ডা হওয়ার পর পাথর ও খনিজ পদার্থ গঠিত হয়। আর এর থেকে মহাদেশের উৎস সম্পর্কেও তথ্য মিলতে পারে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
এজন্য উরিবে বিশেষ নজর দিয়েছেন সেইসব ম্যাগমার দিকে, যা ‘জিরকন’ নামের বিরল প্রকৃতির খনিজের গঠনপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত।
আড়াইশ কোটি থেকে থেকে চারশ কোটি বছর আগের ‘আর্কিয়ান’ যুগেও এ খনিজের অস্তিত্ব ছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
বিজ্ঞানীদের দাবি, এই একই সময়ের যোগসূত্র থাকতে পারে প্রথমবার মহাদেশ গঠনের সঙ্গে।
গত বছর চীন ও অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে, আর্কিয়ান যুগের জিরকন নামের এ বিরল প্রকৃতির খনিজের মিশ্রণটি তৈরি হতে পারে ‘সাবডাকশন’ নামের প্রক্রিয়া থেকে।
সাবডাকশন ঘটে যখন দুটি টেকটোনিক প্লেট পানির নিচে সংঘর্ষ করে স্থলভাগকে পৃষ্ঠের দিকে ঠেলে দেয়। এই প্রক্রিয়া এখনও সক্রিয়, যার ফলে ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটে ও বিভিন্ন উপকূল রেখা নতুন আকার পায়।
তবে উরিবে গবেষণায় খুঁজে পেয়েছেন, আর্কিয়ান যুগের জিরকন তৈরির জন্য সাবডাকশনের প্রয়োজন নেই। এর পরিবর্তে উরিবে দেখতে পান, এইসব খনিজ পৃথিবীর পুরু আদিম ভূত্বকের গলনের সঙ্গে যুক্ত উচ্চ চাপ ও তাপমাত্রার মাধ্যমে তৈরি হতে পারে।
“আমার হিসাব ও বিভিন্ন মডেল ব্যবহার করে আপনি বিভিন্ন জিরকনের চিহ্ন পেতে পারেন। এমনকি ভূত্বকের নিচের অংশের আংশিক গলনের মাধ্যমে আরও ভাল মিল পেতে পারেন,” বলেন হার্নান্দেজ উরিবে।
“তাই এইসব ফলাফলের উপর ভিত্তি করে কোন প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন মহাদেশ গঠন করেছিল তা বলার জন্য আমাদের কাছে এখনও যথেষ্ট প্রমাণ নেই।”
পৃথিবীতে ‘প্লেট টেকটোনিকস’ কখন শুরু হয়েছিল, তার সময়রেখা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ পেয়েছে উরিবের অনুসন্ধানে। আদিকালের মহাদেশগুলো সাবডাকশন প্রক্রিয়া থেকে গঠিত হলে টেকটোনিক প্লেটের গতিবিধি শুরু হয়েছিল সম্ভবত ৩৬০ কোটি থেকে চারশ কোটি বছর আগে অর্থাৎ পৃথিবী গঠনের মাত্র ৫০ কোটি বছর পর।
তবে, এদের গঠনের সঙ্গে ভূত্বক গলে যাওয়ার যোগসূত্র থাকলে সাবডাকশন প্রক্রিয়া ও টেকটোনিক প্লেটের গতিবিধি আরও পরে শুরু হত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
“সৌরজগতে আমাদের পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ, যেখানে সক্রিয় টেকটোনিক প্লেট রয়েছে, যার সম্পৃক্ততা আছে প্রাণের উৎপত্তির সঙ্গে। আর আবহাওয়া, মহাসাগরের রসায়ন এবং প্রাণ সংশ্লিষ্ট সবকিছুই আদিকালের বিভিন্ন মহাদেশের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে কাজ করত।”