Published : 06 May 2025, 09:39 PM
কল্পনা করা যেতে পারে এমন এক দৃশ্যের, যেখানে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখা যাচ্ছে ড্রোন কেবল প্যাকেজ পৌঁছে দিচ্ছে না, বরং মাঝ আকাশেই উড়ে উড়ে পুরো একটি ভবন নির্মাণ করছে।
এ যেন কোনো সায়েন্স ফিকশন সিনেমার দৃশ্য। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে এ কল্পনা এখন আর খুব একটা দূরের নয়।
‘ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন’ ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টল’-এর গবেষকরা এমন একটি প্রকল্পে কাজ করছেন, যেখানে বিভিন্ন ড্রোনকে ব্যবহার করা হচ্ছে আকাশে ওড়ার সময়ই নির্মাণ কাজ সম্পাদনের জন্য।
এ ধরনের রোবট ‘এরিয়াল রোবট’ বা ড্রোন নামে পরিচিত। এরা এমন জায়গায় কাজ করে নির্মাণের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে পারে, যেখানে মানুষের পৌঁছানো কঠিন বা বিপজ্জনক। এরা নিজেরাই উপাদান বহন ও নির্দিষ্ট স্থানে বসানোর মতো জটিল কাজ করতে পারছে, ঠিক যেমনটি মানুষ কোনো ভবন তৈরির সময় করে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এ গবেষণায় ‘এরিয়াল অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং বা এরিয়াল এএম’ নামে এক প্রযুক্তির ওপর নজর দিয়েছেন গবেষকরা। এটি এমন এক নতুন ধারণা, যেখানে বিভিন্ন ড্রোন উড়ন্ত অবস্থাতেই উপাদান জমা করে ধাপে ধাপে কোনো কাঠামো তৈরি করে। ঠিক যেভাবে থ্রিডি প্রিন্টারে স্তরের পর স্তর বসিয়ে কাঠামো তৈরি হয় বিষয়টি ঠিক তেমনই। তবে এমনটি করা হবে আকাশে, ড্রোন ব্যবহার করে।
গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে বিশ্বের বড় আকারের নানামুখি সমস্যার সমাধান করতে সহায়তা করতে পারে এ পদ্ধতিটি। যেমন সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের ঘাটতি ও আরও ভাল অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতের নির্মাণশিল্পে একটি টেকসই ও উদ্ভাবনী সমাধান হয়ে উঠতে পারে।
প্রচলিত বিভিন্ন নির্মাণযন্ত্র বা রোবটকে মাটিতে থেকেই কাজ করতে হয় তবে এ ধরনের বিভিন্ন ‘এরিয়াল রোবট’ আকাশে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে। ফলে এরা অনেক উঁচুতে, রুক্ষ ভূখণ্ডে বা এমন জায়গায় নির্মাণ কাজ করতে পারে, যে জায়গা মানব শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ নয়।
গবেষকরা বলছেন, এরা পরিবেশে বর্জ্য ও শক্তির ব্যবহার কমিয়ে আনতেও সহায়তা করতে পারে, যা ভবন নির্মাণকে করে তুলবে আরও পরিবেশবান্ধব।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স রোবোটিক্স’-এ। এতে এক নতুন সিস্টেম উপস্থাপন করেছেন গবেষকরা, যা ‘এরিয়াল রোবট’কে নিরাপদ ও নির্ভুলভাবে একসঙ্গে কাজ করতে সাহায্য করবে।
গবেষণায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে কাজ করেছেন গবেষকরা। যেমন– কীভাবে একাধিক ড্রোনের উড়ার পথ নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন উপাদান নির্দিষ্ট জায়গায় সঠিকভাবে বসানো ও কীভাবে এ পদ্ধতিকে বড় নির্মাণ প্রকল্পের জন্য বড় পরিসরে ব্যবহার করা যায় এমন সব বিষয়।
ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিস্টল-এর ড. বাসারান বাহাদির কোসার বলেছেন, এই ‘এরিয়াল’ নির্মাণ প্রযুক্তি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও এরইমধ্যে অনেক সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে এটি।
এ পদ্ধতির একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এসব ড্রোন যে ধরনের উপাদান ব্যবহার করবে তা বাস্তব বিশ্বের কাঠামোর জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ও টেকসই কি না তা নিশ্চিত করা।
আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এসব ড্রোনকে এমন পরিবেশে চলাচল করতে সাহায্য করা, যেখানে জিপিএস সিগনাল হয়তো পুরোপুরি স্পষ্ট নয় ও একাধিক ড্রোনকে একসঙ্গে মসৃণভাবে কাজ করতে সাহায্য করবে।
গবেষকরা বলছেন, এসব বাধার পরও ‘এরিয়াল এএম’-এর প্রাথমিক বিভিন্ন প্রদর্শন খুবই কার্যকর ছিল। যেমন– ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামো দ্রুত সারাতে ও মডিউলার বিভিন্ন অংশ একসঙ্গে করতে পেরেছে এটি। এ থেকে ইঙ্গিত মেলে, ভবিষ্যতে নির্মাণ শিল্পে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে এ প্রযুক্তি।
এসব ধারণাকে ল্যাবের বাইরে পরীক্ষা করতে এক ধরনের বিশেষ জায়গা ব্যবহার করছেন গবেষকরা, যার নাম ‘ড্রোনহাব’, যা ইএমপিএ বা ‘স্বিস ফেডারেল ল্যাবরেটরিজ ফর ম্যাটিরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’-তে অবস্থিত।
‘ড্রোনহাব’ বিজ্ঞানীদের এমন এক সুযোগ দিয়েছে যাতে তারা দেখতে পারেন বাস্তব দুনিয়ার পরিস্থিতিতে বিভিন্ন উড়ুক্কু নির্মাণ যন্ত্র কতটা কার্যকরভাবে কাজ করে।