“এই অধিগ্রহণের ফলে এক্সএআইয়ের মূল্য এখন আট হাজার কোটি ডলার এবং এক্স-এর মূল্য তিন হাজার তিনশ কোটি ডলার।”
Published : 06 Apr 2025, 04:57 PM
মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স কিনে নিল তারই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইনির্ভর স্টার্টআপ এক্সএআই। আগে টুইটার নামে পরিচিত এক্স প্লাটফর্মটি তিন হাজার তিনশ কোটি ডলারে অধিগ্রহণ করেছে স্টার্টআপটি।
সামাজিক মাধ্যমটি কেনার বিষয়ে এক এক্স পোস্টে মাস্ক বলেছেন, “এই অধিগ্রহণের ফলে এক্সএআইয়ের মূল্য এখন আট হাজার কোটি ডলার এবং এক্স-এর মূল্য তিন হাজার তিনশ কোটি ডলার।”
চুক্তি নিয়ে কী বললেন মাস্ক?
মাস্ক নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “এক্সএআই ও এক্স-এর ভবিষ্যত একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা ডেটা, মডেল, হিসাব, বণ্টন ও প্রতিভা একসঙ্গে করার পদক্ষেপ নিয়েছি। এ অধিগ্রহণ এক্সএআইয়ের উন্নত এআই সক্ষমতা ও কার্যকরতার সঙ্গে এক্স-এর বিশাল ডেটার মিশ্রণ ঘটিয়ে অপরিমেয় সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।”
এ চুক্তির বেশিরভাগ সুনির্দিষ্ট বিষয়ই অস্পষ্ট রয়ে গেছে। উভয় কোম্পানিই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন, তাই তাদের অর্থের বিষয়টি জনসাধারণের কাছে প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।
এমন পদক্ষেপ এক্স ব্যবহারকারীদের জন্য কোনও পরিবর্তন আনবে কি না সে বিষয়টিও এখনও স্পষ্ট নয়।
এর আগে টুইটার অধিগ্রহণের পর কোম্পানিটির বেশিরভাগ কর্মীকে ছাঁটাই করার পাশাপাশি প্লাটফর্মটির কনটেন্ট মডারেশন, ব্যবহারকারী যাচাইকরণের নীতিমালা পরিবর্তন ও নামও বদলে দিয়েছিলেন মাস্ক।
মাস্কের দাবার চাল কোথায়?
টুইটার কেনার এক বছর পরই এআইনির্ভর কোম্পানি এক্সএআই উন্মোচন করেন মাস্ক।
তার বিতর্কিত কনটেন্ট নীতি পদক্ষেপের কারণে সে সময় প্ল্যাটফর্মটি ছেড়েছিলেন বিজ্ঞাপনদাতারা। ফলে রাজস্বও দ্রুত কমে গিয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির।
বর্তমানে এক্স কেবল একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোম্পানিই নয়, বরং এক বিশাল আকারের রিয়াল টাইম ডেটা ইঞ্জিন।
৬০ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী নিজেদের আলাপচারিতা, মতামত ও বাস্তব বিশ্বের বিভিন্ন ইভেন্টের এক নিরবচ্ছিন্ন তথ্য প্রবাহ তৈরি করেছে এক্স, যা এক্সএআইয়ের বিভিন্ন এআইনির্ভর মডেল প্রশিক্ষণের জন্য এক সোনার খনি।
আর ওপেনএআই, অ্যানথ্রোপিক ও গুগলের মতো বিভিন্ন এআই কোম্পানির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জিততে এক্সএআইয়ের এই মুহূর্তে ঠিক এটাই প্রয়োজন।
আর এটি কোনও অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয়। বর্তমানে বেশিরভাগ এআই কোম্পানি উচ্চমানের রিয়াল টাইম ডেটা পেতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে।
সেক্ষেত্রে এক্সএআইয়ের এখন এমন কিছু রয়েছে, যা তার প্রতিযোগী কোম্পানিগুলোর নেই। যেমন– মানুষের মিথস্ক্রিয়ার এক জ্যান্ত গবেষণাগার এক্স প্লাটফর্মটি। যার মানে হতে পারে–
● আরও হিউম্যানয়েড এআই মডেল তৈরি করতে পারবে এক্সএআই।
● বিভিন্ন রিয়াল টাইম অ্যাপ্লিকেশনে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাবে কোম্পানিটি।
● যে কোনও জায়গায় পাওয়া যায় এমন আপ-টু-ডেট তথ্যের ওপর তাদের এআইকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষমতা পাবে স্টার্টআপটি।
এরপর কী হবে?
এ অধিগ্রহণের কেবল এক্সের ভেতরে একটি এআই সহকারী সম্পর্কে নয়, বরং এটা অনেক বড় কিছুর ভিত্তি। যেমন–
● এআইচালিত কনটেন্ট ও ব্যবহারকারীদের আলাপচারিতা।
● সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চেয়েও বেশি হয়ে উঠেছে এক্স।
● এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ কৌশল স্টার্টআপটির হাতের মুঠোয় থাকবে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক্সএআই স্টার্টআপটি তাদের চ্যাটবটের সর্বশেষ সংস্করণ গ্রক ৩ চালু করে। কারণ চীনা এআই কোম্পানি ডিপসিক ও মাইক্রোসফট সমর্থিত চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআইয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতার চেষ্টা করছে তারা।
এআই দুনিয়ায় তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে আরও উন্নত বিভিন্ন এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দিতে নিজেদের ডেটা সেন্টারের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে এক্সএআই।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওপেনএআইকে অধিগ্রহণের জন্য এক কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে ৯ হাজার সাতশ ৪০ কোটি ডলারের চুক্তি করারও চেষ্টা করেছেন মাস্ক।
কিন্তু ওই প্রস্তাব বা দরপত্রটি খারিজ হয়ে যায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে টেসলা ও স্পেসএক্সের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক ওয়াশিংটনে একজন শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ডয়চে ভেলে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ বা ডিওজিই’র প্রধান হিসেবেও কাজ করছেন মাস্ক, যেখানে সরকারি ব্যয় কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন তিনি।
মূল কথা হচ্ছে, মাস্কের এমন পদক্ষেপ কেবল আরেকটি প্রযুক্তিগত একীভূতকরণ নয়। বরং এটি খুব হিসাব করে নেওয়া পদক্ষেপ, যা এক্সএআইকে এআইতে অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে তৈরি করবে। একইসঙ্গে এক্স-এর ডেটা ব্যবহার করে নিজেদের এআই মডেলকে সুপারচার্জও করবে স্টার্টআপটি।
মাস্ক কেবল ওপেনএআই, গুগল ও অ্যানথ্রোপিকের সঙ্গে প্রতিযোগিতাই করছেন না। এ খেলাটিকেও পুরোপুরি বদলে দিচ্ছেন তিনি।