হঠাৎ করেই এক্সে আগ্রহী হয়ে ওঠার বিষয়ে মিস্টারবিস্ট বলেছেন, এখানে বিজ্ঞাপন থেকে কতোটা আয় করা যায় সে বিষয়ে তিনি ‘অনেক কৌতূহলী’।
Published : 17 Jan 2024, 07:18 PM
সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ প্রথমবারের মতো একটি গোটা ভিডিও শেয়ার করে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন জনপ্রিয়তায় বিশ্বের এক নাম্বার ইউটিউবার মিস্টারবিস্ট।
তার এক্স-এ যোগ দেওয়ার ঘটনাটি ফলাও প্রচারণা পাওয়ার পেছনের কারণ তারই আগে বলা কথাবার্তা। ‘শত কোটি ভিউ’ এলেও এক্স-এ যোগ দেওয়ার সময় নেই তার – এমন কথা তিনি আগে প্রকাশ্যেই বলেছেন।
তবে, এই তারকা তার ২৩ কোটি ইউটিউব সবাস্ক্রাইবারের জন্য অনেক আগে থেকেই ভিডিও আপলোড করেন।
তবে, হঠাৎ করেই এক্সে আগ্রহী হয়ে ওঠার বিষয়ে মিস্টারবিস্ট বলেছেন, এখানে বিজ্ঞাপন থেকে কতোটা আয় করা যায় সে বিষয়ে তিনি ‘অনেক কৌতূহলী’।
তার এ আগ্রহ ধুঁকতে থাকা সামাজিক মাধ্যমটির জন্য হালের পানি হিসেবে কাজ করবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
২০২২ সালের অক্টোবরে সে সময় টুইটার নামে জনপ্রিয় এই প্ল্যাটফর্মটি কেনার পর থেকেই ইলন মাস্ক ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন। উদাহরণ হিসেবে, বড় কনটেন্ট নির্মাতাদের সঙ্গে বিজ্ঞাপনের আয় ভাগ করে নেওয়া, যা ইউটিউবসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম এরইমধ্যে করছে।
তবে, বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সারের তথাকথিত আয়ের পরিমাণ ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, ব্যক্তিগত চুক্তির শর্তাবলী গোপন রাখা হলেও মনে করা হয়, বড় তারকারা আয় ভাগাভাগি নিয়ে দরদাম করতে পারেন।
মিস্টারবিস্ট, যার আসল নাম জিমি ডোনাল্ডসন, বলেছেন, মাত্র ১০ ঘন্টায় অন্তত তিন কোটি ৩০ লাখ ভিউ পাওয়া এ ভিডিও থেকে কতো আয় এলো তা এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি প্রকাশ করবেন।
তবে, ইউটিউবে পোস্ট করা ওই একই ভিডিও’র ভিউ টপকাতে এখনো অনেক বাকি। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ওই ভিডিওতে আছে প্রায় ২১ কোটি ১০ লাখ ভিউ।
মিস্টারবিস্টের ভিডিও পোস্ট করার সিদ্ধান্ত তার মনের পরিবর্তনকেই তুলে ধরেছে বলে লিখেছে বিবিসি। তিনি আগে বলেছিলেন এক্সে ভিডিও পোস্ট করায় তার পোষাবে না, কারণ ‘শত কোটি ভিউ’ পেলেও তার খরচই উঠবে না!
দামী ভিডিও
মিস্টারবিস্ট দাবি করেছেন, তার ইউটিউব ভিডিওগুলো তৈরি করতে কয়েক লাখ ডলার খরচ হয়েছে। তবে, তিনি সেখান থেকেই তার ভাগ্য বদলে ফেলেছেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে ফোর্বস অনুমান করেছে, তিনি ইউটিউব থেকে এক বছরে ৫৪০ কোটি ডলার উপার্জন করেছেন।
তারপর থেকে, তিনি তার প্রধান ইউটিউব চ্যানেলে আরও ১২ কোটি সাবস্ক্রাইবার যোগ করতে পেরেছেন। এই ধরনের পরিসংখ্যানই বলে দেয় মিস্টারবিস্টের কন্টেন্ট এক্স-এর জন্য কপাল খুলে দেওয়া বিষয়।
তবে, এখান থেকে তিনি ইউটিউব সাফল্যের কাছাকাছি কিছু অর্জন করবেন এমন কোন নিশ্চয়তা নেই। বিষয়টি বোঝা যায় মার্কিন তারকা প্যারিস হিলটনের করা চুক্তির মাধ্যমে, যা মাত্র চার সপ্তাহ পরেই বাতিল হয়েছিল।
‘আমি মনে করি, তিনি এটি প্রমাণ করার জন্যই কাজটি করছেন যে, আপনি একজন ভিডিও নির্মাতা হয়ে টুইটার থেকে তেমন অর্থ উপার্জন করতে পারবেন না।’ – বলেছেন স্বাধীন স্ট্রিমিং পরিষেবা নেবুলার সিইও ডেভ উইস্কাস।
‘আমরা টুইটারের মালিক, কারা টুইটারে বিজ্ঞাপন দেয় এবং এর সঙ্গে জড়িত থাকার নৈতিক প্রভাব কী তা নিয়ে কথা বলতেই পারি। তবে, আমার মনে হয় না তিনি টুইটারের স্বার্থ দেখার জন্য কিছু করছেন।’
‘তবে, এটা কোনো ধরনের স্বীকৃতি নয়। আমি মনে করি তিনি তার জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে জিনিসগুলো উন্নত করার চেষ্টা করছেন।’ – আরও বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপনদাতাদের সঙ্গে মাস্কের দ্বন্দ্বের কারণে বিজ্ঞাপনের নির্মাতারা যতোটা আয় করতে পারেন সেটি প্রভাবিত হতে পারে। যাদের কারো কারো সঙ্গে মাস্কের সম্পর্ক ভালোও নয়।
গত বছর বিনোদন জায়ান্ট ডিজনি এক্স প্ল্যাটফর্ম থেকে বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিলে এর প্রধান নির্বাহী বব আইগারকে একটি লাইভ ইভেন্টে যাচ্ছেতাই গালাগাল করেছিলেন মাস্ক।
এই প্ল্যাটফর্মটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও রয়েছে, এটি ঘৃণামূলক কনটেন্টে সমর্থন দেয়, যেটি এক্স জোরালোভাবে অস্বীকার ও করেছে। এ ছাড়াও, পূর্বে ইলন মাস্ক এ সামাজিক মাধ্যমে এমন কিছু তারকাকে অনুমোদন দিয়েছেন যাদের তুলনায় মিস্টারবিস্টের পরিচিতি অনেক গ্রহনযোগ্য। মানবিক সহায়তায় অর্থ দান করার জন্যও বিশেষ পরিচিতি আছে তার।
তবে, বড় ব্র্যান্ড, যারা বিরাট সব প্রচারণায় অনিয়মিত ঢালাও খরচ করে, তারাই যে কেবল এই সামাজিক মাধ্যমগুলোকে চালায়, বিষয়টি এমন নয়। প্রতিটি বড় ব্র্যান্ডের প্রচারণার জন্য লক্ষ লক্ষ ছোট ও মাঝারি আকারের ব্যবসা কাজ করে, যারা প্ল্যাটফর্মকে চালু রাখতে প্রায়ই অল্প অল্প করে খরচ করে।
এক্সের দৃষ্টিকোণ থেকে, যদি এ পরীক্ষাটি সফল হয়, তবে আসল প্রশ্ন হবে মিস্টারবিস্ট এমন কতগুলো ব্যবসাকে প্ল্যাটফর্মটিতে টেনে আনতে পারেন।