পেগাসাসের বিরুদ্ধে মামলা চলবে: যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট

স্পাইওয়্যারটি বিভিন্ন সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও ভিন্নমত পোষণ করা ব্যক্তিসহ সর্বমোট এক হাজার চারশ ব্যক্তির ওপর নজরদারি করেছে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2023, 08:25 AM
Updated : 10 Jan 2023, 08:25 AM

ইসরাইলের এনএসও গ্রুপের তৈরি ‘পেগাসাস স্পাইওয়্যারের’ বিরুদ্ধে মেটা মালিকানাধীন মেসেজিং সেবা হোয়াটসঅ্যাপকে মামলার অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট।

হোয়াটসঅ্যাপের অভিযোগ, মেসেজিং সেবায় থাকা এক বাগের সুযোগ নিয়ে স্পাইওয়্যারটি বিভিন্ন সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীসহ সর্বমোট এক হাজার চারশ ব্যক্তির ওপর নজরদারি করেছে।

দেশটির নিম্ন আদালতের রায়ে এনএসও’র বিরুদ্ধে বিচারকাজ অব্যাহত রাখতে বললেও সফটওয়্যার কোম্পানিটি এর বিপরীতে আপিল করে। তবে, বিচারকরা সেটি নাকচ করে দেন।

এনএসও’র যুক্তি, তারা এইসব মামলার আওতাধীন নয়। কারণ, ‘পেগাসাস’ সফটওয়্যার ইনস্টলের সময় তারা বিভিন্ন বিদেশী সরকারের এজেন্ট হিসাবে কাজ করছিল।

এনএসও’র আপিল নাকচ করতে বিচারকদের অনুরোধ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, মার্কিন প্রশাসন এর আগে কখনওই বিদেশী রাষ্ট্রের এজেন্ট হিসাবে কাজ করার কারণে কাউকে মামলা থেকে ছাড় দেয়নি।

আদালতে এনএসও’র ‘ভিত্তিহীন’ আপিল নাকচ করার সিদ্ধান্তকে এক বিবৃতির মাধ্যমে স্বাগত জানিয়েছে হোয়াটসআপ ও ফেইসবুকের মালিক কোম্পানি মেটা।

“বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও সরকারী কর্মকর্তাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এনএসও’র স্পাইওয়্যারটি সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে।” --বলেছে মেটা।

“আমাদের বিশ্বাস, তাদের কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রের আইন পরিপন্থী। আর এমন বেআইনি কার্যক্রমের জন্য তাদের আইনের আওতায় আনা উচিৎ।”

এই প্রসঙ্গে রয়টার্স এনএসও’র এক আইনজীবির মন্তব্য জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক কোনো জবাব মেলেনি।

২০১৯ সালে এনএসও’র বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছিল হোয়াটসঅ্যাপ। এর ছয় মাস আগে সেবাটির অনুমতি ছাড়াই ভুক্তভোগীদের ডিভাইসে পেগাসাস ইনস্টলের লক্ষ্যে এর বিভিন্ন সার্ভারে প্রবেশের অভিযোগ ওঠে সফটওয়্যারটির বিরুদ্ধে।

এর বিপরীতে এনএসও যুক্তি দেখিয়েছে, বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার অপরাধ তদন্তে ও জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষায় সাহায্য করে পেগাসাস। আর বিভিন্ন জঙ্গি, শিশু নিপীড়ক ও ভয়ঙ্কর অপরাধী শনাক্তের উদ্দেশ্যে এই প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে।

তবে, এক কুখ্যাত ঘটনার তথ্য মিলেছে ইস্তানবুলে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক জামাল খাশুগজি হত্যাকাণ্ডে। ওই ঘটনার কয়েক দিন আগেই খাশুগজির ঘনিষ্ট লোকজনকে শিকার বানানোর লক্ষ্যে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে স্পাইওয়্যারটি ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে।

২০২০ সালেও এনএসও’র এক আপিল নাকচ করে আদালত। সে সময় ‘আচরণগত কারণে দায়মুক্তি’ পেতে আপিল করেছিল কোম্পানিটি। এই আইন সাধারণত বিদেশী কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

২০২১ সালে ওই রায় বহাল রাখার পাশাপাশি একে ‘সহজ মামলা’ হিসেবে আখ্যা দেয় স্যান ফ্রানসিসকো ভিত্তিক নবম ‘ইউএস সার্কিট কোর্ট অফ আপিলস’। ‘ফরেন সভরেইন ইমিউনিটিস ফেডারেল অ্যাক্ট (এফএসআইএ)’ -এর দায়মুক্তি সুবিধা পায়নি এনএসও।

হোয়াটসঅ্যাপের আইনজীবিরা বলেন, এনএসও’র মতো ব্যক্তিমালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান স্পষ্টতই বিদেশী সার্বভৌম দায়মুক্তি পাওয়ার ‘অযোগ্য’।

নভেম্বরের এক ফাইলিংয়ে বাইডেন প্রশাসন বলেছে, নবম সার্কিট সঠিক রায়ই দিয়েছে। ‘এফএসআইএ’ এনএসও-কে কোনো ধরনের দায়মুক্তির পূর্বাভাস দেয় না।

আদালতে জমা দেওয়া কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, পেগাসাস ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে এক হাজার চারশ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে, তারা গোপনে ব্যবহারকারীর স্মার্টফোনকে একটি নজরদারির ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার করেছে।

২০২১ সালে প্যারিস-ভিত্তিক সাংবাদিকদের অলাভজনক সংগঠন ‘ফরবিডেন স্টোরিজ’ নেতৃত্বাধীন ১৭টি গণমাধ্যম সংস্থার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসে, বৈশ্বিকভাবে বিভিন্ন সাংবাদিক, সরকারী কর্মকর্তা ও মানবাধিকার কর্মীর স্মার্টফোন সফলভাবে হ্যাকিংয়ে স্পাইওয়্যারটি ব্যবহৃত হয়েছে। 

একই বছরের নভেম্বরে এনএসও ও ইসরাইলের আরেক স্পাইওয়্যার কোম্পানি ‘কানডিরু’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও অন্যান্য ব্যক্তিকে ‘শিকার বানানোর’ অভিযোগে কোম্পানি দুটোকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে, আইফোন নির্মাতা অ্যাপলও নিজস্ব সেবার বিভিন্ন নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ তুলে এনএসও’র বিরুদ্ধে মামলা করেছে।