২০২১ সালে কেনা রোবট প্রতিষ্ঠান বস্টন ডায়নামিক্সের কাছ থেকে কয়েক হাজার রোবটের অর্ডার দিয়েছে এর মালিক কোম্পানি হুন্দাই।
Published : 26 Apr 2025, 02:21 PM
বিশ্বের অন্যতম বড় শিল্প-বাণিজ্য প্রদর্শনী হলো জার্মানির হ্যানোভার শহরের ‘হ্যানোভার মেস’-এ। এ প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীরা দেখেছেন চীনা কোম্পানি ‘ইউনিট্রি’র তৈরি ‘জি-১’ হিউম্যানয়েড রোবট।
প্রায় ৪' ৩" বা ১৩০ সেমি উচ্চতার রোবটটি বাজারে থাকা অন্যান্য হিউম্যানয়েড রোবটের তুলনায় ছোট ও সাশ্রয়ী মূল্যের। পাশাপাশি এর গতি ও সক্ষমতা এতটাই ভালো যে এরইমধ্যে রোবটটির নাচ ও মার্শাল আর্টের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার কথা উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে।
রোবটটিকে রিমোটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করছেন ইউনিট্রি’র সেলস ম্যানেজার পেড্রো ঝেং। তিনি বলেছেন, গ্রাহকদের অবশ্যই প্রতিটি জি ১ রোবটকে অটোনমাস ফাংশনের জন্য প্রোগ্রাম করতে হবে।
ইউনিট্রি হচ্ছে বিশ্বজুড়ে এমন কয়েক ডজন কোম্পানির মধ্যে একটি যারা মানুষের মতো রোবট তৈরি করছে।
এসব রোবটের আমূল সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে ব্যবসায়ের জন্য এসব রোবট এমন কর্মী শক্তির সুবিধা দিতে পারে, যাদের ছুটির দিন বা বেতন বাড়ানোর কোনও প্রয়োজন হয় না।
ঘরের কাজের জন্যও এসব রোবট কার্যকর হতে পারে। কে না চায় যে, এমন একটি মেশিন থাকবে, যা কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে ঘরের সব কাজ করতে পারবে?
কিন্তু এমন প্রযুক্তি পেতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে। কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন কারখানাতে রোবোটিক অস্ত্র ও মোবাইল রোবট ব্যবহারের বিষয়টি সাধারণ হয়ে উঠলেও সেসব কাজের ক্ষেত্রে কেবল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা ও কর্মীদের নিরাপদ রাখা যেতে পারে।
রেস্তোরাঁ বা বাড়ির মতো পরিবেশে হিউম্যানয়েড রোবটকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া অনেক বেশি কঠিন।
দরকারি কাজে লাগানোর জন্য এসব হিউম্যানয়েড রোবটকে শক্তিশালী হতে হবে। তবে এ বিষয়টিই এসব রোবটকে বিপজ্জনক করে তুলতে পারে। আর এমন একটি যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই নিয়ে অনেক কাজ করা দরকার বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
ইউনিট্রি’র একজন মুখপাত্র বলেছেন, “এআই এখনও যুগান্তকারী পর্যায়ে পৌঁছায়নি। বর্তমানের প্রচলিত রোবট কেবল এআইয়ের মৌলিক যুক্তি খুঁজে পেয়েছে। যেমন যৌক্তিক উপায়ে জটিল বিভিন্ন কাজ বোঝা, তবে এসব কাজ এদের মাধ্যমে শেষ করার বিষয়টি এখনও চ্যালেঞ্জিং।”
এই মুহূর্তে তাদের রোবটটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানিতে বাজারজাত করা হচ্ছে। তবে, এর সুযোগ পাচ্ছেন কেবল যারা উন্নয়নের জন্য ইউনিট্রি’র ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারে কেবল তারাই।
আপাতত গুদাম ও কারখানার জন্য বিভিন্ন হিউম্যানয়েড রোবট তৈরির ওপর মনোযোগ দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
এসব উদ্যোক্তার মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন ইলন মাস্ক। তার গাড়ি কোম্পানি টেসলা ‘অপ্টিমাস’ নামের এক হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি করেছে। জানুয়ারিতে মাস্ক বলেছিলেন, এ বছর ‘কয়েক হাজার’ হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি করবেন তারা, যা টেসলার কারখানার জন্য ‘কার্যকর জিনিস’ হয়ে উঠবে।
অন্যান্য গাড়ি নির্মাতাও একই পথে হাঁটছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি কারখানায় হিউম্যানয়েড রোবট এনেছে ‘বিএমডব্লিউ’। এদিকে, ২০২১ সালে কেনা রোবট প্রতিষ্ঠান বস্টন ডায়নামিক্সের কাছ থেকে কয়েক হাজার রোবটের অর্ডার দিয়েছে এর মালিক কোম্পানি হুন্দাই।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘এসটিআইকিউ’-এর প্রতিষ্ঠাতা টমাস অ্যান্ডারসন হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি করে এমন ৪৯টি কোম্পানির ওপর নজর রাখেন, এসব রোবটের দুটি হাত ও একটি পা রয়েছে। অ্যান্ডারসনের ধারণা, হিউম্যানয়েড রোবট তৈরিতে বাজারে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে বিভিন্ন চীনা কোম্পানি।
তিনি বলেছেন, “চীনে রোবোটিক্সের সরবরাহ চেইন ও পুরো বাস্তুতন্ত্র বিশাল আকারের এবং দেশটিতে রোবট বিকাশ ও গবেষণার কাজটি সত্যিই সহজ।”
সেই সুবিধাটি কাজে লাগিয়েছে ইউনিট্রি এবং তাদের সাশ্রয়ী মূল্যে জি ১ রোবট তৈরি করেতে পেরেছে তারা। যার মূল্য ১৬ হাজার ডলার।
অ্যান্ডারসন বলেছেন, এ বিনিয়োগ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অনুকূলে।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এসটিআইকিউ বলেছে, হিউম্যানয়েড রোবটের জন্য প্রায় ৬০ শতাংশ অনুদান এশিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, বাকিরা বেশিরভাগই অনুদান নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
এদিকে, জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সহায়তার বাড়তি সুবিধা রয়েছে চীনা বিভিন্ন কোম্পানির। যেমন– দেশটির সাংহাইতে রোবটের জন্য রাষ্ট্রসমর্থিত এক প্রশিক্ষণ সুবিধা রয়েছে, যেখানে কয়েক ডজন হিউম্যানয়েড রোবট কাজ শিখছে।
তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের রোবট নির্মাতারা কীভাবে এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে?
তিনটি রোবোটিক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্রিস্টলের বাসিন্দা ব্রেন পিয়ার্স। যার মধ্যে ‘কিনিসি রোবোটিক্স’ কোম্পানি তাদের সর্বশেষ ‘কেআর ১’ নামের রোবট আনছে। রোবটটি যুক্তরাজ্যে ডিজাইন ও ডেভেলপ করা হলেও এটি এশিয়ায় তৈরি হবে।
পিয়ার্স বলেছেন, “ইউরোপীয় বা আমেরিকান কোম্পানি হিসেবে এসব রোবট তৈরিতে আপনার যে সমস্যাটি হবে তা হচ্ছে, প্রথমেই আপনাকে চীন থেকে এমন রোবট তৈরির সকল উপাদান কিনতে হবে।
“তাই মোটর, ব্যাটারি, রেজিস্টর কিনে তা পৃথিবীর মাঝামাঝি কোনো জায়গায় এগুলোকে আবার একসঙ্গে পাঠানোর বিষয়টি বোকামির, সেক্ষেত্রে আপনি এশিয়ায় এগুলোকে পাবেন ও একসঙ্গে রাখতে পারেন।”
এশিয়ায় রোবট তৈরির পাশাপাশি পুরো হিউম্যানয়েড ধরনের রোবট না বানিয়ে খরচ কমিয়ে রাখছেন পিয়ার্স। গুদাম ও কারখানার জন্য ডিজাইন করা তাদের ‘কেআর ১’ রোবটটির পা নেই।
পিয়ার্স বলেছেন, আসল ‘গোপন রহস্য’ হচ্ছে সফটওয়্যার। আর এই সফটওয়্যারই রোবটকে মানুষের সঙ্গে কাজ করতে সাহায্য করে। এ বছর পরীক্ষার জন্য পাইলট গ্রাহকদের কেআর ১ দেওয়া হবে।
তাহলে কি রোবটরা কখনো কারখানা থেকে ঘরে ঢুকবে?
এমন প্রশ্নে পিয়ার্স বলেছেন, এটি এখনও অনেক দূরে। কম করে হলেও ১০ থেকে ১৫ বছর দূরে।