প্রচণ্ড শক ওয়েভ তৈরি করছে এ সংঘর্ষ। জেট ফাইটার শব্দের গতিতে পৌঁছে গেলে যেমন সনিক বুম তৈরি হয়, এ শকওয়েভও অনেকটা তেমন।
Published : 24 Nov 2024, 05:23 PM
সম্প্রতি মহাকাশের এক বিস্ময়কর ঘটনার বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ঘণ্টায় ৩২ লাখ কিলোমিটার বেগে একে অপরকে ধাক্কা দিচ্ছে দুটি ছায়াপথ।
বিস্ময়কর এ ঘটনার পর্যবেক্ষণে গবেষণা দলটি পৃথিবীর অন্যতম এক শক্তিশালী টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছে।
একে অপরকে ধাক্কা দেওয়ার সময় শক ওয়েভ তৈরি করছে এ সংঘর্ষ। কোনো জেট ফাইটার যখন শব্দের গতিতে পৌঁছে যায়, তখন যেমন সনিক বুম তৈরি হয়, এ শকওয়েভও অনেকটা তেমন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
এমন নাটকীয় ঘটনা বিজ্ঞানীরা প্রথম দেখলেন ‘স্টেফান’স কুইন্টেট’-এ। স্টেফান’স কুইন্টেট হচ্ছে পাঁচটি গ্যালাক্সির একটি দল, যেটি প্রায় দেড়শ বছর আগে আবিষ্কৃত হয়।
স্পেনের লা পালমা দ্বীপে ২ কোটি ইউরো খরচ করে বসানো নতুন ‘উইলিয়াম হার্শেল টেলিস্কোপ এনহ্যান্সড এরিয়া ভেলোসিটি এক্সপ্লোরার’ বা ওয়েভ-এর ওয়াইড-ফিল্ড স্পেকট্রোগ্রাফ ব্যবহার করে এ ঘটনাটি ধারণ করেছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ হার্টফোর্ডশায়ার’-এর নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের একটি দল।
গবেষক ড. মারিনা আরনাউদোভা বলেন, “১৮৭৭ সালে আবিষ্কারের পর থেকেই স্টেফান’স কুইন্টেট রীতিমতো মুগ্ধ করেছে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের। এটি অনেকটা ঘটনাবহুল চৌরাস্তা যেন, যেখানে অতীতে ছায়াপথের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে ধ্বংসাবশেষের জটিল ক্ষেত্র রয়ে গেছে।”
“ছায়াপথের এই দলের খ্যাপাটে আচরণের ফলে এখন প্রতি ঘণ্টায় ৩২ লাখ কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে দুটি ছায়াপথের সংঘর্ষ হচ্ছে। এ থেকে তৈরি হচ্ছে শক্তিশালী মাত্রার শক। এটি জেট ফাইটারের সনিক বুমের মতো।”
এ শকের পেছনে রয়েছে দ্বৈত প্রকৃতির কারণ, যা সম্প্রতি সামনে এনেছেন গবেষকরা। এর আগে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে একবারেই অজানা ছিল এটি।
গবেষকরা বলছেন, ঠাণ্ডা গ্যাসের পকেটের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাইপারসনিক গতি লাভ করে শকটি। আর এ শক ছায়াপথের পরমাণু থেকে বিভিন্ন ইলেকট্রন বিচ্ছিন্ন করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। ফলে এর থেকে তৈরি হয় চার্জওয়ালা গ্যাসের এক উজ্জ্বল পথ।
তবে ‘ইউনিভার্সিটি অফ হার্টফোর্ডশায়ার’-এর পিএইচডি শিক্ষার্থী সৌম্যদীপ দাস বলছেন, আশপাশের গরম গ্যাসের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় অনেক দুর্বল হয়ে যায় শকের মাত্রা।
“অনেক বেশি ব্যাঘাত ঘটানোর বদলে গরম গ্যাসকে আকারে সংকুচিত করে ফেলে এই দুর্বল শক। ফলে তৈরি হয় রেডিও তরঙ্গ, যেটি ধারণ করা যায় ছোট মাত্রার ফ্রিকোয়েন্সি অ্যারে বা এলওএফএআর-এর মতো রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে।”
এ নতুন ধারণা ও বিস্ময়কর ঘটনাটি জানা গেছে ওয়েভ টেলিস্কোপের মাধ্যমে। এর সঙ্গে আরও ছিল অন্যান্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির তথ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ বা জেডাব্লুএসটি।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’র ‘মান্থলি নোটিশ’-এ। গবেষকদের দাবি, মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জানার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত এই ওয়েভ টেলিস্কোপ।