হলিউডে নতুন লড়াই: লেখক বনাম এআই

হলিউডে ফিল্ম ও টেলিভিশন স্ক্রিপট লেখায় এআই প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত করার দাবি তুলেছে দ্য রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2023, 10:06 AM
Updated : 3 May 2023, 10:06 AM

মেশিন কীভাবে এই পৃথিবীর দখল নিচ্ছে, সেই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী কয়েক দশক ধরে লিখে আসছেন হলিউডের স্ক্রিপ্ট লেখকরা; সেই রোবটের গ্রাস থেকে নিজেদের চাকরি বাঁচাতে এখন তাদের সত্যি সত্যি লড়াইয়ে নামতে হয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, ফিল্ম ও টেলিভিশন লেখকদের সংঘ দ্য রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা (ডব্লিউজিএ) তাদের স্ক্রিপট লেখায় আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত করতে চাইছেন।

তাদের কর্মক্ষেত্র বা জীবিকার অবলম্বন যেন মেশিনের হাতে চলে না যায়, সেই দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা। আর তাতে তাৎক্ষণিকভাবে বিপাকে পড়েছে যুক্তরষ্ট্রের লেট নাইট শোগুলো, যেখানে সারা দিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে একটি আকর্ষণীয় স্ক্রিপ্ট লিখে ফেলতে হয়।

স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলোর রমরমায় বিনোদন জগতে নাটকীয় পরিবর্তনে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে হলিউড। সেখানকার স্টুডিওগুলো স্ট্রিমিং সার্ভিসকে লাভজনক করতে উঠেপড়ে লেগেছে। বিজ্ঞাপন থেকে তাদের আয় কমেছে।

সেইসঙ্গে বিভিন্ন কনটেন্টে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে গ্রাহক ধরে স্ট্রিমিং সার্ভিসকে লাভজনক ব্যবসায় রূপান্তর করতে গিয়ে স্ট্রিমিং কোম্পানিগুলো ওয়ালস্ট্রিটের চাপের মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় ডব্লিউজিএ যে দাবি তুলেছে, তাতে সায় দিচ্ছে না তারা।

বরং স্টুডিওগুলো বলছে, নতুন প্রযুক্তিগুলোর বিষয়ে রাইটার্স গিল্ডের সঙ্গে বছরে একবার তাদের আলোচনার পথ খোলা থাকবে।

হলিউডে ওয়াল্ট ডিজনি ও নেটফ্লিক্সসহ স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলোর প্রতিনিধিত্ব করছে দ্য অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারস (এএমপিটিপি)।সংঘের এক মুখপাত্র এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

ডব্লিউজিএ এর আগে এক বিবৃতিতে জানায়, লেখকদের সংঘের কাঠামোর ভেতরেই স্ট্রিমিং কোম্পানিগুলো কম পয়সায় পার্টটাইম লেখকদের নিয়ে কাজ করছে। তাতে মূল লেখকদের কদর কমছে, তারা উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছে না। আর এ বিষয়ে আলোচনায় অনড় অবস্থানে থেকে কোম্পানিগুলো তাদের প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করেছে।

যে কারণে ওয়াল্ট ডিজনি কো এবং নেটফ্লিক্স ইনক এর মত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে উচ্চ পারিশ্রমিকের একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়ে মঙ্গলবার থেকে ১৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত কলমবিরতিতে গেছে লেখকদের এই সংঘ।

হলিউডের বিনোদন জগতে একটি চরম অর্থনৈতিক সংকটের পরিস্থিতিতে ডব্লিউজিএ’র সঙ্গে টিভি স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলোর চলমান চুক্তির মেয়াদ শেষে এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, যাতে সমর্থন রয়েছে ডব্লিউজিএ’র সাড়ে ১১ হাজার সদস্যের।

এআই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে যে আপত্তির কথা বলা হচ্ছে, তা মূলত ডব্লিউজিএ’র ধর্মঘটের কয়েকটি কারণের একটি। এএমপিটিপির সঙ্গে ডব্লিউজিএ‘র আলোচনার টেবিলেও এটি ছিল।

ডব্লিজিএ’র অন্যান্য দাবিগুলোর ব্যাপারে আলোচনার টেবিলে ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গ উঠলেও সৃজনশীল কাজে এআই প্রযুক্তি নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে, তা আগামী কয়েক দশকে বিনোদন জগতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

ডব্লিজিএ’র সদস্য চিত্রনাট্যকার জন অগাস্ট জানান, এআই নিয়ে লেখকদের দুটি উদ্বেগের বিষয় রয়েছে।

“আমরা আমাদের কাজগুলো তাদের (এআই) ভেতরে ঢোকাতে চাই না এবং তাদের অখাদ্য খসড়া স্ক্রিপটগুলো আমরা ঠিক করতে চাই না।”

হলিউডে বয়স্ক অভিনেতাদের মুখের বলিরেখা মুছে ফেলতে এখন সাহায্য করছে এআই। অভিনেতাদের বলা আপত্তিকর শব্দগুলো সরিয়ে ফেলতে এবং অ্যানিমেটেড শর্ট ফিল্মগুলো নির্মাণে ওপেন এআই ও দাল-ই ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বাস্তবসম্মত ছবি তৈরি করতে পারে।

কিছু লেখক এই প্রযুক্তিগুলো দিয়ে স্ক্রিপট তৈরির খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে দেখছেন।

এএমপিটিপি ও ডব্লিজিএ’র দর কষাকষির টেবিলে স্ক্রিপট লেখায় এআই এর ব্যবহার বন্ধের দাবি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। লেখকদের আগের কাজগুলো থেকে ধারণা নিয়ে নতুন স্ক্রিপট তৈরি করছে এআই । ফলে এটা প্রতিরোধ করতে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা চান গিল্ডের লেখকরা। সেইসঙ্গে এআই এর খসড়া স্ক্রিপ্ট লেখকদের পুনর্লিখন করতে বলা হবে না, সেই নিশ্চয়তাও চাইছেন তারা।

এর আগে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে একশ দিন ধর্মঘট পালন করেছিল ডব্লিউজিএ। সেসময় প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায় এবং বেকার লেখক, অভিনেতা ও প্রযোজকরা খরচ কমিয়ে দেয়। তাতে ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে আনুমানিক ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয়।

এএমপিটিপি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, একদিন আগেও প্রযোজকরা লেখকদের উচ্চ পারিশ্রমিক ও অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রস্তাব বাড়ানোর জন্য প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু এখন তারা সেটি করতে রাজি নন। কারণ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও আলোচনার টেবিলে রয়েছে, যেগুলো বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে গিল্ড।

এএমপিটিপি বলছে, গিল্ডের সঙ্গে বিপত্তির প্রাথমিক কারণটা রয়েছে চুক্তির মধ্যে, সেখানে বলা হয়েছে, কোনো শো নির্মাণের জন্য একটি কোম্পানির সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্দিষ্ট সংখ্যক লেখক থাকতে হবে, তার প্রয়োজন হোক বা না হোক।

“এএমপিটিপি চুক্তির এই অচলাবস্থা কাটাতে ডব্লিউজিএ’র সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক।”

আরও পড়ুন-

Also Read: হলিউডে লেখক ধর্মঘট