গবেষকরা এরইমধ্যে সামরিক কাজে রোবট কুকুরের ব্যবহার নিয়ে একাধিক শঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন, যার মধ্যে রয়েছে এর খরচ ও নৈতিকতার বিষয়টিও।
Published : 07 Oct 2024, 04:18 PM
মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ার পর সে অঞ্চলের এক সামরিক ঘাঁটিতে রোবট কুকুরের ওপর এআই চালিত রাইফেল পরীক্ষা করে দেখছে মার্কিন সামরিক বাহিনী, এমনই তথ্য উঠে এসেছে নতুন প্রকাশ পাওয়া কয়েকটি ছবিতে।
এইসব ছবি শেয়ার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম পরিষেবা ‘ডিফেন্স ভিজ্যুয়াল ইনফর্মেশন ডিস্ট্রিবিউশন সার্ভিস (ডিভিডস)। এতে এমন এক চার পায়া রোবটকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের কাছাকাছি মরু অঞ্চল ‘রেড স্যান্ড ডিউন্স’-এ বন্দুক নিয়ে ‘রিহার্সাল’ করতে দেখা গেছে, যেখানে একটি যৌথ সামরিক গবেষণাগারও রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
এই চার পায়া রোবটের ওপর থাকা ঘূর্ণায়মান বুরুজে একটি ‘এআর-১৫/এম১৬’ শ্রেণির রাইফেল বসানো ছিল, যার মিল রয়েছে অগাস্টে নিউ ইয়র্কের ফোর্ট ড্রাম এলাকায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর পরীক্ষা করা রোবট সিস্টেমটির সঙ্গে।
মার্কিন সামরিক বাহিনী এ রোবট কুকুরকে ব্যাখ্যা করছে এমন এক ‘চার পায়া চালকবিহীন স্থলযান (ইউজিভি)’ হিসেবে, যার সঙ্গে এআই চালিত রাইফেল বসানো। আর এর মাধ্যমে মানুষের সহায়তা ছাড়াই বিভিন্ন কাজ করতে পারে এটি।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিভিডস শাখাটি জনসাধারণের কাছে তাদের কাজের আপডেট দেয়।
সামরিক বাহিনীবিষয়ক সংবাদের সাইট ‘মিলিটারি ডটকম’-এর তথ্য অনুসারে, এ স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমটি নিয়ে গত মাসে রেড স্যান্ডস-এ পরীক্ষা করেছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। সে সময় আরও ১৫টি ‘কাউন্টার ড্রোন প্ল্যাটফর্ম’ নিয়েও পরীক্ষা করেছে তারা।
গত কয়েক বছর ধরেই নিজস্ব অবকাঠামোতে বিভিন্ন রোবট কুকুর ও অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় স্থলযান যোগ করতে দেখা গেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে।
রোবট কুকুরের ধারণাটি প্রথম নিয়ে এসেছিল মার্কিন রোবটিকস কোম্পানি বস্টন ডাইনামিকস, যেখানে কোম্পানিটি নাসা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস (ডারপা)’র সঙ্গে যৌথভাবে নিজেদের প্রথম চার পায়া রোবটের প্রোটটাইপ ‘বিগডগ’ উন্মোচন করেছিল ২০০৫ সালে।
বাণিজ্যিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তৈরি প্রথম রোবট কুকুরের নাম ছিল ‘স্পট’, যার দাম প্রায় ৭৫ হাজার ডলার। তবে, এটি কেবল শিল্প কারখানা ও ওয়্যারহাউজের বিভিন্ন কাজের উদ্দেশ্যে বাজারজাত করেছিল কোম্পানিটি, যেখানে প্রাথমিক গবেষণায় নিজের পরীক্ষা চালানো ও বিভিন্ন নির্মাণাধীন অবকাঠামোর নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ডেটা সংগ্রহের জন্য ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে রোবটটি।
পরবর্তীতে বস্টন ডাইনামিক্স পরিষ্কার করে, তারা এই প্রযুক্তিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়টি সমর্থন করে না। সে সময় তারা প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকেও এই অঙ্গীকারে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল।
এর পরও বেশ কিছু কোম্পানি সামরিক কাজের উদ্দেশ্যে একই ধরনের বিভিন্ন স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম নিয়ে কাজ অব্যাহত রাখে। উদাহরণ হিসেবে, ২০২০ সালে প্রতিরক্ষামূলক কাজের উদ্দেশ্যে এ চার পায়া রোবট পরীক্ষা করেছিল মার্কিন বিমান বাহিনী।
গবেষকরা এরইমধ্যে সামরিক কাজে রোবট কুকুরের ব্যবহার নিয়ে একাধিক শঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন, যার মধ্যে রয়েছে এর খরচ ও নৈতিকতার বিষয়টিও।
এ বিষয়ে নানা মহল থেকে সমালোচনার মুখে পড়ে গত বছর পেন্টাগন বলে, বিভিন্ন অস্ত্রে এআই সক্ষমতার ব্যবহার মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘এআই এথিকাল প্রিন্সিপাল’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তবে, বিভিন্ন অধিকার সংগঠন ওই নির্দেশনাকে ‘অপর্যাপ্ত পদক্ষেপ’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।