কম্পিউটার বিজ্ঞানী অ্যালান কে’র মতে, ‘আপনার জন্মের পর থেকে উদ্ভাবিত সবকিছুই আসলে প্রযুক্তি।’
Published : 07 Apr 2024, 03:40 PM
প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ইতিহাস প্রচলিত ধারণার চেয়েও বেশি গভীর।
নিজের লেখা বই ‘ওয়াইজ অ্যানিমেলস’-এ এমনই যুক্তি দেখিয়েছেন দার্শনিক ও লেখক টম চ্যাটফিল্ড।
কম্পিউটার বিজ্ঞানী অ্যালান কে’র মতে, ‘আপনার জন্মের পর থেকে উদ্ভাবিত সবকিছুই আসলে প্রযুক্তি।’
বিষয়টি আংশিক সত্য, কাউকে এখন যুগান্তকারী প্রযুক্তির নাম জিজ্ঞেস করলে অনেকের মুখেই উঠে আসে এআই প্রযুক্তি, স্মার্টফোন বা ইন্টারনেটের মতো সাম্প্রতিক কোনো শব্দ। পাথরের হাতিয়ারের মতো পুরোনো হাতিয়ারের কথা এখন আর তেমন কেউ বলে না।
চ্যাটফিন্ডের মতে, মানুষ যদি আজকের প্রযুক্তিকে আরও ভালভাবে বুঝতে চায়, তবে এর সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। তার নতুন বই ‘ওয়াইজ অ্যানিমালস: হাউ টেকনোলজি মেইড আস হু উই আর’-তে চ্যাটফিল্ড যুক্তি দিয়েছেন, গত কয়েক লাখ বছরে প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষও সহ-বিবর্তিত হয়েছে।
তিনি আরও যোগ করেন, মানুষের পুরো গল্পই জড়িত রয়েছে উদ্ভাবনের সঙ্গে।
বিবিসি’র সঙ্গে কাজ করা চ্যাটফিল্ড সম্প্রতি কথা বলেছেন বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ডেভিড রবসনের সঙ্গে, যেখানে আলোচনার বিষয় ছিল প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের পূর্বসূরিদের সম্পর্ক। আর তা কীভাবে মানব মস্তিষ্কের অংশ হয়ে ওঠার মাধ্যমে বর্তমান সময়ের উন্নয়নে বড় প্রভাব ফেলছে।
‘ওয়াইজ অ্যানিমেলস’ লেখার অনুপ্রেরণা পেলেন কোথায়?
প্রযুক্তিকে ভালবাসা একজন হিসাবে আমি খুব হতাশ। কারণ, এর সম্পর্কে প্রায়ই এমনভাবে কথা বলা হয় যেন, মানুষ শুধু এর গ্রাহক যে কি না বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে বিভিন্ন ফিচারওয়ালা প্রযুক্তি কিনতে আগ্রহী।
আমরা যা কিছু করি তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রযুক্তি; হোক সেটা রাজনীতি, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, শিশু শিক্ষা কিংবা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ।
গবেষণার অংশ হিসাবে আপনি প্রাগৈতিহাসিক ও মানব বিবর্তনে গভীর নজর দিয়েছেন। প্রযুক্তির সঙ্গে আমাদের পূর্বপুরুষদের সম্পর্ক নিয়ে আমাদের কী জানা উচিৎ?
আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল— প্রযুক্তি আবির্ভূত হওয়ার নির্দিষ্ট কোনও মুহুর্ত আমরা আলাদা করে বলতে পারি না। তবে আমরা বলতে পারি, প্রযুক্তিগত সংস্কৃতি হোমো সেপিয়েন্সের মতো জমানার আগে থেকেই ছিল।
আপনার মতে, প্রযুক্তির সঙ্গে আমরা এখন এতটাই জড়িত যে তা আমাদের মস্তিষ্কের বর্ধিতাংশ হয়ে উঠেছে। তবে প্রশ্ন হল, এতে কী ধরনের নৈতিক সমস্যা দেখা দিতে পারে?
আমি দার্শনিক অ্যান্ডি ক্লার্ক ও ডেভিড চালমার্সের কাছ থেকে ধারণাটি একরকম ধার করেছি বলা যায়। তাদের যুক্তি, মানব মস্তিষ্ক বেশ কিছু উপায়ে আশপাশের পরিবেশে আক্ষরিকভাবে মিশে যায়।
তাই যখন আমি কিছু লিখি, এমনকি নিজের যখন আঙ্গুলগুলো গুনি, তখন আমি জ্ঞানের খোঁজ করছি। একই ঘটনা ঘটে কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে, যেখানে স্ক্রিনে থাকা বিভিন্ন আকার ম্যানিপুলেট করে আমি দেখি যে সেগুলো একসঙ্গে বা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ফিট হয় কি না। আর বিভিন্ন বুদ্ধিদীপ্ত কাজ সম্পাদনার জন্য আমি এ ধরনের সিস্টেমওয়ালা ডিভাইসে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি।
এ গবেষণাটিতে স্মার্টফোনের উত্থানের আগের কথা বলা হয়েছে। গবেষণাপত্রটি সে সময় এতটাই মৌলিক ছিল যে এর জন্য প্রকাশক খুঁজে পেতেও সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে, এখন এটি প্রায় সাধারণ জ্ঞানের মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি আপনার ফোনের ব্যাটারি ফুরিয়ে যায়, তখন আপনার মনের কিছুটা অংশও স্থবির হয়ে গেছে, এমন মনে হতে পারে।
প্রযুক্তি বিবর্তিত হলেও এর প্রাণ নেই। তবুও, সাম্প্রতিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এমনভাবে কাজ করে যেন এর মস্তিষ্ক আছে, যা আমাদেরকে অন্যরকম অনুভূতি দেয়। আপনি একে ‘নৃতাত্ত্বিক বিভ্রম’ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এটা আসলে কি? আর এটা বিপজ্জনক কেন?
নৃতাত্ত্বিকতার দুটি বিপদ আছে। প্রথমটি– আমরা মেশিনের সঙ্গে মানুষের মতো আচরণ করি। আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে আমরা এতে ব্যক্তিত্ব, উদ্দেশ্য ও বিভিন্ন চিন্তাভাবনা যোগ করি।
এইসব পদ্ধতি খুবই পরিশীলিত কারণ এগুলোতে মানব অনুভূতির মতো কিছু নেই। তবে, এদের মতো আচরণ করা বিপজ্জনক।
এটি খুবই শক্তিশালী, তবে এতে হ্যালুসিনেট করার ও এমন বিশদ বিবরণ তৈরির প্রবণতা আছে, যার কোনও অস্তিত্বই নেই। এরা প্রায়শই প্রশিক্ষণ ডেটাসেটের ভিত্তিতে বিভিন্ন পক্ষপাতদুষ্ট বা বর্জনমূলক জবাব দিয়ে থাকে। তবে যে কোনো বিষয়ে দ্রুত ও যুক্তিসঙ্গতভাবে সাড়া দিতে পারে এআই। আর মানুষের মধ্যে সত্যের সঙ্গে জবাব দেওয়ার গতি ও সম্ভাবনাকে মিলিয়ে ফেলার যে প্রবণতা দেখা যায়, তা খুবই বিপজ্জনক বিষয়।
টম চ্যাটফিল্ডের বই ‘‘ওয়াইজ অ্যানিমালস: হাও টেকনোলজি মেইড আস হু উই আর’-এর প্রকাশক যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি ‘পিকাডোর’।