এর সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘ব্ল্যাক মিরর’-এর একটি দৃশ্যের, যা দেখা গেছে ‘বি রাইট ব্যাক’ নামের পর্বে।
Published : 09 May 2024, 06:07 PM
যেসব এআই চ্যাটবট মৃত মানুষের ব্যক্তিত্ব অনুকরণ করে, তাদের প্রিয়জনরা বিভিন্ন এমন বিজ্ঞাপন দেখার ঝুঁকিতে আছেন, যেখানে ওই মৃত ব্যক্তিকে দেখা যাবে— এমনই সতর্কবার্তা দিয়েছেন গবেষকরা।
আর এ বিষয়টিকে তারা আখ্যা দিয়েছেন ‘আনওয়ান্টেড ডিজিটাল হন্টিং’ বলে।
‘বট’ হল এমন এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে সক্ষম। বিশেষ করে, ইন্টারনেট থেকে তথ্য খোঁজার ক্ষেত্রে।
কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি’র ওই গবেষণায় উঠে এসেছে, যেসব এআই চ্যাটবট ‘ডেডবট’ নামে পরিচিত, সেগুলোর বিভিন্ন ঝুঁকি এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন।
এর সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘ব্ল্যাক মিরর’-এর একটি দৃশ্যের, যা দেখা গেছে ‘বি রাইট ব্যাক’ নামের পর্বে। আর এতে বিভিন্ন কোম্পানি এরইমধ্যে এমন পরিষেবা চালু করেছে, যেখানে একটি চ্যাটবট দিয়ে মৃত ব্যক্তির কথা বলার ভঙ্গী ও ব্যক্তিত্ব নকল করা সম্ভব। গবেষণার তথ্য অনুসারে, এমনটি করতে চ্যাটবট সেইসব মৃত ব্যক্তির ‘ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট’ ব্যবহার করে থাকে।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ফিলসফি অ্যান্ড টেকনোলজি’তে প্রকাশিত এ গবেষণায় বিভিন্ন কোম্পানির এমন ডেডবট ব্যবহারের ঝুঁকির কথা উঠে এসেছে, যেগুলো মৃত ব্যক্তিকে অনুকরণ করে তার প্রিয়জনকে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে। এমনকি মা বাবা হারানোর যন্ত্রণায় ভোগা শিশুকে, তার মৃত অভিভাবক ‘এখনও পাশে আছে’, এমন অনুরোধ করেও বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে ডেডবটগুলো।
গবেষকরা বলছেন, যখন জীবিত কেউ তার মৃত্যুর পর ভার্চুয়াল উপায়ে বেঁচে থাকার ব্যবস্থায় সাইনআপ করেন, তখন বিভিন্ন কোম্পানি তার পরিবার ও বন্ধুদেরকে তাদের পরিষেবার অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন, রিমাইন্ডার ও আপডেট পাঠাতে চ্যাটবট ব্যবহার করতে পারে। আর একে ডিজিটাল উপায়ে ‘মৃত ব্যক্তির পিছু নেওয়া’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তারা।
এমনকি যারা প্রাথমিকভাবে নিজের কষ্ট কমাতে ডেডবট ব্যবহার করেন, তারাও দৈনন্দিন নোটিফিকেশনের কারণে ‘অত্যাধিক মানসিক চাপে’ পড়তে পারেন বলে যুক্তি দেখিয়েছেন গবেষকরা। আর এমন এআই সিমুলেশন বন্ধও করা যাবে না, যদি ওই মৃত ব্যক্তি মৃত্যুপরবর্তী কোনও ডিজিটাল পরিষেবায় দীর্ঘদিনের চুক্তি করে থাকেন।
ব্ল্যাক মিররের ‘বি রাইট ব্যাক’ পর্বে দেখা গেছে, একজন কষ্টে ভোগা বিধবা নারী এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন এক রোবটের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, যেটি তার মৃত স্বামীকে অনুকরণ করছে।
এআইয়ের নৈতিকতা নিয়ে কাজ করা কেমব্রিজের ‘লেভারহুলমে সেন্টার ফর দ্য ফিউচার অফ ইন্টেলিজেন্স’ বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছে ‘উচ্চ ঝুঁকি’ হিসেবে।
এ গবেষণার সহ-লেখক ড. টমাসজ হলানেক বলেন, “বিভিন্ন ডিজিটাল পরকাল পরিষেবার এ বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, তারা যাদেরকে নতুন করে বানাচ্ছে, শুধু তাদেরই নয়, বরং যারা এইসব সিমুলেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে, তাদের অধিকার ও অনুমতির বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।”
“এইসব পরিষেবা মানুষের জন্য বড় যন্ত্রণার কারণ হতে পারে, যেখানে প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিরা এআইয়ের মাধ্যমে অযাচিত ডিজিটাল হন্টিংয়ের শিকার হওয়ার মতো ভয়ঙ্কর ঝুঁকিতে আছেন।”
গবেষকরা বলছেন, যেসব প্ল্যাটফর্ম এআইয়ের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তিকে নতুন করে তৈরির সুবিধা দিচ্ছে, সেগুলোতে এরইমধ্যে ছোট পরিসরে আর্থিক ফি’র ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেমন- ‘প্রজেক্ট ডিসেম্বর’, যেটির শুরু হয়েছিল বিভিন্ন জিপিটি মডেল থেকে তথ্য নিয়ে। পরবর্তীতে এর নিজস্ব ব্যবস্থা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি ‘হিয়ারআফটার’ নামের একটি অ্যাপও চালু হয়েছে।
গবেষণার তথ্য অনুসারে, চীনেও একই ধরনের বিভিন্ন পরিষেবা চালু হতে দেখা গেছে।