Published : 15 Jun 2024, 04:09 PM
পুরুষদের তুলনায় নারী কর্মীদের বেতন কম দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি ক্লাস-অ্যাকশন মামলার মুখে পড়েছে মার্কিন টেক জায়ান্ট অ্যাপল।
কুপারটিনোভিত্তিক কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজেদের ক্যালিফোর্নিয়া দপ্তরের ১২ হাজারের বেশি নারী কর্মী পুরুষদের চেয়ে কম বেতন পাচ্ছেন।
স্যান ফ্রানসিস্কোর এক আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন এক দশকের বেশি সময় ধরে অ্যাপলে কাজ করা দুই নারী কর্মী। মামলায় অভিযোগ, কোম্পানির প্রকৌশল, মার্কেটিং ও অ্যাপল কেয়ার বিভাগ নারীদের পরিকল্পিতভাবেই কম বেতন দিয়ে থাকে।
এতে আরও বলা হয়, নারী কর্মীদের আগের চাকরির বেতন বা তাদের ‘প্রত্যাশিত বেতনে’র ভিত্তিতে বেতন দেয় অ্যাপল, যার ফলে তাদের বেতন তুলনামূলক কম হয়। আর অ্যাপলের ‘পারফরম্যান্স মূল্যায়ন পদ্ধতি’, যা মূলত কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি ও বোনাস নির্ধারণ করে থাকে, সেক্ষেত্রেও নারীদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হয় বলে উল্লেখ রয়েছে অভিযোগে।
এর বিপরীতে অ্যাপল বলেছে, “২০১৭ সাল থেকে অ্যাপল লিঙ্গভিত্তিক বেতন সমতা অর্জন করেছে ও তা বজায় রেখেছে। পাশাপাশি প্রতি বছর একজন স্বাধীন তৃতীয় পক্ষ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কাজ করে আমরা কোম্পানির প্রত্যেক সদস্যের মোট বেতন-ভাতা যাচাই করি এমনকি প্রয়োজন পড়লে আমরা তা সমন্বয় করে থাকি যাতে আমরা এ বেতনের সমতা ধরে রাখতে পারি।”
বাদীপক্ষের আইনজীবী ইভ কারভান্তেজ বলেছেন, অ্যাপলের বিভিন্ন ব্যবসায়িক চর্চা প্রচলিত লিঙ্গভিত্তিক বেতনের ব্যবধান কেবল বাড়ায়ই না, সেটা টিকিয়েও রাখে।
“অ্যাপলের নারী কর্মীদের জন্য এটি একটি নো-উইন অবস্থা, যেখানে তাদের জয়ী হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই,” বলেন তিনি।
মামলায় বাদীপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করছে ‘আউটটেন অ্যান্ড গোল্ডেন’, ‘কোহেন মিলস্টেইন সেলার্স অ্যান্ড টোল’ এবং ‘আল্টশুলার বার্জন’ নামের তিন আইনি সংগঠন, যারা এর আগেও এমন লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের অভিযোগ তুলে বিভিন্ন শীর্ষ কোম্পানিকে বড় ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করেছে।
এর মধ্যে রয়েছে গত বছর ব্যাংকিং কোম্পানি গোল্ডম্যান স্যাকস-এর সঙ্গে সাড়ে ২১ কোটি ডলারের ফয়সালা ও ২০২২ সালে স্টার্লিং জুয়েলার্সের সঙ্গে সাড়ে ১৭ কোটি ডলারে মামলা নিষ্পত্তির মতো ঘটনাও। তবে, সে সময় কোম্পানিগুলো নিজেদের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ নাকচ করেছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।
এদিকে, লিঙ্গ ও বর্ণের ভিত্তিতে বেতনের ব্যবধান বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ২০১৮ সাল থেকেই বিভিন্ন কোম্পানির নিয়োগকর্তাকে চাকরিপ্রার্থীদের বেতন ইতিহাস নিয়ে প্রশ্ন করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার এক আদালত।
বৃহস্পতিবার দায়ের করা এই মামলার তথ্য অনুসারে, বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য এর পরিবর্তে আবেদনকারীর ‘প্রত্যাশিত বেতনের ওপর নির্ভর করে’ অ্যাপল। তবে, বেশিরভাগ কর্মী যেহেতু অ্যাপলে আগের চাকরির চেয়ে কিছুটা বেশি অর্থ পেতে চান, তাই এ অনুশীলন মজুরি বৈষম্যকে স্থায়ী করার ওপর একই প্রভাব ফেলে বলে উল্লেখ রয়েছে মামলায়।
বাদীপক্ষের দাবি, যেসব কর্মীদের ‘প্রতিভা’ আছে বলে ধারণা করা হয়, তাদের বেশি বেতন দিয়ে পুরস্কৃত করে অ্যাপল।
এ মামলায় অ্যাপলের বিরুদ্ধে ক্যালিফোর্নিয়ার ‘ইকুয়াল পে’ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা লিঙ্গবৈষম্যের ভিত্তিতে বেতন দেওয়ার বিষয়টি নিষিদ্ধ করে। এমনকি, অঙ্গরাজ্যটির আইনে যৌন পক্ষপাত ও অন্যায্য ব্যবসায়িক অনুশীলনেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এর মধ্যে মামলার একজন বাদী জাস্টিনা জং অভিযোগ করেছেন, এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ জানানোর পরও অ্যাপল তাকে অন্য দলে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। তবে, মামলার ক্ষতিপূরণ ও জরিমানার পরিমাণ সম্পর্কে এখনও জানা সম্ভব হয়নি বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।