রোনালদোকে খেলাতে ভক্তদের শ্লোগান

লুসাইল স্টেডিয়ামে আসা রোনালদোর ভক্তরা তাদের প্রিয় তারকাকে খেলানোর দাবি জানাতে থাকেন যেন মিছিলের মতো।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরদোহা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2022, 05:34 AM
Updated : 7 Dec 2022, 05:34 AM

চমক কিংবা ধাক্কা যাই হোক না কেন, সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে দলের আগে দিলেন পর্তুগাল কোচ ফের্নান্দো সান্তোস। সেরা একাদশে নেই ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। ভাবা যায়? প্রিয় তারকাকে দেখার জন্য ভক্তেরা অস্থির হয়ে ওঠেন খেলা শুরুর বাঁশি বাজার আগেই। এরপর সময় গড়ায়, প্রথমার্ধ শেষ হয়, কিন্তু রোনালদোকে বদলি নামানোর নামগন্ধ নেই। সমর্থকদের সহ্যের সীমাও যেন বাঁধ ভাঙে। শুরু হয় ‘রোনালদো, রোনালদো’ শ্লোগান। 

মহাতারকাকে ছাড়া খেলতে নেমে মাঠে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দেয় পর্তুগাল। ৬-১ গোলে জিতে জায়গা করে নেয় কোয়ার্টার-ফাইনালে। 

সপ্তদশ মিনিটে এগিয়েও যায় তারা। জোয়াও ফেলিক্সের বাড়ানো বলে দুরূহ কোণ থেকে গনসালো রামোসের ফ্লিক কাছের পোস্ট ঘেঁষে জালে জড়ায়। গোলের উল্লাসে মেতে ওঠে গ্যালারি। রোনালদোর শূন্যতার অভাব যেন চাপা পড়ে কিছুটা, কিন্তু পুরোপুরি নয়। 

এরপর অনেকটা সময় মেলেনি গোল। রোনালদোকে খেলানোর দাবি যখন একটু একটু করে উচ্চকিত হচ্ছিল, তখনই ব্যবধান দ্বিগুণ করে পর্তুগাল। ৩৩তম মিনিটে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন তার দীর্ঘদিনের সতীর্থ পেপে। বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে সবচেয়ে বেশি বয়সী গোলদাতার খাতায় নাম উঠে যায় ৩৯ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডারের। বেঞ্চে থাকার হতাশা ভুলে রোনালদোও ছুটেন তাকে অভিনন্দন জানাতে। 

ম্যাচে সব মিলিয়ে ছয়বার সতীর্থদের গোলের উদযাপনে সঙ্গী হন পর্তুগাল অধিনায়ক। এমন দৃশ্য সবশেষ কবে দেখা গেছে, কে জানে? রোনালদো গোল করবেন, বাকিরা হবে উদযাপনের সঙ্গী-এই দৃশ্য দেখতেই তো অভ্যস্ত দুনিয়া। 

দিন বদলেছে, পর্তুগাল দলেও নতুনের আগমণী সুর বাজতে শুরু করেছে। প্রথমবারের মতো সেরা একাদশে খেলতে নেমে হ্যাটট্রিকের আলো ছড়িয়েছেন ২১ বছর বয়সী রামোস। 

দুই গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়ার পর নতুন আশায় বুক বাঁধতে থাকেন পর্তুগাল সমর্থকরা। এই বুঝি নামবেন তাদের প্রিয় তারকা। ৩৭ বছরের বয়সের ভার, সাম্প্রতিক সময়ের বিতর্ক তুড়ি মেরে উড়িয়ে ডানা মেলবেন আকাশে, এমন কত-শত ভাবনার উঁকি তাদের মনে। ৫১তম মিনিট রামোস এবং চার মিনিট পর গেরেইরোর গোলে স্কোরলাইন ৪-০ করে নেয় ২০১৯ সালের নেশন্স লিগের চ্যাম্পিয়নরা। 

এরই মধ্যে গা গরম করতে নামেন রোনালদো। ভক্তদের উদ্দেশে হাত নাড়েন। তার চাহনিতে বেঞ্চের ‘অসহ্য সময়’ পেছনে ফেলে মাঠে নামার মরিয়া চাওয়ার ছাপ স্পষ্টই বোঝা যায়। কিন্তু সান্তোসের সেদিকে যেন ভ্রুক্ষেপ নেই। ৬০তম মিনিটে সমর্থকদের ধৈর্যের বাঁধ যেন ভেঙে যায়। ‘রোনালদো, রোনালদো’ স্লোগানে কেঁপে ওঠে গ্যালারি। 

এক দফা গা গরম করে ডাগআউটের বসার জায়গায় ফিরে যান পাঁচবারের বর্ষসেরা খেলোয়াড়। গ্যালারিতে শুরু হয় কানাঘুষা-এবার বদলি নামবেন রোনালদো। কিন্তু এসব পর্তুগাল কোচের ভাবনায় ছাপ ফেলে না। দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচে দলের সেরা তারকার আচরণে অসন্তুষ্ট হওয়ার কথা সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেওয়া সান্তোস থাকেন নিজের ছকে। 

৬৭তম মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করে ইতিহাস গড়েন রামোস। ২০০২ সালে জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসার পর প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে প্রথমবার শুরুর একাদশে নেমে হ্যাটট্রিক করেন বেনফিকার এই ফরোয়ার্ড। দ্বিতীয় পর্তুগিজ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে হ্যাটট্রিক করে বসলেন ইউজেবিওর পাশে। ১৯৬৬ আসরে কোয়ার্টার-ফাইনালে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে তিনি করেছিলেন ৪ গোল। 

রামোসের গোল পর্তুগাল সমর্থকদের উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছে বটে, কিন্তু মহাতারকার খেলা দেখতে না পারার তৃষ্ণা মেটাতে পারেনি। তাই স্কোরলাইন ৫-০ হওয়ার পর ফের আওয়াজ ওঠে ‘রোনালদো, রোনালদো।’ অদূর বসে এক সমর্থক তো কোচের নাম ধরে হাঁক ছেড়ে বলেন, “সান্তোস, রোনালদো…।” কোচের কানে তা পৌঁছায় কিনা, কে জানে, তিনি ৭৩তম মিনিটে রোনালদোকে নামিয়ে পূরণ করেন জনদাবী। 

নেমেই ক্ষুধার্ত রোনালদো মরিয়া হয়ে ওঠেন গোলের জন্য। জালে বলও পাঠান, কিন্তু অফসাইডে থাকার কারণে গোল মেলেনি। তাই নকআউট পর্বে জালের দেখা না পাওয়ার বৃত্ত ভাঙা হয়নি রোনালদোর। তবে যতটুকু সময় মাঠে ছিলেন, মন ভরানোর মতোই ফুটবল খেলেছেন।