মিলিতাওয়ের ‘নো ইংলিশ, অনলি পর্তুগিজ’

নেইমারকে নিয়ে করা প্রশ্নে শুধু কৌতুকপূর্ণ হাসি দিলেন এদের মিলিতাও।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরদোহা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2022, 07:20 AM
Updated : 29 Nov 2022, 07:20 AM

মিক্সড জোনে ঢুকতেই এক ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন। কোন ভাষায় প্রশ্ন করবে, জানতে চাইছেন। উত্তর শুনে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা অনুযায়ী দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন লাইনে। এর ফাঁকে ফাঁকে ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘নো ফটো, নো ভিডিও।’ একটু পর এক এক করে আসা শুরু ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে কোনোমতে জিতে আসার স্বস্তি তাদের চোখে মুখে। 

স্টেডিয়াম-৯৭৪-এর মিক্সড জোনে শুরুতে এলেন মিডফিল্ডার ব্রুনো গিমারেস ও এদের মিলিতাও। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলে জেতা ম্যাচে শুরুর একাদশে ছিলেন মিলিতাও। কাতার বিশ্বকাপে রিয়াল মাদ্রিদের এই ডিফেন্ডারের প্রথম খেলতে নামা। সার্বিয়া ম্যাচে চোট পাওয়া দানিলোর জায়গায় তিতে বেছে নিয়েছিলেন তাকে। তেমন কঠিন কোনো পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে। তবে বিশ্বকাপে সুইসদের বিপক্ষে এই প্রথম ব্রাজিলের জাল অক্ষত রাখতে পারার পেছনে ভূমিকা আছে মিলিতাওয়েরও। 

সেই ১৯৫০ বিশ্বকাপে প্রথম দেখা দুই দলের। সেবার উরুগুয়ের কাছে ফাইনালে হেরে ‘মারাকানার কান্না’র করুণ গল্প লেখার আগে সাও পাওলোয় গ্রুপ পর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল-সুইজারল্যান্ড; ম্যাচের ফল ২-২ ড্র। ৬৮ বছর পর ফের দেখা রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে; এবারও জাল অক্ষত রাখতে পারেনি রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।

সেন্ট পিটার্সবুর্গের ম্যাচটি হয়েছিল ১-১ ড্র। 

দোহার স্টেডিয়াম-৯৭৪-এ তিতের দল নেমেছিল ‘সুইস গেট’ খুলতে। নিজেদের জালও অক্ষত রাখতে। ‍দুই চাওয়াই পূরণ হয়েছে। 

সার্বিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের গোলের অপেক্ষা ফুরিয়েছিল ৬৩তম মিনিটে। সুইজারল্যান্ড ম্যাচে সে সময় পেরিয়ে গেল, কিন্তু গোলের ‘ডেডলক’ খোলার নামগন্ধ নেই। নেইমার নেই বলে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের প্রথম ভালো আক্রমণটি শাণাতেই পার ২৬ মিনিট! পড়িমরি করে ভিনিসিউস স্লাইড করলেন বটে, কিন্তু গোলরক্ষক ইয়ান সমের ততধিক ক্ষিপ্রতায় আটকে দিলেন সে প্রচেষ্টা। 

প্রথমার্ধে আর কোনো বলার মতো আক্রমণ নেই ব্রাজিলের! সার্বিয়া ম্যাচে সুযোগসন্ধানী শটে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর মুগ্ধতা ছড়ানো ভলিতে ব্যবধান দ্বিগুণ করা রিশার্লিসন ৫৫তম মিনিটে টোকা দেওয়ার কাজটুকু করতে পারেননি। 

৬৪তম মিনিটে প্রথমবারের মতো দেখা মেলে ব্রাজিল ঝলকের। কয়েক পা ঘুরে পাওয়া বল জালে পাঠান ভিনিসিউস। উচ্ছ্বাসে নেচে ওঠে ব্রাজিল সমর্থকে ঠাসা গ্যালারি। কিন্তু বিধি বাম। অফসাইডের বাঁশিতে পরক্ষণেই সে হাসি নিমিষেই উবে যায় কর্পুরের মতো। ভিএআরে ধরা পড়ে নজর কাড়া এই আক্রমণের শুরুতে অফসাইডের ফাঁদে পা দিয়ে রেখেছিলেন রিশার্লিসন। 

ম্যাচ জুড়ে ব্রাজিল সমর্থকদের মনে চলতে থাকে এমন চাপান-উতোর। ভিনিসিউসের বডি ডজে সুইস ডিফেন্ডারদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে না, আগের ম্যাচের নায়ক রিশার্লিসন খুঁজে পান না আক্রমণের পথ, সার্বিয়া ম্যাচের চেয়ে একটু উজ্জ্বল থাকলেও রাফিনিয়া ঠিক পারেন না আস্থার উচ্চতায় উঠতে। নেইমারের বদলে সেরা একাদশে খেলার সুযোগ যেখানে লুফে নেওয়ার কথা ফ্রেদের, সেখানে তিনি নিজের ছায়া হয়ে ঘুর ঘুর করেন এদিক-ওদিক। প্রতিপক্ষকে ছিঁড়েকুড়ে খাওয়ার দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা যেন ফুটে ওঠে না কোনোভাবে। 

৮৩তম মিনিটে অবশেষে কাসেমিরো হয়ে আসেন ত্রাতারূপে। ভিনিসিউসের কাছ থেকে বল পেয়ে বুলেট গতির শটে দূরের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন ৩০ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। কিছুটা ভাগ্যের ছোঁয়াও পান তিনি। মানুয়েল আকনজির গায়ে আলতো স্পর্শ করে একটু দিক পাল্টানো বল ঠেকানোর কোনো সুযোগ পাননি ব্রাজিল গোলরক্ষক আলিসনের চেয়ে পোস্টের নিচে অনেক বেশি ব্যস্ত সময় কাটানো সমের। ড্রয়ের চোখ রাঙানি দূরে ঠেলে ব্রাজিলের জয়ের ঘ্রাণ যদিও মৌ মৌ করতে থাকে চারদিক, কিন্তু ঠিক শৈল্পিক ফুটবলের সুবাস থাকে না সেভাবে। 

মিক্সড জোনে রাজ্যের প্রশ্ন মাথায় নিয়ে পর্তুগিজ, স্প্যানিশ এবং ফরাসি ছাড়া ভিনদেশি গণমাধ্যম কর্মী যারা অধীর অপেক্ষায়, তাদেরও হতাশই হতে হয়। ওই তিন ভাষাভাষীদের প্রাধান্য বেশি, তাদেরই যেন প্রশ্ন শেষ হয় না। মিনিট পনের-কুড়ি তাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ইংরেজি অংশে এসে একটা-দুটো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ভাঙা-ভাঙা ইংরেজিতে দিয়ে পাশ দিয়ে হন হন করে অন্যদিকে চলে গেলেন মিলিতাও। বেশ দূরে গিয়ে এক পর্তুগিজ ভাষী সাংবাদিকের সঙ্গে ফের আলাপ জুড়ে দিলেন। 

বার দুয়েক ইশারায়-ইঙ্গিত করেও সাড়া না পেয়ে বেরিয়ে আসার পথে শেষবারের মতো চেষ্টা করা। নেইমার নেই বলেই কি….প্রশ্নটা শেষ করা হয় না। মিলিতাও কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্মিত হেসে শুধু বলেন, “নো ইংলিশ, অনলি পর্তুগিজ।”