দল সঠিক পথে আছে, দাবি কাবরেরার

সিশেলসকে দ্বিতীয় ম্যাচে হারাতে না পারার হতাশাও আড়াল করেননি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরসিলেট থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2023, 02:37 PM
Updated : 28 March 2023, 02:37 PM

সিরিজ জুড়ে ক্ষণে ক্ষণে জ্বলে উঠলেন জামাল-সোহেলরা। কেবল ধারাবাহিকতাই থাকল না! র‌্যাঙ্কিংয়ে সাত ধাপ পিছিয়ে থাকা সিশেলসকে হারাতে পারল না বাংলাদেশ। তাতে কোচ হাভিয়ের কাবরেরারও পূরণ হলো না অনেক চাওয়া। কিন্তু জাতীয় দলের এই স্প্যানিশ কোচের দাবি, সঠিক পথেই আছে তার দল। 

আগামী জুনের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ সামনে রেখে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলল বাংলাদেশ। গত শনিবার সিশেলসকে ১-০ গোলে হারিয়ে সিরিজ শুরু করেছিল দল। মঙ্গলবার দ্বিতীয় ম্যাচে হোঁচট খেল একই ব্যবধানে। সাদউদ্দিনের অবিশ্বাস্য ভুলের সুবাদে পেনাল্টি গোল হজম করে। 

এই দুই প্রীতি ম্যাচ ঘিরে বাংলাদেশের চাওয়া ছিল অনেক। তার মধ্যে একটি সাফের প্রস্তুতি শাণিয়ে নেওয়া। অন্যটি গত সেপ্টেম্বরে সবশেষ নেপালের বিপক্ষে ৩-১ গোলের ভরাডুবির ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া। 

প্রথম ম্যাচের জিতে জয়ে ফেরার লক্ষ্য অন্তত পূরণ করে বাংলাদেশ। যদিও সৌদি আরবে দশ দিন এবং এরপর সিলেটে এসে আরও সাত দিনের প্রস্তুতির ছাপ ছিল না খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে। দ্বিতীয় ম্যাচেও সে বিবর্ণতা থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেনি দল।

সিলেটের অসমান মাঠে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন ছিল দুই দলের জন্য। তবে নিজেদের মাঠে খেলতে নামা জামাল-তারিকদের কাছে সমর্থকদের চাওয়াটা ছিল বেশি। কাজী তারিক রায়হানের সৌভাগ্যপ্রসূত গোল প্রথম ম্যাচে সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছিল। 

ওই ম্যাচে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেকের অপেক্ষা ফুরায় এলিটা কিংসলের। নাইজেরিয়ান থেকে বাংলাদেশি হয়ে যাওয়া এই ফরোয়ার্ড দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নেমে সুযোগও পান, কিন্তু উড়িয়ে মেরে প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারেননি। 

দ্বিতীয় ম্যাচেও ৩৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড বদলি নামেন, কিন্তু প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের কোনো পরীক্ষা নিতে পারেননি। ৭৬তম মিনিটে সোহেল রানার ক্রস বক্সে পেয়েছিলেন কিংসলে, ছিলেনও ভালো জায়গায়। কিন্তু তার কোনাকুনি শট যায় দূরের পোস্ট দিয়ে বেরিয়ে।

এই সিরিজে কিংসলে ছাড়াও আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় লেফট-ব্যাক আলমগীর হোসেন মোল্লা ও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মজিবুর রহমান জনির। জনি পায়ের কারিকুরির ঝলক দেখিয়েছেন একটু-আধটু, কিন্তু পূর্ণতা দিতে পারেননি। প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার স্নায়ুর চাপ সামলেছেন, রক্ষণে কোনো ভুল করেননি। 

লম্বা বিরতির পর দ্বিতীয় ম্যাচে রবিউল হাসান এবং দুই ম্যাচ পর সুমন রেজাকে শুরুর একাদশে ফেরান কাবরেরা। ২৩তম মিনিটে সিশেলস গোলরক্ষক বরাবর জোরাল শট নেন রবিউল। সুমন অকারণ ছোটাছুটি করলেন কখনও বক্সের আশপাশে আবার কখনও মাঝমাঠেরও নিচে নেমে, পোস্টে কোনো শটই নেই তার।

মাঝমাঠে জামাল, সোহেল রানাদের শরীরী ভাষায় মরিয়া প্রচেষ্টার ছাপ ফুটে ওঠেনি সেভাবে। তুলনায় রক্ষণভাগে তারিক, তপু, রিমনদের পারফরম্যান্স ছিল কিছুটা উজ্জ্বল। 

দুই ম্যাচে পোস্ট সমালেছেন প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। প্রথম ম্যাচে সিশেলসের তৈরি করা একটা-দুটো ‘হাফ-চান্স’ আটকেছেন। দ্বিতীয় ম্যাচেও পোস্টের নিচে কাটান অলস সময়। একবারই পরাস্ত হয়েছেন, স্পট কিকে। 

দ্বিতীয় ম্যাচে হয় অনাকাঙ্ক্ষিত কাণ্ডও। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সঙ্গে বাহাসে জড়ান তপু। তাতে ডাগআউট থেকে ছুটে গিয়ে যোগ দেন বিশ্বনাথ ঘোষসহ আরও কয়েকজন। অবশ্য পরিস্থিতি গড়ায়নি বেশি দূর। 

অথচ সিশেলসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের জয়ের পর দারুণ কিছুর হাতছানি ছিল বাংলাদেশের সামনে। ২০১৯ সালে সবশেষ ভূটানের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচ জিতেছিল দল। সেই সুখস্মৃতির পুনরাবৃত্তিতে ব্যর্থ জামাল-কিংসলেরা। সিশেলসের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের লক্ষ্যও থাকল অপূর্ণ। 

সাদউদ্দিনের ভুল জামালের দৃষ্টিতে ‘স্টুপিডের মতো কাজ’। ড্র সিরিজের ফটো সেশনে ছবি তুলতে চরম অনীহা দেখা গেল ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন বাদশার মধ্যে। কারণ জানতে চাইলে ক্ষোভ উগরে দিলেন, “এই দলের কাছে হার মেনে নেওয়া যায় নাকি। এই সিরিজ আমাদের জেতা উচিত ছিল।” 

বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা অবশ্য খুঁজে নিতে চাইছেন ইতিবাচক দিক। 

“প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও আমরা সিশেলসের কাছ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করেছিলাম। শুরুর ১৫ মিনিটে আমরা খুব ভুগেছি। সিশেলস খুব শক্তভাবে শুরু করেছিল, যেটা আমাদেরকে সমস্যায় ফেলেছিল। ধীরে ধীরে আমরা ম্যাচে ফিরি এবং গোল হজমের মুহূর্তটি ছাড়া আমি দলের পারফরম্যান্স নিয়ে গর্বিত।” 

“দল সঠিক পথেই আছে। অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য ছিল দুটি ম্যাচ জেতা, যেটা পূরণ হয়নি। কিন্তু আমাদের জন্য অনেক অনেক ইতিবাচক দিক আছে এবং আমি মনে করি দল সঠিক পথে আছে, বিশেষ করে সামনে সাফ আছে, যদিও এ ম্যাচ হেরে আমরা দুঃখিত, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি দল সঠিক পথে আছে।”