হংকংয়ে না খেললেও তিন দিন পরই জাপানে মাঠে নামায় ক্ষুব্ধ সেখানকার ফুটবলপ্রেমীরা, জাতীয় নিরাপত্তা আইনে মেসির গ্রেপ্তার করার দাবি তুলছেন অনেকে।
Published : 08 Feb 2024, 11:18 AM
সময়ের সঙ্গে হংকংয়ে ক্ষোভের আগুন একটু একটু করে প্রশমিত হতে শুরু করেছিল। কিন্তু লিওনেল মেসিকে জাপানে খেলতে দেখে সেই আগুনেই আবার যেন ঘি পড়েছে। হংকংয়ের মাঠে মেসির খেলা দেখতে না পাওয়ার ‘বঞ্চনা’ মানতে পারছেন না সেখানকার সংবাদমাধ্যম ও ফুটবলপ্রেমীরা। ব্যাখ্যা দাবি করা হয়েছে এমনকি হংকংয়ের সরকারের পক্ষ থেকেও।
গত রোববার হংকংয়ে ইন্টার মায়ামির সেই প্রীতি ম্যাচে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের কারণে খেলতে পারেননি মেসি। তবে বুধবার জাপানে আরেকটি প্রীতি ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামেন আর্জেন্টাইন তারকা।
হংকংয়ের সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পর্যটন ব্যুরো এক বিবৃতিতে জানায়, ভক্তদের মতো তারাও হতাশ যে মেসিকে সেদিন মাঠে নামতে দেখা যায়নি।
"ইন্টার মায়ামির কোচ ৪ ফেব্রুয়ারি বলেছিলেন যে, চোটের কারণে মেসি খেলতে পারছেন না। অথচ হংকংয়ে না খেললেও তিন দিন পরই জাপানে খেলতে সক্ষম হয়েছেন মেসি। মাঠে বেশ সক্রিয়ভাবে বিচরণও করেছেন তিনি এবং মাঠে অনেক কিছুই বেশ তীব্রভাবে করেছেন।"
"সরকার তাই আশা করছে, ম্যাচটির আয়োজকরা এবং তার দল এটির গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেবেন। হংকংয়ের নাগরিকদের অনেক প্রশ্ন আছে।”
হংকংয়ে সেদিন ৪০ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। মূল আকর্ষণ যে ছিল মেসিকে ঘিরেই, সেটা তো আলাদা করে বলার প্রয়োজনই নেই। চীনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকার খবর, মূল ভূখন্ড থেকে ১২ ঘণ্টা ভ্রমণ করে মেসিকে দেখতে গিয়েছিলেন অনেকে।
৫ হাজার হংকং ডলারের (প্রায় ৬৫০ মার্কিন ডলার) টিকেট কেটে খেলা দেখেছেন অনেকে। মেসিকে সেদিন মাঠে না নামানোয় খেলা চলার সময়ই স্লোগান দিতে থাকেন দর্শকরা। ম্যাচের শেষ দিকে বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় অনেকে। টিকেটের টাকা ফেরত চেয়ে অনেকে গলা ফাটাতে থাকেন, ‘রিফান্ড…রিফান্ড।’
গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, “হংকংয়ের সরকার ও ফুটবলপ্রেমীদের ক্ষোভ পুরোপুরি বোধগম্য। এই ঘটনার প্রভাব আসলে খেলাধুলার আঙিনাকে ছাড়িয়ে অনেকটা বিস্তৃত হয়ে গেছে।”
জাপানে প্রায় ৬৯ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামে দর্শক ছিলেন সাড়ে ২৮ হাজার। তারাই সৌভাগ্যবান যে, মেসির খেলা দেখতে পেরেছেন। ম্যাচের ৬০তম মিনিটে নামানো হয় বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন জাদুকরকে।
গোলশূন্য ড্রয়ের পর ম্যাচটিতে টাইব্রেকারে হেরে যায় মেসির ইন্টার মায়ামি। সেখানে কোনো শট নেননি মেসি।
কিন্তু জাপানে মেসি মাঠে নামায় হংকংয়ে ক্ষোভের ঝড় বয়ে যাচ্ছে নতুন করে। হংকংয়ের ক্রীড়া আইনজীবি কেনেথ ফক এই ঘটনাকে বলছেন “হংকংয়ের সমর্থকদের জন্য কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা।”
সরকারের সিনিয়র উপদেষ্টা রেজিনা আইপি সামাজিকমাধ্যমে লেখেন, ‘ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিতভাবে হংকংকে বঞ্চিত করায় মেসি, ইন্টার মায়ামি ও তাদের পেছনের কালো হাতকে ঘৃণা করে হংকংয়ের মানুষ।”
হংকংয়ে মাঠে না নামার পর প্রচণ্ড ক্ষোভ দেখে ম্যাচের পর চীনের সামাজিকমাধ্যম উইবোতে চীনা ও স্প্যানিশ ভাষায় ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন লিওনেল মেসি।
“যারা আমাকে চেনেন, সবাই জানেন যে আমি সবসময়ই খেলতে চাই… বিশেষ করে এই ম্যাচগুলোয়, যেখানে আমরা অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে যাই এবং আমাদের খেলা দেখতে লোকে রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষায় থাকে। আশা করি, আমরা কখনও আবার এখানে ফিরে আসব ও হংকংয়ে ম্যাচ খেলতে পারব।”
সেদিনের ম্যাচের পর ইন্টার মায়ামির কোচ জেরার্দো মার্তিনো বলেছিলেন, মেসিকে নিয়ে সামান্যতম ঝুঁকি নেওয়ার উপায়ও ছিল না তাদের।
"হংকংয়ের মানুষদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ এবং মেসিকে খেলতে না দেখে তাদের হতাশাও আমরা বুঝতে পারছি। তবে তাকে কয়েক মিনিটের জন্য মাঠে নামানোও হতো বড় ঝুঁকির।"
কোচের ব্যাখ্যা বা মেসির সেই ক্ষমা প্রার্থনা যদি হংকংয়ের ক্ষোভ কিছুটা কমিয়েও থাকে, তা আবার উত্তাল হয়ে গেল জাপানে মাঠে নামার ঘটনায়।
ম্যাচটির লাইভ স্ট্রিমিংয়ে অনেকেই বলেন, "জাতীয় নিরাপত্তা আইনে মেসিকে গ্রেপ্তার করা হোক।"