বাংলাদেশ ফুটবল
জাহিদ হাসান এমিলি, মামুনুল ইসলাম ও রেজাউল করিম রেজা-এই তিন জনের প্রচেষ্টায় অনিশ্চয়তার মেঘ সরিয়ে দলবদল সেরেছে চট্টগ্রাম আবাহনী।
Published : 23 Aug 2024, 11:29 AM
‘খেলোয়াড়রা হয়তো ভালো ঘুম দিয়েছে, কেননা, ওরা দল পেয়েছে, কিন্তু আমরা এখন ঘুমাতে পারছি না’, বললেন জাহিদ হাসান এমিলি। সাবেক এই তারকা স্ট্রাইকারের ঘুম না হওয়ার কারণ, চট্টগ্রাম আবাহনীর দলবদল কার্যক্রমে অংশ নেওয়া। নানা অনিশ্চয়তার পর বন্দর নগরীর এই ক্লাবটির দলবদলের নেপথ্যে মূল ভূমিকায় থাকা তিন জনের মধ্যে এমিলি একজন। বাকি দুজন মামুনুল ইসলাম মামুন ও রেজাউল করিম রেজা।
রাষ্ট্রক্ষমতার পালাবদলের পর শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র আনুষ্ঠানিকভাবে দলবদল কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আগেই। চট্টগ্রাম আবাহনীও সেই পথেই ছিল। তাতে অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় শতাধিক ফুটবলারের ভবিষ্যৎ।
এই প্রেক্ষাপটেই এগিয়ে আসেন সাবেক ফুটবলার এমিলি, বর্তমানে খেলা চালিয়ে যাওয়া দুই সিনিয়র মামুনুল ও রেজাউল। চট্টগ্রাম আবাহনীকে শেষ মুহূর্তে রাজি করানো ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করার নেপথ্যের গল্পটাও এমিলি শোনালেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।
“আপনারা জানেন, দুইটা টিম (শেখ জামাল ও শেখ রাসেল) জানিয়ে দিয়েছিল, তারা খেলবে না। চট্টগ্রাম আবাহনী নিয়েও অনিশ্চয়তা ছিল। কাল রাত ১০টা পর্যন্তও তাদের অবস্থান ছিল, দলবদল না করার। তাতে ৩৫ থেকে ৪০ জন নিয়মিত খেলোয়াড় দল পাচ্ছিল না। এটা নিয়ে গত ছয়-সাত দিন আমরা চেষ্টা করছিলাম, যাতে সব দলগুলো খেলে। যদি এই দলগুলো না খেলে, তাহলে এই খেলোয়াড়েরা কোথায় যাবে?”
“আমাদের খেলোয়াড়দের একটা গ্রুপ আছে, প্লেয়ার অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ, সেখানে সবাই তাদের হতাশার কথা বলছিল। তখন আমি, মামুনুল ও রেজাউল ভাবলাম কোনোভাবে চট্টগ্রাম আবাহনীকে রাজি করানো যায় কিনা; কোনো এক ভাবে আমরা তাদেরকে রাজি করাতে পেরেছি। তারা বলেছে, যদি তোমারা নিজের দায়িত্বে দল গড়তে পারো, গড়ো। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, খেলোয়াড়রা আগে খেলুক, এরপর টাকা-পয়সা যেভাবে পারি ম্যানেজ করে ওদেরকে দেব। গতকাল নিবন্ধনের শেষ দিন ছিল। প্লেয়াররা ঢাকায় থাকায় আমাদের সুবিধা হয়েছিল। এক ঘণ্টার নোটিশে ওদের এনে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করেছি।”
শেষ মুহূর্তে এসে ৩৬ জন খেলোয়াড়ের ঠিকানা হয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। ২০২৪-২৫ মৌসুমে দলটি আসলে কীভাবে পরিচালিত হবে, কারা পরিচলানার নেতৃত্বে থাকবেন, এমিলি-মামুনুলদের সম্পৃক্ততা কেমন হবে, তা এখনও ধোঁয়াশায়। এমিলি জানালেন, এই দিকগুলো নিয়ে ভাবার মতো সময় ছিল না তাদের হাতে।
“এই দলের সঙ্গে আমাদের সংশ্লিষ্টতা এখনও আমরা ভাবিনি। ওই সময় এটা ভাবার মতো পরিস্থিতির মধ্যেও ছিলাম না। চট্টগ্রাম আবাহনী আমাদেরকে দায়িত্ব দেবে কিনা, তাও জানতাম না। ফর্ম কোথায় ছিল, জানতাম না।”
“ভাগ্য ভালো যে আরমান আজিজের (চট্টগ্রাম আবাহনীর গত মৌসুমের টিম ম্যানেজার) কাছে ক্লাব কর্মকর্তাদের সই করা ফর্ম ছিল, সে ফর্মগুলো দেওয়ায় আমরা নিবন্ধন কাজটা শেষ করতে পেরেছি। এখন একটু সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব, আমরা কি করব? তবে বড় পরিসরে আমাদের সংশ্লিষ্টতা থাকবে।”
ক্লাব পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অর্থ। খেলোয়াড়দের ঠাঁই দেওয়া হয়েছে, এখন তাদের আর্থিক নিরাপত্তার দিকটিও ভাবতে হচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকদের কাছে তাই এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে রাখলেন এমিলি।
“এখন প্লেয়ারদের রাখতে হবে, খাওয়াতে হবে, জার্সি, বুট, আনুষাঙ্গিক আরও অনেক খরচ আছে, সেগুলো নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। একটা ক্লাব চালানো তো সহজ কথা নয়, অনেক টাকা-পয়সার প্রয়োজন। স্পন্সরদের প্রতি আমার আন্তরিক অনুরোধ, আপনারা এগিয়ে আসুন।”
“খেলোয়াড় যারা নিবন্ধন করেছে চট্টগ্রাম আবাহনীতে, তাদের হয়তো ভালো ঘুম হয়েছে, কেননা, তারা দল পেয়েছে কিন্তু আমাদের ঘুম হয়নি। এখন আর্থিক বিষয় নিয়ে ভাবতে হচ্ছে আমাদেরকে। স্পন্সরদের প্রতি অনুরোধ ন্যুনতম সহযোগিতা তারা যেন আমাদের করেন।”