ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
গ্যারেথ সাউথগেটের কোচিংয়ে বড় আসরে দারুণ ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে ইংল্যান্ড, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রফি অধরাই রয়ে গেছে।
Published : 15 Jul 2024, 01:35 PM
আরও একবার স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। আরও একবার খুব কাছে গিয়েও না পাওয়ার যন্ত্রণা। গ্যারেথ সাউথগেটের হতাশার তীব্রতা সহজেই অনুমেয়। তবে পেশাদার কোচদের বাস্তবতা আরও বেশিই কঠিন। ফাইনাল হারের এই হাহাকারের মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে তার দায়িত্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তিনি অবশ্য এখনই এসব নিয়ে কিছু বলতে বা ভাবতে চান না।
ইংল্যান্ডের কোচ হিসেবে তার চুক্তির মেয়াদ আছে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে বিশ্বকাপ বা ইউরোর মতো বড় আসর শেষে কোচদের কাজের মূল্যায়ন হওয়াটাই বরাবরের রীতি। প্রত্যাশা সবটুকু পূরণ না হলে তো সেই প্রক্রিয়া আরও দ্রুততায় হয়ে যায়।
এমনিতে সাউথগেটকে ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল কোচদের একজন বলা যায়। সবচেয়ে ধারাবাহিক তিনি নিশ্চিতভাবেই। তার কোচিংয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে খেলেছে ইংল্যান্ড, গত বিশ্বকাপে পৌঁছেছে কোয়ার্টার-ফাইনাল পর্যন্ত। বিশ্বের সেরা ফুটবল লিগ হয় যে দেশে, সেই দেশ ইউরোর ফাইনালে খেলতে পারেনি যুগ যুগ ধরেনি। গত আসরে তারা প্রথমবার ফাইনালে খেলে সাউথগেটের কোচিংয়েই। সেই পথচলা এবার পৌঁছে গেল টানা দুই ইউরোতে।
গত এই ছয় বছরে এরকম ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেনি ইউরোপের আর কোনো দল। সাউথগেটের কোচিংয়ে ইংল্যান্ডের খেলার ধরন নিয়ে অনেক সমালোচনা-প্রশ্ন থাকলেও তার কার্যকারিতার প্রমাণ পারফরম্যান্সেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রফি জিততে না পারলে তো এসব অনেকটাই বৃথা।
তাকে তাই কোচের দায়িত্বে রাখা হবে কি না কিংবা তিনি নিজেও থাকবেন কি না, এই প্রশ্ন এখন উঠছেই। ইউরো শুরুর আগে জার্মানির ‘দা বিল্ড’-কে তিনি বলেছিলেন, ট্রফি জিততে না পারলে হয়তো দায়িত্বে থাকতে নাও পারেন।
স্পেনের বিপক্ষে ফাইনাল হারার পর ভবিষ্যতের প্রশ্নে আইটিভিতে সাউথগেট বললেন, “আমার মনে হয় না, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত সময় এখনই। দায়িত্বশীল লোকদের সঙ্গে কথা বলতে হবে আমার। এটা এখনকার ব্যাপার নয়।”
পরে সংবাদ সম্মেলনেও একই প্রশ্ন উঠল অবধারিতভাবেই। ৫৩ বছর বয়সী কোচের উত্তরই একই রকম থাকল।
“প্রশ্নটার কারণ আমি বুঝতে পারি এবং এটাও জানি, আপনার কেন এটা জিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন। তবে এই আলোচনাগুলি পর্দার আড়ালের গুরুত্বপূর্ণ লোকদের সঙ্গে করতে হবে আমার এবং অবশ্যই আগে এসব নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলব না আমি।”
বড় আসরে ধারাবাহিকতার সন্তুষ্টি আর ফাইনাল জিততে না পারার আক্ষেপ, দুটিই থাকল তার কণ্ঠে।
“কোনো সংশয় নেই, ইংল্যান্ডের দারুণ কিছু তরুণ ফুটবলার আছে। আমরা এখন ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছি, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। স্রেফ শেষ ধাপটা পার হতে পারছি না।”
ইংল্যান্ডের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম অবশ্য ফাইনালের আগেই জানিয়েছে, ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত সাউথগেটকে রাখতে চায় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। ফাইনালের আগে মিডফিল্ডার ডেক্লান রাইস জানান, গোটা দলের সমর্থন আছে সাউথগেটের প্রতি এবং তাকেই সবাই বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্বে দেখতে চান।
ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী মার্ক বুলিংহ্যাম ফাইনাল শেষে এই প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু বললেন না। তবে সাউথগেটের কাজে যে তারা খুশি, তা ফুটে উঠল তার কথায়।
“আমরা জার্মানিতে এসেছিলাম টুর্নামেন্ট জয়ের জন্য। চাইনি, শেষটা এরকম হোক। আজকে রাতে আমাদের সবারই কষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি গর্বিতও হওয়া উচিত আমাদের। ইংল্যান্ডের ছেলে ও মেয়েদের দল মিলিয়ে চার বছরের মধ্যে চতুর্থ বড় ফাইনাল এটি এবং আমাদের বড় ট্রফি জয়ের তাড়না আগের চেয়ে এখন আরও তীব্র।”
“গ্যারেথকে ধন্যবাদ দিতে চাই আমি, স্টিভ (হল্যান্ড, সহকারী কোচ), সব ফুটবলার, সাপোর্ট স্টাফের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। দেশের জন্য ট্রফি জিততে দারুণ নিবেদন ও কঠোর পরিশ্রম করছে তারা। এত কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত না পারায় আমাদের চেয়ে বেশি হতাশ তারাই।”