'মাঠ নেই বলে আর্জেন্টিনাকে না করে দিয়েছি', বললেন সালাউদ্দিন

সাম্প্রতিক সময়ে নানা বিতর্কিত মন্তব্যে, কর্মকাণ্ডে সমালোচনার মুখে পড়া বাফুফে সভাপতি বললেন, তার কপাল খারাপ।

ইদানিং নেতিবাচক খবরের কারণে প্রায়ই শিরোনামে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। কখনও সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদকের আর্থিক কেলেংকারির কারণে ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ায়, কখনও সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের বিতর্কিত ও আপত্তিকর মন্তব্যে। এমন টালমাটাল পরিস্থিতিতে দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থাটির প্রধান এবার দিলেন আরেক ‘না’ সূচক খবর- আগামী জুনে বাংলাদেশে আসছে না বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।

মেসি-দিবালাদের বাংলাদেশে আনতে না পারার কারণ হিসেবে সালাউদ্দিন জানিয়েছেন মাঠ সমস্যার কথা। যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল, সেটির সংস্কার কাজ শেষ হয়নি এখনও। এ বছরে কাজ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। তাই সবকিছু ‘প্রস্তুত’ থাকার পরও আর্জেন্টিনাকে না করে দিতে হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন সালাউদ্দিন।

“বিষয়টা ভেরি সিম্পল, যখন আর্জেন্টিনার সাথে আমাদের চুক্তি চূড়ান্ত হলো, কিন্তু আমরা দেখলাম আমাদের মাঠে প্রস্তুত হচ্ছে না, তখন আমরা একটা চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি-মাঠ কি প্রস্তুত হবে? কী পরিস্থিতি? যেহেতু এর আগে কাগজ-কলম ছাড়াই আলাপ চলছিল, কিন্তু মন্ত্রণালয় জানাল, মাঠ সামনের বছরের আগে প্রস্তুত হবে না। তখন আমরা আর্জেন্টিনার সঙ্গে চুক্তিটা বাতিল করলাম।”

“অবশ্যই (ওরা আসতে আগ্রহী ছিল), কিন্তু আমরা যখন কথা বলছিলাম, আমাদের একটা সন্দেহ ছিল (মাঠ নিয়ে), তখন কিন্তু ওপেনলি আমরা আর্জেন্টিনাকে বলে দিয়েছিলাম, তোমরা যদি অন্য কোথাও যেতে চাও, তাহলে তাদের সঙ্গে চুক্তি করতে পার। এখানে আর্থিক চুক্তি, টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনের চুক্তিই গ্রহণযোগ্য, তাই আমরা বলেছিলাম, দেখি মাঠের বিষয়টি আমরা চূড়ান্ত করতে পারি কিনা।”

জুনের ফিফা উইন্ডোতে আর্জেন্টিনাকে আনতে চেয়েছিল বাফুফে। যদিও বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন ছিল অনেক। খোদ আর্জেন্টিনার এক গণমাধ্যমকর্মী জানিয়েছিলেন, দুই পক্ষের মধ্যে কোনো আলোচনা না হওয়ার কথা। সালাউদ্দিন জানালেন, আর্জেন্টিনার আগ্রহে কমতি ছিল না। স্রেফ মাঠ সমস্যায় ভেস্তে গেছে এই উদ্যোগ।

“জুনের যদিও এখনও অনেক বাকি, কিন্তু আমাকে তো পেমেন্ট করতে হবে ওদেরকে। পেমেন্ট করার পর যদি আমার মাঠ প্রস্তুত না হয়, তখন তো আমি আরেক বিপদে পড়ব। পেমেন্ট এবং সবকিছুই আমাদের প্রস্তুত ছিল, কিন্তু মাঠ প্রস্তুত নেই।”

“আমাদের পৃষ্ঠপোষকরাও বলেছিল, পেমেন্ট পরিশোধের জন্য। তখন আমি ভেবে দেখলাম, যদি ওদের টাকাটা পাঠিয়ে দেই আর মাঠ প্রস্তুত না হয়, তখন তো আর টাকাটা ফেরত পাব না। তখনই চিঠি দিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম মাঠ প্রস্তুত হবে কিনা। তারা জানিয়েছে হবে না। এ নিয়ে তারা আরও কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছে, লাইট লাগাতে হবে, এটা-ওটা লাগাতে হবে, ইত্যাদি-ইত্যাদি। বলেছে, এত অল্প সময়ে মাঠ প্রস্তুত করা সম্ভব নয়। তখন আমি পৃষ্ঠপোষকদের বিষয়টি জানালাম এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে তাদের না করে দিয়েছি।”

গত মঙ্গলবার বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে সালাউদ্দিনের কিছু কথা রেকর্ড হয় এবং পরে চাউর হয়ে যায়। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের এবং তাদের পরিবার নিয়ে আপত্তিকর কথা বলতে শোনা যায় বাফুফে সভাপতিকে। পরে বিষয়টি নজরে আসায় তড়িঘড়ি করে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।

ওই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সালাউদ্দিন জানালেন তার ‘কপাল খারাপ’। ব্যক্তিগত আলাপচারিতা প্রকাশ্যে আসায় ভাগ্যকেই দুষছেন বাফুফে সভাপতি।

“কালকে আমরা নিজেরা বসে মজা করছিলাম, এটা ব্যক্তিগত, মিডিয়ার জন্য নয়। এটা টেপ করে ছড়িয়ে দিয়েছে। যখনই এটা আমার নজরে এসেছে, আমি সাথে সাথে শুনে যেটা সচারচর করি না (ভিডিও বার্তা দেওয়া), সেই ভিডিও করে বলেছি, আমরা ব্যক্তিগতভাবে মজা করছিলাম, এটা সবার জন্য নয় এবং টেপ করে নিয়ে গেছে। এই কথায় যদি কাউকে আঘাত দিয়ে থাকি, তাহলে আমি দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী। আর কী বলব?”

“একটা রেফারেন্স আমি দিচ্ছিলাম। এটা নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ হচ্ছিল। দেখুন, আমি আমার বেডরুমে বা ব্যক্তিগত জীবনে কী করি, সেটা বাইরে এলে জীবন কঠিন হয়ে যায়। আমি যদি প্রকাশ্যে বলতাম, তাহলে অবশ্যই অন্যায় হত এবং এটা যখন রেকর্ড করে পাবলিকলি দিয়ে দিয়েছে, আমি তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমা চেয়েছি এবং সেটা পাবলিকলি ক্ষমা চেয়েছি। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে বাইরে এসেছে। এটা ব্যক্তিগত মজা করা ছিল, কিন্তু আমার কপাল খারাপ।”

সালাউদ্দিনকে অনারারি সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার

গণমাধ্যমকর্মী এবং তাদের পরিবারকে উদ্দেশ করে ‘আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্যের কারণে অনারারি সদস্যপদ থেকে সালাউদ্দিনকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ)। ২০১২ সালে এই সাবেক তারকা ফুটবলারকে অনারারি সদস্যপদ দিয়েছিল ক্রীড়া সাংবাদিকদের এই সংগঠন।

সালাউদ্দিনের পদত্যাগ দাবি ডিআরইউ, বিএফইউজের

ওই ‘আপত্তিকর মন্তব্য’র কারণে সালাউদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করেছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)। বাফুফে সভাপতির মতো শীর্ষ পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই ‘গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে তারা।

সালাউদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজে’ও।