প্রায় এক মাস পর প্রকাশ্যে এসে যা বললেন ‘নিষিদ্ধ’ সোহাগ

আইনগত ‘বাধ্যবাধকতার কারণে’ অনেক কিছু বলতে পারছেন না বলেও জানান আবু নাঈম সোহাগ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2023, 01:55 PM
Updated : 10 May 2023, 01:55 PM

গত ১৪ এপ্রিল তাকে ফুটবলের সব কর্মকাণ্ড থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল ফিফা। বৈশ্বিক ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার ওই সিদ্ধান্তের পর এতদিন আড়ালে ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সে সময়কার সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। এতদিন পর আড়াল ভাঙলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরলেন তার শাস্তি পাওয়া এবং কোর্ট অব আর্বিট্রেশনে আপিল করা সংক্রান্ত নানা বিষয়। 

রাজধানী একটি হোটেলে বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেন সোহাগ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার পক্ষে লড়ে যাওয়া আইনজীবীরা। আইনজীবী দলের প্রধান আজমালুল হোসেন কিউসি (এ্যাডভোকেট এন্ড আরবিট্রেটর) আপিল ও শুনানির প্রক্রিয়া নিয়েও কথা বলেন। আশাবাদ জানান, অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাবেন সোহাগ। 

ফিফার এথিকস কমিটির গত ১৪ এপ্রিলে দেওয়া সিদ্ধান্তে বলা হয়, ফিফার ফান্ডের অপব্যবহারের কারণে সোহাগকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, বাফুফেকে দেওয়া ফিফার ফান্ডের খরচের হিসাব দিতে ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছে এবং ফান্ডের অর্থ খরচ সংক্রান্ত বিষয়ে বাফুফের দেওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে ফিফার তদন্তে এবং শুনানিতে গলদ ধরা পড়েছে। এ জন্য নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সোহাগকে ১০ হাজার সুইস ফ্র্যাঁ জরিমানাও করে সংস্থাটি।

সোহাগের দাবি, ফিফা ফান্ডের অর্থ চুরি বা অব্যবহারের কারণে নয়, তাকে ‘সর্বনিম্ন’ শাস্তি দেওয়া হয়েছে ক্রয়সংক্রান্ত বিষয়ে ‘ত্রুটি’ থাকার অভিযোগে। তবে আইনগত বাধার কারণে অনেক কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই বলেও জানান তিনি। 

“যেহেতু আমরা একটা আপিল প্রক্রিয়ার মধ্যে চলে গেছি, কোর্ট অব আর্বিট্রেশনে আবেদন করেছি, সেখানে যাওয়া পর্যন্ত…আমি আপনাদের সকলের সহযোগিতা চাইব। যেহেতু একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি, আমার লিগ্যাল কাউন্সিলদের দ্বারা যে পরামর্শ পেয়েছি, তাতে আমি আসলে খুব বেশি বলার মতো অবস্থায় নেই। কি বলতে কি বলব, কি বলে ফেলব, সেটা কিভাবে অনুদিত হবে…তখন ফিফা হয়ত আমাকে আবার বলবে-তুমি কেন কথা বললে? তুমি এগুলো নিয়ে কথা বলতে গিয়েছ কেন?” 

“বড়-বড় অভিযোগ কিন্তু ছিল। মিস অ্যাপ্রোপিয়েশন অব ফান্ড, বাংলায় যার অর্থ চুরি করা…সেখান থেকে মিস ইউজ, সেটার ব্যাখ্যা হচ্ছে অর্থের অপব্যবহার-এই অভিযোগগুলো কিন্তু তারা খারিজ করে দিয়েছে… এরপর তারা কিন্তু এটাও বলেছে যে, ক্রয়কৃত জিনিসগুলো বাফুফে পেয়েছে এবং সেগুলোর সার্ভিসও নিয়েছে। তারা স্বীকার করেছে, বাফুফে বাজারমূল্য থেকে বেশি মূল্যে জিনিসগুলো কিনেনি। তারা স্বীকার করেছে, বাফুফের যে নিয়ম, যে খাত দিয়ে বল কিনতে হয়, যে খাত দিয়ে জার্সি কিনতে হয়, সেগুলো নির্দিষ্ট ফরোয়ার্ড ফান্ডের মধ্যে থেকে ক্রয় করা হয়েছে এবং জনাব সোহাগের ডিসিপ্লিনারি সংক্রান্ত বিষয়ে অতীত রেকর্ড স্বচ্ছ্ব থাকায় ফলসিফিকেশনের জন্য ফিফার যে ধারা, সেখান থেকে সর্বনিম্ন শাস্তি তারা দিয়েছে।” 

২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাফুফের ক্রয়সংক্রান্ত বিষয়ে অসঙ্গতি ধরা পড়ে ফিফার তদন্তে। ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি বাফুফে করে ২০২১ সালে ডিসেম্বরের। সোহাগের দাবি, এই কমিটি গঠনের আগ পর্যন্ত যে কোনো ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে ফিফাকে আগে থেকে অবহিত করে এবং তাদের ‘অনুমোদন’ নিয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতেন তারা। এই যুক্তিতে নিজের দায় দেখছেন না তিনি, যদিও আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে নিজেকে সরাসরি ‘নির্দোষ’ দাবিও করছেন না সোহাগ। 

“আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাইব। এই যে একটা অভিযোগ দেশের জন্য, ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য… এটা যেন ওভারকাম করতে পারি। আপনাদের সকলের এবং দেশের সম্মান যেন বজায় রাখতে পারি। সত্য প্রকাশিত হবেই। আমি দোষী নাকি নির্দোষ-এই প্রশ্নের জবাবে সময়ই বলে দেবে।” 

ফিফা দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাফুফে এরই মধ্যে সোহাগের জন্য দরজা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে সোহাগ কথা বলতে রাজি হননি। 

কোর্ট অব আর্বিট্রেশনে আইনি কার্যক্রম চালানো ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আইনজীবী আজমালুল জানান, খুবই কম পারিশ্রমিক নেওয়ার কথা।