প্যারিস অলিম্পিকস
প্যারিস অলিম্পিকসের ১০০ মিটার স্প্রিন্টের হিট শনিবার; নামবেন বাংলাদেশের দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমান।
Published : 02 Aug 2024, 07:37 PM
ইমরানুর রহমানের চোখ-মুখ দেখে তার ভেতরটা অনুমান করা কঠিন। অভিব্যক্তিতে ততটা ফুটে ওঠে না রোমাঞ্চ, সেখানে পেশাদারিত্বের ছাপ বরং বেশি স্পষ্ট। তবে হৃদয়ে তার রোমাঞ্চের ঝড় বইছে ঠিকই। চুল-টুল ছেঁটে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছেন। আত্মবিশ্বাসও আছে প্রবল। বাংলাদেশের দ্রুততম মানব সব দিক থেকেই প্রস্তুত অলিম্পিকসের ট্র্যাকে নামার জন্য।
প্যারিস অলিম্পিকসের অ্যাথলেটিকসে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি ইমরানুর শনিবার নামবেন ট্র্যাকে। দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞে প্রথমবার এসেছেন তিনি ওয়াইর্ল্ড কার্ড পেয়ে।
তিনি শুধু দেশের দ্রুততম মানবই নন, বছর দেড়েক ধরে তাকেই বলা যায় বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকসের মুখ। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাজাখস্তানে এশিয়ান ইনডোরে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে সোনা জিতে গড়েছিলেন দেশের অ্যাথলেটিকসে অনন্য কীর্তি। এশিয়ান পর্যায়ে অ্যাথলেটিকসের সোনা বাংলাদেশের সেটিই প্রথম এবং এখনও পর্যন্ত শেষ।
এ বছর যদিও সেই সোনা ধরে রাখতে পারেননি। তবে গত দেড় বছরে এশিয়ান ও বিশ্ব পর্যায়ে সামর্থ্যের কিছু ঝলক তিনি দেখিয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে তো তিনি একরকম অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দেশের অ্যাথলেটিকসে সামান্য যেটুকু আশা, তা আপাতত কেবল ইমরানুরকে ঘিরেই।
তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা যদিও ইংল্যান্ডে। সেখানেই নিজেকে গড়েছেন। নিজস্ব কোচও আছে তার, বাংলাদেশের আর দশটা কোনো অ্যাথলেট তা কল্পনার সীমানায়ও আনতে পারেন না। তবে তার সবকিছু দেশের বাইরে হলেও দেশের পতাকা যে হৃদয়ে লালন করেন, সেটা দেড় বছর আগের সেই সোনা জয়ের পর থেকে বারবারই বলেছেন। তখন বলেছিলেন, “দেশের বাইরে লাল-সবুজ পতাকা ওড়াতে পেরে আমি উচ্ছ্বসিত। আরও কিছু করতে চাই দেশের জন্য।’
কিছু করার সুযোগ এখন তার সামনে। যদিও বাংলাদেশের বাস্তবতায় এত বড় মঞ্চে নজর কাড়ার মতো কিছু করা অসম্ভবের কাছাকাছি। তবে অন্তত ভালো টাইমিং করে দেশের অ্যাথলেটিকসে একটু প্রাণের সঞ্চার করা, নিয়ত আশা-নিরাশার দোলাচলে থাকা দেশের অসংখ্য অ্যাথলেটকে কিছুটা হলেও উজ্জীবিত করার সুযোগ তার সামনে আছে।
ইমরানুর নিজেও তাড়নাটা অনুভব করছেন। অনেক দিন ধরেই বার্মিংহামে অনুশীলন করে আসছেন তিনি। যথেষ্ট ঘাম ঝরিয়েছেন, এই প্রচেষ্টায় ওজনও কমেছে কিছুটা। শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশ চাঙা আছেন। অলিম্পিক ভিলেজে শুক্রবার বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বললেন, ট্র্যাকে নামতে তর সইছে না তার।
“খুবই রোমাঞ্চিত আমি। নামতে মুখিয়ে আছি। প্রথম রাউন্ড কালকে সাড়ে ১০টায়, চেষ্টা করব পরের রাউন্ডে পা রাখতে এবং সেখান থেকে এগিয়ে যেতে।”
“অনুশীলন ঠিকঠাক হয়েছে। প্রস্তুতি ও সবকিছু নিয়ে কোচের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে, কোচও এখন এখানে আছেন। কালকে ইভেন্টের জন্য আজকে (শুক্রবার) দুপুর ৩টায় শেষ অনুশীলন সেশনে যাব প্র্যাকটিস অ্যারেনায়।”
ট্র্যাকের লড়াইয়ে নামার আগে প্রস্তুতি-পর্বে নিজের কোচকে পেয়ে বাড়তি আত্মবিশ্বাসের রসদ পেয়েছেন তিনি।
“প্রস্তুতি এবং শেষ সময়ের চূড়ান্ত ছোঁয়াটুকুর জন্য কোচের পাশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ, আত্মবিশ্বাস ও প্রেরণা মেলে এতে।”
গত আগস্টে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বিশ্ব অ্যাথলেটিকসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে বাংলাদেশের প্রথম অ্যাথলেট হিসেবে হিটে প্রথম হয়েছিলেন তিনি। সময় যদিও লেগেছিল ১০.৫০ সেকেন্ড। পরের রাউন্ডে ১০.৪১ টাইমিং করলেও সেমি-ফাইনালে উঠতে পারেননি। পরের মাসেই এশিয়াডে ১০.৪৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেমি-ফাইনালে উঠেছিলেন।
দেশের রেকর্ড গড়েছেন তিনি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ১০.২৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে। এছাড়াও লন্ডনে একটি ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় ১০.১১ সেকেন্ড সময়ে শেষ করেছিলেন তিনি।
লন্ডনের ওই টাইমিংয়ের কাছাকাছি তিনি অলিম্পিকে করতে পারলেও তা হবে দারুণ কিছু। টাইমিং নিয়ে অবশ্য সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি। প্যারিসের ট্র্যাকে তার লক্ষ্য প্রতিটি ধাপ ধরে যতটা সম্ভব সামনে এগিয়ে যাওয়া।
“এই প্রতিযোগিতায় যত দূর সম্ভব, যেতে চাই আমি। সেটাই সবার লক্ষ্য। প্রতিটি রাউন্ড ধরে এগোতে চাই। একটিতে সফল হলে পরেরটিতে তাকাতে চাই।”
এই প্রচেষ্টায় যদি সফল হতে পারেন ইমরানুর, নতুন স্বপ্নের রঙ লাগবে হয়তো দেশের অ্যাথলেটিকসেও।