নির্বাচন ব্যবস্থা বিশ্লেষক জেসমিন টুলীর কাছে একই সময়ে স্থানীয় সরকারের ৫টি প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনকে ‘গণ্ডগোলের মত বিষয়’ মনে হচ্ছে।
Published : 21 Apr 2025, 01:49 AM
স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে মেয়র ও চেয়ারম্যান পদে সরাসরি ভোটের বিধান বাদ দিয়ে শুধু সদস্য বা কাউন্সিলর পদে ভোটের সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।
একইসঙ্গে সময় ও অর্থ বাঁচানোর জন্য স্থানীয় সরকারের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একই তফসিলের অধীনে করার সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিটির প্রস্তাব হল, আনুমানিক ৪০ দিনের জন্য একক তফসিল হবে। সেই তফসিল অনুযায়ী দেশকে কয়েকটি ভৌগলিক এলাকায় ভাগ করা হবে। প্রত্যেক ভাগের ভোটাররা একই দিনে ভোট দিয়ে সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন।
সেজন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃথক পাঁচটি আইন বাদ দিয়ে একক আইন করার সুপারিশ করা হয়েছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।
কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে প্রতিবেদন তুলে দেন। পরে তিনি ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন জনগণের সরাসরি ভোটে না করে প্রথমে সদস্য বা কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত করা হবে। পরে নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সদস্যদের ভোটে চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচন করা হবে।
সদস্য বা কাউন্সিলর পদে পূর্ণকালীন সদস্যের পাশাপাশি খণ্ডকালীন সদস্য রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় সরকারি চাকরিজীবীরাও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে সদস্য বা কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগ পাবেন।
এখনকার মত প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া ঠিক রেখে একই দিন সব প্রতিষ্ঠানের ভোটগ্রহণ কঠিন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
নির্বাচন ব্যবস্থা বিশ্লেষক জেসমিন টুলীর কাছে একই সময়ে স্থানীয় সরকারের ৫টি প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনকে ‘গণ্ডগোলের মত বিষয়’ মনে হচ্ছে।
এমন হলে ভোট দিতে একজন ভোটারের আধা ঘণ্টার মত সময় লেগে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক এই অতিরিক্ত সচিব।
এখনকার বাস্তবতায় এই সুপারিশ বাস্তবায়ন ‘কঠিন’ বলে মনে করছেন সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম শহীদ খানও।
তবে, শুধু যদি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচন হয় এবং তার ভোটে পরের ধাপের প্রতিনিধি নির্বাচন হয়- তাহলে এ সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব বলে তার ধারণা।
নির্বাচন ব্যবস্থায় পরিবর্তন কোন যুক্তিতে?
স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থায় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যবস্থার মত বিবেচনা করার কথা বলেছেন সংস্কার কমিশনের প্রধান।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচন করা হয়, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হয় না। এখানেও সব স্তরে (ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন) শুধু সদস্য ও কাউন্সিলর নির্বাচন হবে। একই তফসিলে এই নির্বাচন করা যাবে। এরপর সভাপতি নির্বাচন করা হবে।
“এটি হল বিধানিক অংশ। এরপর সভাপতির সভাপতিত্বে চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচন করা হবে। তারপর চেয়ারম্যান বা মেয়র তিনজন বা পাঁচজনের একটি পূর্ণকালীন কাউন্সিল করবেন। তারা পূর্ণকালীন কাজ করবেন এবং পূর্ণকালীন বেতন-ভাতা পাবেন। আর বাকি যারা আসবেন, তারা খণ্ডকালীন। তারা স্থায়ী কমিটির সভাপতি-সদস্য হবেন।”
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঁচটি আইনকে একীভূত করার সুপারিশ করে তোফায়েল কমিশন বলেছে, স্থানীয় সরকারের পাঁচ প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের জন্য পৃথক পাঁচটি আইন রয়েছে। রয়েছে শতাধিক অধস্তন আইন, অসংখ্য বিধি ও প্রজ্ঞাপন।
“এই আইনের জঞ্জাল স্থানীয় সরকার কার্যকরের একটি প্রধান বাধা। তাই কমিশন এই পাঁচটি আইনকে একটি সমন্বিত আইনে একীভূত করার সুপারিশ করছে।”
ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের জন্য একটি একক আইনের খসড়াও প্রস্তুত করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশের সারসংক্ষেপে।
একক তফসিলে ভোটের সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এই একীভূত আইনটি অধ্যাদেশ আকারে জারি হলে একটি একক তফসিলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একসাথে করা সম্ভব হবে।”
তোফায়েল আহমেদ বলেন, “পাঁচটি আইন রয়েছে। একটা আরেকটা প্রতিরূপ বা সাংঘর্ষিক অনেক ক্ষেত্রে। সব আইনগুলোকে পর্যালোচনা করে সবগুলো আইনকে এক জায়গায় নিয়ে আসছি।”
একক তফসিলে নির্বাচনের সুপারিশ করার ব্যাখ্যা দিয়ে কমিশন প্রধান বলেন, “একই দিনে বলছি না, একক তফসিলে বলছি। দেশটাকে বিভিন্ন ভৌগোলিক অংশে ভাগ করে একই তফসিলে ভোট করে ফেলতে পারবেন।
“পাঁচটা ইলেকশনের মধ্যে ৩টা জাতীয় নির্বাচনের মত। ইউনিয়ন, উপজেলা এবং পৌরসভা নির্বাচন। এটা জাতীয় নির্বাচনের যে আয়োজন, সেই একই রকমের আয়োজন হয়ে যায়।”
সেটা এড়ানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “একটা দেশে একটা সরকারের অধীনে পাঁচ বছর ধরে নির্বাচন হতে থাকে। নির্বাচন মানে কিছুটা অস্থিরতা, কিছু অশান্তি, কিছু বিশৃঙ্খলা এবং কিছু কর্মসময় ওখানে চলে যায়।
“আমরা হিসাব করে দেখেছি, প্রায় ২২৫ দিন সময় চলে যায় এই নির্বাচনগুলো করতে গিয়ে। এবং তারপরও অনেক হতাহত, জখম বহু কিছু হয়। এই নির্বাচন পদ্ধতিটাকে সহজ করা দরকার।”
তোফায়েল আহমেদ বলেন, “যদি এই পদ্ধতিতে আসি আমরা, তাহলে একটা তফসিলে ৪০ দিনের তফসিল দিয়ে আপনি ৫ বছরের নির্বাচন করে ফেলতে পারবেন। একটা সরকারের শুরুতেই এই নির্বাচনটা হলে, পাঁচ বছর সরকার কাজ করবে। আর কোনো নির্বাচন লাগবে না।
“ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন- ওই সরকারের পুরো মেয়াদেই কিন্তু সরকারের সঙ্গে কাজ করতে পারবে। বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা, পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা- এগুলো সবাই একসাথে কাজ করত পারবে।”
এর মাধ্যমে সরকারি খরচেরও সাশ্রয় হবে মন্তব্য করে এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বলেন, “২০২১-২৪ সালে যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো হয়েছে, এতে সরকারের ২৩০০ কোটি টাকার মত খরচ হয়েছে। এই খরচটা ৬০০-৭০০ কোটি টাকায় চলে আসবে। সময় ৪০ দিনে নেমে আসবে।
“আর (নির্বাচনি দায়িত্বে) লোক নিয়োগ করা হয়েছিল ১৯ লাখের বেশি। এটা ৯ লাখে নেমে আসবে। এটা একটা মৌলিক সংস্কার হবে বলে মনে করি আমরা।”
সুপারিশ কি বাস্তবসম্মত?
ভোটদানের সময় এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনার হিসাব বিবেচনায় নিয়ে এই সুপারিশ বাস্তবায়ন কঠিন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এখনকার মত কয়েক পদের ভোট হলে সেটা কঠিন হওয়ার কথা তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানে একজন ভোটার পাঁচটারও বেশি ব্যালট পেপারে একই টাইমে সিল দেবেন। আমার কাছে মনে হয় এটা একটু বেশি উচ্চাভিলাষী ধারণা পোষণ করছে (কমিশন), বাস্তবে এটা করা খুব টাফ।”
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, একজন ভোটারকে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভার জন্য আলাদা আলাদা ব্যালটে ভোট দিতে হবে। তাতে ভোটারপিছু আধা ঘণ্টাও লেগে যেতে পারে।
২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ এবং উপজেলা নির্বাচন এক সঙ্গে করার চিন্তা করা হলেও প্রশাসন ও পুলিশের তরফে ‘এটা বাস্তবসম্মত নয়’ বলে মতামত আসায় সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কথা বলেন জেসমিন টুলী।
সেই সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এরজন্য এত কেন্দ্র বাড়াতে হবে… বাড়ানো প্লাস আসলে আমার কাছে মনে হয় না এটা খুব একটা বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত।
“তারপর তো কাউন্টিং আছে। শুধু ভোট দেওয়া তো না। ব্যালটগুলাকে সর্টিং করা, কাউন্টিং করা, রেজাল্ট দেওয়া…।”
বর্তমান কাঠামোতে এ ধরনের সুপারিশ বাস্তবায়ন ‘সম্ভব না’ হলেও শুধু মেম্বার বা কাউন্সিলর নির্বাচন হলে একই দিনে ভোট করা সম্ভব বলে মত দিয়েছেন সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম শহীদ খান।
কাঠামো ও আইন পরিবর্তন করে সংসদীয় পদ্ধতির মত হলে এটা ‘সম্ভব’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এই পদ্ধতিতে সমস্যা হতে পারে। তবে যদি সরকার ব্যবস্থা নেয় তাহলে সমস্যা হবে কেন? আমরা এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কথা যদি চিন্তা করি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটাররা তো চেয়ারম্যানকে একটা ভোট দেয়। তারপরে নারী আসনের জন্য একটা ভোট দেয়। আর সংসদের জন্য একটা ভোট দেয়। মানে তিনটা ভোট দেয়।
“এখন যদি ইউনিয়ন পরিষদ যে কাঠামো আছে, এই কাঠামোতে যদি আমরা পরিবর্তন আনি, ইউনিয়ন পরিষদে প্রথমে শুধু সদস্য নির্বাচিত হবে। তারপর সদস্যরা পার্লামেন্টের সিস্টেম থাকবে। চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন। তাহলে ভোটারকে একটা ভোট দিতে হচ্ছে। আর দুইটা ভোট থাকছে।”
সেক্ষেত্রে উপজেলা ও পৌরসভার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, সে বিষয়টি তুলে ধরে এই বিশ্লেষক বলেন, “কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে। কাঠামোতে পরিবর্তন আনলে এটা একদিনে করা সম্ভব।”
তবে বর্তমান কাঠামোতে সেটা ‘সম্ভব না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বর্তমান কাঠামো রাখলে তো আর এত রিফর্ম হবে না।
‘স্থানীয় সরকার কমিশন’ গঠনের যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা ‘দরকার’ বলে মনে করেন আবু আলম শহীদ খান।
তিনি বলেন, “এরকম কমিশন করা যেতে পারে এবং এটা করার দরকার। কারণ আমাদের স্থানীয় সরকার বিভাগ বর্তমানে যেভাবে চলছে তাতে আমাদের অনেক ধরনের সংস্থার প্রয়োজন আছে।”
সাবেক এ সচিবও মনে করেন, স্থানীয় সরকারের পাঁচ প্রতিষ্ঠানের জন্য একই আইন হওয়া ‘উচিত’।
“এখনকার মত ভিন্ন ভিন্ন আইন, ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা… তাতে একটা অসুবিধা হয়। যেমন ধরেন উপজেলা পরিষদের আইনে কী আছে। উপজেলা পরিষদে সংসদ সদস্য তাদের উপদেষ্টা। এটা অন্য কোনো আইনে নাই। মিউনিসিপালিটির ক্ষেত্রে নাই। তার ফলে কী অসুবিধা হচ্ছে, সেটা সবাই দেখেছি।
“তখন সংসদ সদস্য উপজেলা পরিষদের উপরে প্রভাব বিস্তার করে। উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে তিনি পুরাটাই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। তাই একটা আইন থাকলে, একই রকম আইন থাকলে একই রকম পরিষদ হবে। এইভাবে কাজটা বেটার হবে।”
কমিশনের আরও যা সুপারিশ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ৫১টি সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। এসব সুপারিশে নির্বাচন পদ্ধতি ছাড়াও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার রাজস্বনীতি ও কর্মপরিধিতে আমূল পরিবর্তন আনার সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইউনিয়ন ও উপজেলায় চেয়ারম্যান না রেখে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে কাউন্সিল বা পরিষদ গঠন।
কমিশন প্রধান তোফায়েল আহমেদ বলেন, “আদিমতম রাষ্ট্র হচ্ছে স্থানীয় সরকার। ব্রিটিশ আমল থেকে এর পরিচালন নীতি ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখনও সেটা বলবৎ, ডিসি অফিস এর নিয়ন্ত্রণ করে। এখনকার সরকার ব্যবস্থাটা রেডিক্যাল (আমূল) চেইঞ্জ করতে হবে। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে গণতান্ত্রিক রূপ দিতে বলেছি।”
তিনি বলেন, এখন ইউনিয়ন, উপজেলা পরিষদ এবং এ ধরনের স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের হাতে অধিকাংশ ক্ষমতা থাকে। সদস্যদের হাতে তেমন ক্ষমতা থাকে না। সেজন্য নির্বাচন থেকে চেয়ারম্যান পদ বাদ দিতে বলেছে কমিশন। তার বদলে নির্বাচিত সদস্যরেই তাদের পরিষদ প্রধান নির্বাচিত করবে।
“প্রয়োজনে ছোট পরিসরের একটি পর্ষদ গঠন হবে। তাহলে স্থানীয় সরকার পরিচালনায় সব নির্বাচিত প্রতিনিধি ভূমিকা রাখতে পারবেন। এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা যাবে না।”
জনসংখ্যা বিবেচনায় ওয়ার্ডের সদস্যদের সংখ্যা সর্বনিম্ন ৯ রেখে ৩৯ পর্যন্ত করার বিধান রাখার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন।
স্থানীয় সরকারের অর্থায়ন পদ্ধতিতে সংস্কার আনার পরামর্শ দিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, নিজস্ব সম্পদ বৃদ্ধি ও ব্যয়ের খাত বাড়ানোর পরিকল্পনা করতে হবে। অর্থায়নের একটা বড় অংশ দেবে কেন্দ্রীয় সরকার।
“কেন্দ্রীয় সরকার এখন মোট জাতীয় বাজেটের দশমিক ৫ শতাংশের কম ব্যয় করে স্থানীয় সরকারের পেছনে, এটা বাড়াতে হবে। কারণ জনগণ কেন্দ্রীয় সরকারকেও কর দিচ্ছে। এক তৃতীয়াংশ মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট স্থানীয় সরকারকে দিতে হবে। অর্থ ব্যয় নজরে রাখতে হবে।”
জনশক্তির কর্ম বণ্টনের ক্ষেত্রেও কমিশন বেশ কিছু সংস্কারের প্রস্তাব করেছে জানিয়ে তিনি বলেন বলেন, “একই দায়িত্ব স্থানীয় সরকার আবার কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়া আছে। কিন্তু স্থানীয় সরকারকে বাজেট দেওয়া হয় না, কাজ দেওয়া হয়। (সুপারিশে বলা হয়েছে) ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ন্যস্ত সরকারি কর্মচারীদের বেতন স্থানীয় সরকার দেবে। সেজন্য কেন্দ্র থেকে অর্থ বরাদ্দ থাকবে।”
তোফায়েল আহমেদ বলেন, “উপজেলায় ১৭টা সরকারি দপ্তর আছে, ইউনিয়নে সাতটা মন্ত্রণালয়ের নয়জন কর্মকর্তা কাজ করেন। কিন্তু এখানে কোনো তৎপরতা নেই, কাজ নেই, বাজেট নেই। এগুলো সক্রিয় করতে হবে।
“ইউনিয়নে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল করতে হবে। যেখানে তিনজন ডাক্তার থাকবেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন ডাক্তার থাকার কথা, কিন্তু থাকছেন না। সরকার এটা চালাইতে না পারলে প্রাইভেটাইজেশন করুক।”
স্থানীয় বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব দিয়ে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপজেলায় ফৌজদারি ও দেওয়ানি পূর্ণাঙ্গ আদালত স্থাপন করতে হবে। এটা নতুন কিছু নয়, এর চর্চা এক সময় ছিল। গ্রাম আদালতের ‘অপব্যবহার’ হচ্ছে। মানুষ সলিশে ফিরে গেছে।
কমিশনের প্রস্তাব হল- গ্রাম আদালত বিলুপ্ত করতে হবে। উপজেলায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআর কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে বিচার চালানোর প্রয়োজন নেই। থানায় সালিশের নামে আদালত বসানো হয়, এটা বন্ধ করতে হবে।
স্থানীয় সরকারের জনবল নিয়োগ ও বেতনের জন্য একটা নিয়োগবিধি করার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার ৭০ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ৩০ শতাংশ বেতন দেবে। গ্রাম পুলিশ ও টাউন পুলিশ গঠন করতে হবে।
কমিটি যেসব সুপারিশ করছে, তার মধ্যে একক আইন প্রণয়ন ছাড়া বাকিগুলো নির্বাহী আদেশ বা সুপ্রিম কোর্টের আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মত দেন তোফায়েল আহমেদ।
আরো পড়ুন
নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠনের প্রস্তাব কমিশনের
স্কুল পর্যায় থেকেই সংস্কার পাঠ্য হওয়া উচিত: প্রধান উপদেষ্টা
স্থানীয় সরকার সংস্কার: চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার হাতে