জলবায়ু পরিবর্তন ও ভারী তুষারপাতের মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা আরও সাধারণ বিষয় হয়ে উঠলে সুনির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে আরও তীব্র ভূমিকম্প দেখা যাবে।
Published : 17 May 2024, 02:52 PM
দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞানীদের প্রচলিত ধারণা, সাধারণত পৃথিবীর পৃষ্ঠের নিচে থাকা বিভিন্ন প্লেটের নড়াচড়ার কারণে ভূমিকম্প হয়।
তবে ‘ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)’র সাম্প্রতিক এক গবেষণা বিজ্ঞানীদের সে ধারণায় নতুন মোড় এনেছে।
এমআইটি’র গবেষণা অনুসারে, ভূমিকম্প কখন ও কীভাবে হয়, তাতে প্রভাব থাকতে পারে ভারী তুষারপাত ও বৃষ্টির মতো ঘটনার।
বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ প্রকাশিত এ গবেষণায় ফুটে উঠেছে, জলবায়ু ও ভূমিকম্পের মধ্যে একটি সংযোগ আছে। বিশেষ করে, উত্তর জাপানের নোটো উপদ্বীপে ভূমিকম্পের গতিবিধি নিয়ে করা সাম্প্রতিক গবেষণায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে।
এ অঞ্চলটিতে এমন অভিজ্ঞতা দেখা গেছে, যাকে ‘ভূমিকম্পের ঝাঁক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যেখানে ভূমিকম্প শুরুর মূল ধাক্কা ছাড়াই চলমান কম্পনের একটি সিরিজ দেখা যায় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
মজার বিষয় হল, ধারণা করা হচ্ছে, এইসব ঝাঁকের যোগসূত্র আছে বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী আবহাওয়ার সঙ্গে।
এমআইটি’র সহকারী অধ্যাপক ও এ গবেষণার অন্যতম লেখক উইলিয়াম ফ্রাঙ্কের ব্যাখ্যানুসারে, ভারী তুষারপাত বা বৃষ্টির ভর ভূগর্ভস্থ চাপকে পরিবর্তন করতে পারে, যা পৃথিবী চলাচলের গতিবিধিতেও প্রভাব ফেলে।
এর কারণ হল, ওই বাড়তি ভর পৃথিবীর ফাটলে থাকা ভূগর্ভস্থ তরলের চাপ বাড়ায়, যা পরবর্তীতে গিয়ে ভূমিকম্পের রূপ নিতে পারে।
এই তত্ত্ব পরীক্ষা করতে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি নোটো উপদ্বীপের এক দশকেরও বেশি সময়ের ভূমিকম্পের তথ্য দেখেছে গবেষণা দলটি। তারা লক্ষ্য করেন, ভূমিকম্পের সময়ের সঙ্গে তীব্র বৃষ্টিপাতের সময়ের সম্পর্ক আছে, বিশেষ করে ভারী তুষারপাতের ক্ষেত্রে।
কীভাবে এমন পরিবেশগত পরিবর্তন গত এগারো বছরে ভূগর্ভস্থ চাপে প্রভাব ফেলতে পারে, একটি পরিশীলিত মডেল ব্যবহার করে গবেষকরা সে বিষয়টি অনুকরণ করেছেন এ গবেষণায়।
এতে দেখা যায়, ভূগর্ভস্থ চাপের বিভিন্ন পরিবর্তন এ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাওয়া সিসমিক তরঙ্গের গতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলে যায়, যেখানে প্রভাব রয়েছে পৃথিবীর ভূগর্ভস্থ কাঠামোর।
আর এতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, ভূমিকম্পের সঙ্গে চরম তুষারপাতের দৃঢ় সংযোগের বিষয়টি। মডেলটিতে দেখা গেছে, ভূমিকম্পের ঝাঁকের সময়ের সঙ্গে ব্যাপক মিল রয়েছে ভারী তুষারপাতের সময়কালের।
গবেষণাটি থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও ভারী তুষারপাতের মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা আরও সাধারণ বিষয় হয়ে উঠলে সুনির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে আরও তীব্র ভূমিকম্প দেখা যাবে। আবহাওয়া ও ভূমিকম্পের মধ্যে এ সংযোগ শুধু জাপানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বিশ্বের অন্যান্য অংশেও এমনটি ঘটতে পারে।