চাঁদে এই অভিযানকে নাসার মঙ্গল গ্রহে অভিযানের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
Published : 29 Aug 2022, 05:00 PM
নতুন চন্দ্র্রাভিযানের মধ্য দিয়ে মহাকাশের আরও গভীরে পৌঁছানোর প্রস্তুতি পর্বে উড্ডয়নের অপেক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নতুন রকেট।
অ্যাপোলো মিশনে চন্দ্রপিঠে অবতরণের ৫০ বছর পর আবারও মানুষকে চাঁদে নিয়ে যাবে নাসার মিশন আর্টেমিস।
এই মিশনের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে স্পেস লঞ্চ সিসটেম, যাকে সংক্ষেপে এসএলএস বলা হচ্ছে। এটাই এখন পর্যন্ত নাসার সবচেয়ে আধুনিক মহাকাশ যান।
চাঁদে এই অভিযানকে নাসার মঙ্গল গ্রহে অভিযানের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সোমবার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্থানীয় সময় ৮টা ৩৩ মিনিট অর্থ্যাৎ বাংলাদেশ সময় সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৩ মিনিটে রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হবে।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে পৌঁছে রকেটটি একটি টেস্ট ক্যাপসুল ছুড়ে দেবে। এই টেস্ট ক্যাপসুলের নাম ওরিয়ন।
ওরিয়ন চাঁদে যাচ্ছে ছয় সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে একটি বড় অক্ষে এটি চাঁদের চারপাশে ঘুরবে। কাজ শেষে স্পেসক্রাফটটি পৃথিবীতে প্রশান্ত মহাসাগরে নেমে আসবে।
স্পেস লঞ্চ সিসটেমে করে ওরিয়ন এরই মধ্যে লঞ্চ প্যাডে বসানো হয়েছে। এর যান প্রত্যাশামাফিক কাজ করছে বলে জানাচ্ছে নাসা।
তবে এই মিশনে চাঁদে শুধু ওরিয়ন যাচ্ছে, মানুষ নয়। ২০২৪ সালে চাঁদে মানুষ পাঠাতে চায় নাসা।
নাসার নভোচারী রেন্ডি ব্রেসনিক বলেন, “আর্টেমিস এক মিশনে আমরা যা কিছুই করছি, তা আসলে আতস কাচে নিজেদের প্রমাণ করে নেওয়া। আর তাতে আর্টেমিস দুই মিশনের ঝুঁকি কমে আসবে।”
আগামী সপ্তাহেও রকেট উৎক্ষেপণের বেশ কয়েকটি সুযোগ রয়েছে নাসার হাতে। তবে এই মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র চাইছে, সোমবারের সুযোগ ব্যবহার করে দ্রুত রকেট উৎক্ষেপণ করতে।
বছরের এই সময়ে ফ্লোরিডার আবহাওয়া বেশ নাটকীয় আচরণ করে। হুটহাট করেই বজ্রঝড় বয়ে যায় উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের আশপাশ দিয়ে। কিছুদিন আগে লঞ্চপ্যাডের বজ্রনিরোধক টাওয়ারেও বজ্রপাত হয়েছিল।
একটু সকাল সকাল আবহাওয়া শান্ত থাকে, আর সে কারণেই সোমবার সকালকে বেছে নেওয়া হয়েছে এ মিশন সূচনার জন্য।
আবহাওয়াবিদ মেলডি লোভিন বলেন, “আসলে ঠিক সকাল সাড়ে ৮টার পর ৮০ শতাংশ সুযোগ থাকবে এই মিশনের জন্য সুবিধাজনক আবহাওয়া পাওয়ার।”
রকেট উৎক্ষেপণের জন্য দুই ঘণ্টা সময় হাতে রেখেছে নাসা। যদি কোনো যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দেয় এর মধ্যে, তাহলে হয়ত এদিন উৎক্ষেপণের সম্ভাবনা ৬০ শতাংশে নেমে আসবে।
বিশেষ করে যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে রকেট ছোড়ার পরিকল্পনা স্থগিত করতে হবে নাসাকে।
#Artemis I update: Launch is currently in an unplanned hold as the team works on an issue with engine number 3 on the @NASA_SLS core stage. Operations commentary continues at https://t.co/z1RgZwQkWS https://t.co/mFyoeRMC6q
— NASA (@NASA) August 29, 2022
আর্টেমিস কি অ্যাপোলোর উত্তরসূরি?
১৯৬৯ সালে চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত নভোচারী নেইল আর্মস্ট্রং এবং কিছুক্ষণের মধ্যে বাজ অলড্রিন চাঁদের পিঠে নেমে আর্মস্ট্রংয়ের সঙ্গে যোগ দেন। মহাশূন্যে মানব সভ্যতার চিহ্ন পৌঁছে দিয়ে মহাকাশ অভিযানের স্বর্ণযুগের সূচনা করে ওই মুহূর্ত।
৫০ বছর পর চাঁদকে আবারও নতুন করে ছুঁয়ে দেখতে চলেছে মানব জাতি। আর যারা অ্যাপোলো মিশনের সাক্ষী হতে পারেননি, আর্টেমিস মিশন তাদের প্রবলভাবে অনুপ্রাণিত করবে।
নতুন এই মিশন একটু ভিন্ন রকম হবে। নাসা আগামীতে প্রথম নারী ও প্রথম ভিন্ন বর্ণের কাউকে চাঁদে পাঠাবে। এর পেছনে কারণ একটাই- মহাকাশ সবার জন্যই উন্মুক্ত।
চাঁদের পিঠে অবতরণ দিয়ে নাসা নতুন এক যুগের সূচনা করতে চাইছে আসলে। আগামীতে মঙ্গলের বুকে মানুষকে নিয়ে যেতে চায় নাসা। আর ওই অভিযান নিশ্চিতভাবে মানবজাতির ইতিহাসে আরেক বিরাট মাইলফলক হবে।