মাদারীপুরে স্ত্রীকে নির্যাতন মামলায় আইনজীবী কারাগারে

মামলার এজাহারে বলা হয়, যৌতুকের টাকা না পেয়ে ৮ মাস বয়সী শিশুকন্যাকে রেখে স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন ওই আইনজীবী।

মাদারীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2023, 01:05 PM
Updated : 1 June 2023, 01:05 PM

মাদারীপুরে স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় আইনজীবী স্বামীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে ওই ট্রাইব্যুনালের পিপি মোসলেম আলী আকন জানান।

আসামি ঢাকা জজ আদালতের আইনজীবী কাওসার আহমেদ মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার কাজী বাকাই ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাউতলী গ্রামের বাসিন্দা।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, দুবছর আগে মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকার এক ভ্যানচালকের মেয়ের সঙ্গে পারিবারিকভাবে কাওসার আহম্মেদের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছু দিন পর থেকে কাওসার যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন স্ত্রী ও শ্বশুরকে। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে শ্বশুর ৩ লাখ টাকা কাওসারের হাতে তুলে দেন। কিছুদিন পর কাওসারের স্ত্রীর এক কন্যাসন্তান জন্ম হয়।

গত ১৪ মার্চ কাওসার ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে স্ত্রীকে চাপ দিতে থাকেন। 

কিন্তু যৌতুকের টাকা না পেয়ে আট মাস বয়সী শিশুকন্যাকে রেখে স্ত্রীকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন কাওসার।

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, এরপর থেকে বাদী ও তার পরিবার কাওসারের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে পারেনি।

কোনো উপায় না দেখে সন্তানকে ফেরত পেতে শেষ পর্যন্ত আদালতের দারস্থ হন কাওসারের স্ত্রী।

মামলার বাদী বলেন, “আমি স্বামীর সাথে সংসার করতে চাইছিলাম। কিন্তু আমার স্বামী যৌতুকের জন্য মারধোর চালাত। অনেক কষ্ট করে মুখ বুজে সহ্য করছিলাম। কিন্তু টাকার জন্য ওনি আমার দুধের বাচ্চাটারে রেখে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। ঘটনার প্রায় তিন মাস হয়ে গেছে কিন্তু আমার বাচ্চার কোনো খোঁজ নাই। বাচ্চাটা বেঁচে আছে না মেরে ফেলেছে, আমি কিছুই জানি না। আমি আমার বাচ্চারটারে ফেরত চাই। সে (কাওসার) আমাকে না জানিয়ে আরেকটা বিয়ে করছে। আমি তার শাস্তি চাই।”

মামলার বাদীর ছোট বোন বলেন, “আমরা শিশুবাচ্চাকে ফেরত চাই ও মামলার আসামির অপরাধের শাস্তি চাই।”

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. গোলাম কিবরিয়া হাওলাদার বলেন, “আমি এই মামলার একজন আইনজীবী হিসেবে বলব, আসামি কাওসার এখন থেকে প্রায় আড়াই মাস আগে ৮ মাসের শিশু বাচ্চাকে রেখে বাদীকে তাড়িয়ে দেন। সে বাচ্চা কোথায় আছে, কেমন আছে, তার কোনো উত্তর দিতে পারে নাই।”

মাদারীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মোসলেম আলী আকন বলেন, “আসামি বলছে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে; কিন্তু তার স্ত্রীর কাছে কোনো নোটিস আসে নাই। আসামি সবচেয়ে বড় অপরাধ করেছে ৮ আট মাসের শিশুটিকে রেখে দিয়ে। আইনে আছে ১৮ বছর (প্রাপ্তবয়স্ক) না হওয়া পর্যন্ত সন্তান মায়ের কাছে থাকবে।”