“আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন এবং এই উপজেলায় একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
Published : 20 Apr 2024, 10:04 PM
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম সারোয়ার আবারও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
তিনি কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনের সংসদ সদস্য এবং জেলা অাওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের আপন ছোট ভাই।
টানা তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন।
শনিবার দুপুরে পাশের লালমাই উপজেলার দুতিয়াপুরে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে চতুর্থবারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
এ সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ভাতিজা লালমাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শাহীন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিনহাদুল হাসান রাফি, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রহিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন চৌধুরী, মো.আতিকুর রহমান তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন।
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়-স্বজনদেরও প্রার্থী হতে নিষেধ করেছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘দলীয় কোন্দল নিরসন’ এবং নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক’ করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন।
গোলাম সারওয়ার কী কারণে প্রার্থী হয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে সে বিষয়টি উল্লেখ করে করেছেন। পাশাপাশি তার প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনার পরও নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গোলাম সারওয়ার সাংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সদর দক্ষিণ উপজেলাবাসী ও আমার সকল নেতাকর্মীর চাপে দলের বিভাজন দূর করার জন্য, দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এবং মাননীয় সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামালের মানসম্মান রক্ষার্থে আমি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
“আশা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন এবং এই উপজেলায় একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এটা আমার প্রত্যাশা।”
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের এ সভাপতি বলেন, “স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের এক যৌথ সভার সিদ্ধান্তে আমাকে চেয়ারম্যান প্রার্থী পদে নাম ঘোষণা করেছে। অনলাইনে আমি চেয়ারম্যান পদে আবেদন করেছি। ইতোমধ্যে আমি দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনি কাজ শুরু করেছি।
“এরই মধ্যে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল হাই বাবলু কুমিল্লা-৬ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের আর্শীবাদ নিয়ে এবং প্রতিদিন মহানগর থেকে শত শত মোটর সাইকেল ও গাড়ির বহর নিয়ে সদর দক্ষিণ উপজেলায় মহড়া দিচ্ছেন। তিনি মোবাইল ফোন ও সভা সমাবেশে প্রকাশ্যে আমার নেতাকর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন, আমার পক্ষে কাজ করলে এলাকা ছাড়া করবেন বলে।”
তিনি বলেন, “আবদুল হাই বাবলু এবং তার পক্ষের লোকেরা হুমকি দিয়ে বলছ, আমার পক্ষে কাজ করলে দক্ষিণের কোনো নেতাকর্মী শহরে প্রবেশ করতে পারবে না। হাসপাতালে সেবা নিতে পারবে না। তাদের পা কেটে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে।”
“এছাড়া আমাদের আসনের মাননীয় এমপি আ হ ম মুস্তফা কামালকে নিয়ে অপমানজনক কথাবার্তা বলেছেন তারা। তারা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। এসব ঘটনায় ভোটাররা আতঙ্কিত। তারা নির্বাচনে পেশিশক্তি প্রয়োগ করতে চায়। এ বিষয়ে আমি প্রশাসনকে অবহিত করেছি।”
সুষ্ঠু নির্বাচন বাস্তবায়নে আমি প্রশাসনের সহযোগিতা চাই উল্লেখ করে এ চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, “আমি ১৫ বছর এ উপজেলায় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। তাই আমিও সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে আমার জনপ্রিয়তা যাচাই করে দেখতে চাই।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল হাই বাবলু বলেন, “আমি দলের ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতা হওয়ায় আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং সভা-সমাবেশে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। কিন্তু উনার পক্ষেতো কেউ কথা বলে না। তিনি জনশূন্য হয়ে পড়েছেন; তাই হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে আবোল-তাবোল বকছেন।
“এছাড়া তার পক্ষে কয়েকজন যারা আছেন, তারা ত্যাগী আওয়ামী লীগার না। আমরা তো উনার মতো হাইব্রিড নেতা না। যার কারণে আমরা মাঠে গেলেই নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে থাকে। এছাড়া এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়নি।”
গোলাম সারওয়ার সংবাদ সম্মেলন করেছেন এবং তিনি যা বলেছেন সবই বানোয়াট কথা বলেও দাবি আবদুল হাই বাবলুর।
বাবলু বলেন, “আমিতো অনেক দূরের বিষয়; তিনিতো সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশ অমান্য করে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়েছেন। এর মানে তিনি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন।
“আমি বা আমার নেতাকর্মী কাউকে হুমকি দেইনি। বরং তিনি নিজেই বলছেন, যারা আমার পক্ষে কাজ করেন তাদের তালিকা করে অ্যাকশানে যাবেন।”