হাই কোর্টের নির্দেশে বলাইশিমুল মাঠে ঘর নির্মাণ বন্ধ থাকবে: ইউএনও

‘ইউএনওর সঙ্গে সাংবাদিকের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে’

নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2022, 12:54 PM
Updated : 16 August 2022, 12:54 PM

হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে নেত্রকোণার বলাইশিমুল মাঠে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন কেন্দুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)মাহমুদা বেগম।

মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বলাইশিমুল মাঠে ঘর নির্মাণ নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। সেই নির্দেশনা মেনেই আপাতত কাজ বন্ধ থাকবে।”

“তবে আমরা এই নির্দেশনার বিরুদ্ধে আপিলে যাব। তার প্রস্তুতি চলছে।”

দুপুরে কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের কল্যাণ ট্রাস্টের এক আলোচনায় অংশ নেন ইউএনও। এ সময় সাংবাদিকরা বিষয়টির অবতারণা করলে তিনি এসব কথা বলেন।

এলাকাবাসী, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ জানায়, বলাইশিমুল গ্রামের একটি মাঠে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। গ্রামের মানুষদের একটি অংশ মাঠটি রক্ষা করে অন্য কোথাও আশ্রয়ণ প্রকল্পের দাবি তোলে। অপরদিকে উপজেলার প্রশাসন দাবি করছে, বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার করে ঘর তৈরি করা হচ্ছে। মাঠও সেখানে থাকবে।

এই দ্বন্দ্বের মধ্যে সেখানে ১২টি ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে শনিবার সেখানাকার দুটি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে; যাতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বলাইশিমুল মাঠ রক্ষার দাবিতে আন্দোলনকারীরা নির্মাণকাজ বন্ধ করার জন্য নিম্নআদালতে গিয়ে ফিরে এলেও; ১৪ অগাস্ট হাইকোর্ট তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি আদেশ দেয়। আদেশে নির্মাণকাজের ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয় এবং আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এই বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

একইসঙ্গে মাঠটির শ্রেণি পরিবর্তন কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং কেন বলাইশিমুল মাঠটিকে মাঠ হিসেবে সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দেওয়া হবে না— জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত।

তার পরিপ্রেক্ষিতেই ইউএনও মাঠে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা এবং আপিলের কথা বললেন।

‘সাংবাদিকের সঙ্গে ইউএনওর ভুল বোঝাবুঝির অবসান’

শনিবার ভোরে প্রকল্পের দুটি ঘরে অগ্নিকাণ্ডের পর বিকালে ইউএনও নিজ কার্যালয়ের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন। পরবর্তীতে তার বক্তব্যের ভিডিও দৈনিক সংবাদের উপজেলা প্রতিনিধি হুমায়ূন কবীর নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সন্ধ্যায় ইউএনও তাকে ‘মামলায় জড়ানোর হুমকি’ দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনওকে সতর্কও করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।

নিয়ম অনুয়ায়ী, ইউএনও কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা। সাংবাদিক হুমায়ূন কবীরও এই প্রেসক্লাবের সদস্য। দুপুরে প্রেসক্লাবের কল্যাণ ট্রাস্ট্রের আলোচনায় ইউএনও উপস্থিত হলে নেতৃবৃন্দ বিষয়টি সেখানে তোলেন।

এ সময় সেখানে প্রেসক্লাব সভাপতি আব্দুল কাদির, সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী চৌধুরী কাজল, সাবেক সভাপতি আলমগীর চৌধুরী, সৈয়দ আব্দুল ওয়াহাবসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী চৌধুরী কাজল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ইউএনও মহোদয় এবং সাংবাদিক দুজনই উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকের সঙ্গে ইউএনওর ভুল বোঝাবুঝি থেকে এমন হওয়ায় তার অবসান হয়েছে।”

বলাইশিমুল মাঠে ঘর নির্মাণের উদযোগ নেওয়ার মধ্যেই এলাকাবাসী সেটি রক্ষার দাবিতে আন্দোলনে নামে। এর অংশ হিসেবে গত ২৮ মে মাঠেই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। পরের দিন ২৯ মে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, ইউএনও মাহমুদা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র আসাদুল হক ভূঁইয়া, ওসি আলী হোসেন মাঠে যান।

তারা আন্দোলনকারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করে মাঠের পূর্ব-উত্তর পাশে ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ওইদিনই জায়গাটির মাপ দিয়ে ঘর নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করেন তারা।

পরদিন ৩০ মে একদিকে ঘর নির্মাণের জন্য ইট, বালুসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী পাঠিয়ে কাজ শুরু করা হয়। অপরদিকে একইদিন মাঠ রক্ষার দাবি নিয়ে প্রশাসনে বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন আন্দোলনকারীরা।

মামলার বাদী হন বলাইশিমুল গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান মণ্ডলসহ আটজন। মামলায় বিবাদী করা হয় কেন্দুয়ার ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নেত্রকোণা জেলা প্রশাসককে।

শুনানি শেষে আদালত মামলাটি খারিজ করে দিলে গ্রামবাসীদের একাংশ মাঠ রক্ষার দাবিতে আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দেন। এরপর থেকে আন্দোলনকারীরা অন্তত পাঁচটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। ঢাকার শাহবাগেও ওই মাঠ রক্ষার সমর্থনে মানববন্ধন হয়।

৩০ জুন রাত ৯টার দিকে ‘একদল দুর্বৃত্ত’ প্রকল্পে পাহারারত গ্রাম পুলিশকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নির্মাণাধীন ঘর ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়। এর আড়াই মাসের মাথায় ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

এরপর আন্দোলনকারীরা হাইকোর্টে যান। এ ব্যাপারে তারা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি-বেলার সহযোগিতা চান। তখন বেলা তাদের পক্ষে জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট করে।

রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ মাঠের কাজে স্থাগিতাদেশ দেন। শুনানিতে বেলার পক্ষে ছিলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায়।

আরও পড়ুন:

Also Read: প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে আগুন: মামলার পর গ্রেপ্তার ৩

Also Read: নেত্রকোণায় প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ

Also Read: সাংবাদিককে ‘হুমকি’, কেন্দুয়ার ইউএনওকে সতর্ক করলেন ডিসি