নেত্রকোণায় প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ

এর আগে ৩০ জুন রাতে ওই প্রকল্পের নির্মাণাধীন ঘর ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল।

নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2022, 02:19 PM
Updated : 13 August 2022, 02:19 PM

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মাণাধীন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার বলাইশিমুল গ্রামের আশ্রয়ণে প্রকল্পে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন কেন্দুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা বেগম।

খবর পেয়ে শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, ইউএনও মাহমুদা বেগম, কেন্দুয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জোনাঈদ আফ্রাদ, কেন্দুয়া থানার ওসি আলী হোসেন।

বলাইশিমুল গ্রামের মাঠ রক্ষার আন্দোলনের মধ্যেই এর আগে ৩০ জুন রাতে ওই প্রকল্পের নির্মাণাধীন ঘর ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল।

শনিবার দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণাধীন ১৯টি ঘরের মধ্যে ১০টি ঘরের চালে টিন লাগানো হয়েছে। এসব ঘরের ৭ ও ৮ নম্বর ঘরে পাটের মধ্যে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন দেওয়া হয়। এতে চালের কিছু জায়গা পোড়া দেখা যায়।

কেন্দুয়া থানার ওসি আলী হোসেন বলেন, “ভোরে প্রকল্পের ঘরে আগুন দেখতে পেয়ে টহলরত পুলিশ গিয়ে নেভায়। পাটখড়িতে পাট বেঁধে তাতে তরল দাহ্য দিয়ে আগুন লাগায় দুর্বৃত্তরা। এতে দুইটি ঘরের তিনটি স্থানে ক্ষতি হয়েছে।”

এ ঘটনায় তদন্ত শুরুর পাশাপাশি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানায় পুলিশ।

এদিকে এ ঘটনায় বিকাল ৫টার দিকে নিজের কার্যালয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ইউএনও মাহমুদা বেগম।

এ সময় ইউএনও বলেন, “ঘর নির্মাণকাজে সার্বক্ষণিক পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ পাহারায় রাখা হয়েছিল। শুক্রবার ভোর রাতে একদল লোক এসে নির্মাণাধীন ঘরে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়।”

আগুন লাগানোর ঘটনায় প্রকল্পের বিরোধিতাকারীরাই জড়িত উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িতরা যতই শক্তিশালী হোন না কেন তাদেরকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”

এ ব্যাপারে বলাইশিমুল মাঠ রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের বক্তব্য চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

এলাকাবাসী, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ জানায়, বলাইশিমুল গ্রামের একটি মাঠে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। গ্রামের মানুষদের একটি অংশ মাঠটি রক্ষা করে অন্য কোথায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের দাবি তুলে। অপরদিকে উপজেলার প্রশাসন দাবি করে, বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার করে ঘর তৈরি করা হচ্ছে। মাঠও সেখানে থাকবে।

এই দ্বন্দ্বের মধ্যে নির্মাণকাজের প্রস্তুতি জেনে এলাকাবাসী মাঠ রক্ষার দাবিতে গত ২৮ মে মাঠেই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পরের দিন ২৯ মে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, ইউএনও মাহমুদা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র আসাদুল হক ভূঁইয়া, ওসি আলী হোসেন মাঠে যান। তারা আন্দোলনকারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করে মাঠের পূর্ব-উত্তর পাশে ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ওইদিনই জায়গাটির মাপজোক করে ঘর নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করেন তারা।

পরের দিন ৩০ মে একদিকে ঘর নির্মাণের জন্য ইট, বালুসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী পাঠিয়ে কাজ শুরু করা হয়। অপরদিকে একইদিন মাঠ রক্ষার দাবি নিয়ে প্রশাসনে বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন আন্দোলনকারীরা।

মামলার বাদী হন বলাইশিমুল গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান মণ্ডলসহ আটজন। মামলায় বিবাদী করা হয় কেন্দুয়ার ইউএনও, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নেত্রকোণা জেলা প্রশাসককে।

শুনানি শেষে আদালত মামলাটি খারিজ করে দিলে গ্রামের একাংশ মানুষ মাঠ রক্ষা দাবিতে আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দেন। এরপর থেকে আন্দোলনকারীরা অন্তত পাঁচটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ঢাকার শাহবাগের এই মাঠ রক্ষার সমর্থনে মানববন্ধন হয়।

৩০ জুন রাত ৯টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত প্রকল্পে পাহারারত গ্রাম পুলিশকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নির্মাণাধীন ঘর ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়। এর প্রায় আড়াই মাসের মাথায় এসে নির্মাণাধীন ঘরে আগুন ধরানোর অভিযোগ উঠল।