প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে আগুন: মামলার পর গ্রেপ্তার ৩

নেত্রকোণার কেন্দুয়া থানার ওসি বললেন, অযথা কাউকে হয়রানি করা হবে না।

নেত্রকোণা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2022, 04:29 PM
Updated : 14 August 2022, 04:29 PM

নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৮৩ জনের বিরুদ্ধে মামলার পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মেশকাতুল ইসলাম বাদী হয়ে শনিবার রাতে দ্রুত বিচার আইনে মামলাটি দায়ের করেন বলে কেন্দুয়া থানা ওসি আলী হোসেন জানান।

তিনি বলেন, “মামলায় ৬৩ জনের নামোল্লেখ করে আরও ২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

গ্রেপ্তাররা হলেন জনি, জাহাঙ্গীর ও আল-আমিন। তাদের বাড়ি উপজেলার বলাইশিমুল গ্রামে। তাদের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে।

মামলার বরাত গিয়ে পুলিশ জানায়, শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বলাইশিমুল গ্রামের আশ্রয়ণে প্রকল্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে দায়িত্বরত পুলিশ গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে।

সেখানে নির্মাণাধীন ১২টি ঘরের মধ্যে ৭ ও ৮ নম্বর ঘরে পাটের মধ্যে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন দেওয়া হয়। এতে চালের কিছু জায়গা পুড়ে যায়।

বলাইশিমুল গ্রামের মাঠ রক্ষার আন্দোলনের মধ্যেই এর আগে ৩০ জুন রাতে ওই প্রকল্পের নির্মাণাধীন ঘর ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানার এসআই মাহমুদুল হাসান রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গ্রেপ্তার তিন আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। বিচারক তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন।

কেন্দুয়া থানার ওসি আরও বলেন, “এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না – এমন মানুষ যারা আছেন তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা অযথা কাউকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করব না।”

এলাকাবাসী, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ জানায়, বলাইশিমুল গ্রামের একটি মাঠে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। গ্রামের মানুষদের একটি অংশ মাঠটি রক্ষা করে অন্য কোথাও আশ্রয়ণ প্রকল্পের দাবি তোলে। অপরদিকে উপজেলার প্রশাসন দাবি করছে, বেদখল হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার করে ঘর তৈরি করা হচ্ছে। মাঠও সেখানে থাকবে।

এই দ্বন্দ্বের মধ্যে নির্মাণ কাজের প্রস্তুতি জেনে এলাকাবাসী মাঠ রক্ষার দাবিতে গত ২৮ মে মাঠেই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পরদিন [২৯ মে] উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, ইউএনও মাহমুদা বেগম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র আসাদুল হক ভূঁইয়া, ওসি আলী হোসেন মাঠে যান। তারা আন্দোলনকারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে মতবিনিময় করে মাঠের পূর্ব-উত্তর পাশে ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। ওইদিনই জায়গাটির মাপজোক করে ঘর নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করেন তারা।

পরের দিন ৩০ মে একদিকে ঘর নির্মাণের জন্য ইট, বালুসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী পাঠিয়ে কাজ শুরু করা হয়। অপরদিকে একইদিন মাঠ রক্ষার দাবি নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন আন্দোলনকারীরা।

মামলার বাদী হন বলাইশিমুল গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান মণ্ডলসহ আটজন। মামলায় বিবাদী করা হয় কেন্দুয়ার ইউএনও, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নেত্রকোণা জেলা প্রশাসককে।

শুনানি শেষে আদালত মামলাটি খারিজ করে দিলে গ্রামের একাংশ মানুষ মাঠ রক্ষা দাবিতে আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দেন। এরপর থেকে আন্দোলনকারীরা অন্তত পাঁচটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ঢাকার শাহবাগের এই মাঠ রক্ষার সমর্থনে মানববন্ধন হয়।

৩০ জুন রাত ৯টার দিকে একদল লোক প্রকল্পে পাহারারত গ্রাম পুলিশকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নির্মাণাধীন ঘর ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়। এর প্রায় আড়াই মাসের মাথায় এসে নির্মাণাধীন ঘরে আগুন ধরানোর অভিযোগ ওঠে।

আরও পড়ুন:

নেত্রকোণায় প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ

Also Read: সাংবাদিককে ‘হুমকি’, কেন্দুয়ার ইউএনওকে সতর্ক করলেন ডিসি