গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার জানান, গুগল ম্যাপ, সিসিটিভি ফুটেজ, এবং ড্রোন ব্যবহার করে যানজট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
Published : 27 Jun 2023, 05:58 PM
ঈদযাত্রায় গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মানুষ ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এর ফলে যানজট না হলেও সড়কে ধীরগতিতে যেমন ভোগান্তি বাড়ছে, অন্যদিকে গাড়ির সঙ্কটে দুর্ভোগে পড়ছেন ঘরমুখো মানুষ।
মঙ্গলবার সকালে মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও দুপুরের পর থেকেই সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ি ও মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। সড়কে অনেক পরিবহন থাকলেও তাতে আসন খালি না থাকায় সড়কের পাশে জমতে থাকে মানুষের ভিড়।
বাধ্য হয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ কাটাতে মানুষ ট্রাক-পিকআপের মতো বিকল্প বাহনে অতিরিক্ত ভাড়ায় রওয়ানা হচ্ছেন বাড়ির পথে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত রোভার স্কাউট সদস্য আশিক মাহমুদ বলেন, “বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে গাড়ির চাপের সঙ্গে বেড়েছে মানুষের চাপ। গাড়ি না পেয়ে মানুষ এখন পিকআপে-ট্রাকে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়ায় যাচ্ছেন। এর মধ্যেও অনেকে কিছু না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন।“
ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে চন্দনা চৌরাস্তায় থাকা গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সড়কে যানবাহন ও মানুষের প্রচুর চাপ থাকলেও গাড়ি চলাচল থেমে নেই। বাসন সড়ক থেকে তেলিপাড়া পর্যন্ত সড়কে গাড়ি থেমে থেমে ধীরগতিতে চলছে।
ভোগড়া বাইপাস সড়কে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দায়িত্ব পালনরত গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট নাজমুল হক জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাড়ি ও মানুষের চাপ ছিল না বললেই চলে। এ সময়ে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পরিবেশ ছিল অনেকটাই বছরের অন্যান্য দিনের মতোই।
মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর টঙ্গী থেকে চান্দনা-চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের স্থানে স্থানে বাস থামিয়ে যাত্রী উঠাতে গিয়ে কিছুটা ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু দুপুরের পর থেকেই সড়কে মানুষ ও গাড়ির ভিড় বাড়তে থাকে।
গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নন্দিতা মালাকার জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রি-মোড় এলাকায় সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ঈদে ঘরমুখো মানুষ ও গাড়ির চাপ ছিল। তবে মঙ্গলবার সকালে তা কিছুটা কমলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রি-মোড় এলাকায় যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) নাজমুস সাকিব খান বলেন, “মাঝেমধ্যেই পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যাচ্ছে যে মহাসড়কে গাড়ির অপেক্ষায় থাকা মানুষ রাস্তা পারাপার করতে গিয়েও মাঝে মাঝে গাড়ির ধীরগতি ও লম্বা লাইন হচ্ছে।”
সকালের পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আবদুল্লাপুর এলাকার ‘আলামিন পাইলিং’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কন্ট্রাকক্টর মো. শফিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি শেরপুরের উদ্দেশে রওনা হন। ২৫ মিনিটে তিনি গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া বাইপাস মোড়ে পৌঁছান।
ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকায় তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আব্দুল্লাহপুর থেকে ভোগড়া বাইপাস মোড় পর্যন্ত গাড়ি ও যাত্রীর তেমন চাপ নেই। তবে টঙ্গীর পর থেকে এ পর্যন্ত স্থানে স্থানে যাত্রী তুলতে গিয়ে যানবাহনের জটলা তৈরি হয়েছে।”
গাজীপুরে রোভার স্কাউটের ট্রেজারার ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের শিক্ষক মো. মোফাজ্জল হোসেন জানান, যানজট নিরসনে অর্ধ শতাধিক রোভার স্কাউট সদস্য ভোগড়া বাইপাস মোড়, টঙ্গী স্টেশন রোড, চান্দনা চৌরাস্তা, চন্দ্রা, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা পয়েন্টে গাজীপুরের পুলিশের সঙ্গে মহাসড়কে যানজট নিরসনসহ যাত্রীদের বিভিন্ন সেবায় কাজ করছেন।
অতিরিক্ত ভাড়ায় ট্রাকে-পিকআপে
ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তায় দায়িত্ব পালন করা শামীম আহসান বলেন, সড়কে যেমন গাড়ি বেশি তেমন মানুষও বেশি। অনেকেই গাড়ি না পেয়ে সড়কের পাশে পরিবার-পরিজন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন। ঝুঁকি নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকেও অনেকে রওয়ানা হচ্ছেন।
ভোগড়া বাইপাস মোড়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ট্রাকে চেপেছেন স্থানীয় পোশাক শ্রমিক নাজমুল আলম। তিনি বলেন, রংপুরে যেতে দুপুরে বের হয়েছেন। প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কেনো গাড়িতে উঠতে পারেননি।
তিনি বলেন, “গাড়ি আছে, কিন্তু সিট নাই, তাই ট্রাকে উঠেছি। জনপ্রতি ভাড়া দিতে হবে ৫০০ টাকা। “
চন্দনা চৌরাস্তায় অপেক্ষারত একটি পরিবহনের যাত্রী জাকির হোসেন বলেন, তিনি ময়মনসিংহ যাবেন কিন্তু কোনো উপায় না পেয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ অন্যরুটের গাড়িতে উঠেছেন।
ভেঙে ভেঙে বাড়ির পথে রওয়ানা হওয়া এই পোশাক শ্রমিক অভিযোগ করেন বেশি ভাড়া নেওয়ার। তিনি বলেন, ২০০ টাকার ভাড়ার পথে ৪০০ টাকা দিতে হচ্ছে।
সড়ক পর্যবেক্ষণে গুগল ম্যাপ, ড্রোন
গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম জানান, গুগল ম্যাপ, সিসিটিভি ফুটেজ এবং ড্রোন ব্যবহার করেও মহাসড়কগুলোতে যানজট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “গুগল ম্যাপে লাল চিহ্ন দেখা গেলেই আমাদের ফোর্স সেখানে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে। এ ছাড়া ড্রোন দিয়ে রাস্তায় কোন গাড়ি কী অবস্থায় আছে কিংবা কোথাও গাড়ি বিকল হলো কিনা বা কী কারণে যানজট হচ্ছে তা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
যানজট নিরসনে গাজীপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে মহাসড়কগুলোতে পোশাকে ও সাদা পোশাকে পর্যাপ্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরের দিকে যানবহন ও ঘরমুখো মানুষের চাপ কিছুটা বাড়লেও বড় রকমের প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না ঘটলে আমাদের যে ব্যবস্থাপনা আছে তাতে যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে।”
কোথাও কোথাও বেশি ভাড়া নেওয়ার কথা অভিযোগ পাওয়ার বিষয়ে কমিশনার বলেন, “এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া মাত্র আমরা জড়িত পরিবহন শ্রমিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে যাত্রী সাধারণ ভোগান্তির শিকার না হন। তারা যাতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে তার জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।”