‘প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছিলেন, এক ইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে। তার এ কথায় আমি উদ্বুদ্ধ হই।’
Published : 11 Dec 2022, 04:21 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে উৎসাহিত হয়ে পতিত জমিতে কমলা চাষ করে সাড়া ফেলেছেন রাজবাড়ীর ছরোয়ার হোসেন। তার বাগানে এখন শোভা পাচ্ছে ‘চায়না’, ‘নাগপুরী’ ও ‘দার্জিলিং’সহ কয়েকটি জাতের কমলা।
সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের চরবাগমারা গ্রামের আনোয়ার হোসেন বিশ্বাসের ছেলে ৪৫ বছর বয়সী ছরোয়ার এক একর জমির ওপর তার বাগান গড়ে তুলেছেন। তার বাগান দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবকও কমলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ বলছে, কমলা ও মালটা চাষিদের ‘নিয়মিত পরামর্শ’ দেওয়া হচ্ছে।
ছরোয়ারের বাগান ঘুরে দেখা যায়, এক একর জমির ওপর মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন; নাম রেখেছেন ‘বাংলাদেশ ফ্রুটস অ্যান্ড নার্সারি’।
বাগানে কমলা, মালটা, পেয়ারা ও ড্রাগন ফলের গাছ থাকলেও শুধু কমলার দেখা মিললো। প্রতিটি কমলা গাছেই শোভা পাচ্ছে বড়, মাঝারি ও ছোট সাইজের হলুদ ও সবুজ রঙের কমলা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ছরোয়ার বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিন তার বক্তব্যে বলেছিলেন, এক ইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে। তার এ কথায় আমি উদ্বুদ্ধ হই। এক পর্যয়ে ইউটিউবে চুয়াডাঙ্গার একটি কমলা বাগান দেখে আমার ইচ্ছা জাগে পতিত জমিতে কমলা বাগান করবো।
“পরে ভাইদের জানালে তারাও সম্মতি দেন। এরপর কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারাও আমাকে উৎসাহ দেন।”
জেলা ও জেলার বাইরে থেকে অনেক দর্শনার্থী ছরোয়ারের বাগান দেখতে আসছেন; ছবিও তুলছেন। বাগানের মাঝে একটি টংঘর থেকে পুরো বাগান পাহারা দেন ছরোয়ার। টংঘরের নিচে রয়েছে একটি মতামত বই। দর্শনার্থীরা বাগান ঘুরে যাওয়ার সময় সেখানে মতামত লিখে যান।
ছরোয়ার জানান, পতিত জমি কমলা চাষের উপযোগী করে তোলার পর চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে চায়না, দার্জিলিং, নাগপুরী ও মেন্ডারিংসহ চার জাতের ৪৫০টি কমলা গাছের চারা রোপন করেন। দুই বছর যেতে না যেতেই গাছে ফল ধরতে শুরু করে। দার্জিলিং জাতের কমলাগুলো অনেক বড় হয়েছে; খেতেও সুস্বাদু।
এরই মধ্যে বাগানে থাকতেই প্রায় অর্ধেক কমলা বিক্রি হয়ে গেছে। যেগুলো বিক্রি হয়েছে সেই গাছে সিরিয়াল নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করে রেখেছেন।
“কমলা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি ১৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ১০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়,” যোগ করেন এ বাগান মালিক।
তিনি আরও বলেন, অনেক দিন ভালো রাখতে বেশিরভাগ ফলেই ফরমালিন দেওয়া হয়; যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। তার বাগানের ফলে ফরমালিন দেওয়া হয় না বলে ক্রেতারা কেনার জন্য ভিড় করছে। প্রতিদিনই অর্ডার পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত অনেক বেকার যুবকর তার বাগান ঘুরে নিজেরা কমলা বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
কাজী জাহাঙ্গীর আলম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, “ছরোয়ারের কমলা বাগানের কথা অনেক শুনেছি, তাই দেখতে এসেছি। এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে। প্রতিটি গাছের হলুদ ও সবুজ রংয়ের কমলা ধরে আছে।
“আমি একটি কমলা ছিঁড়ে খেয়েছি; এত সুস্বাদু আর মিষ্টি! যে কারণে আমি তার গাছের ফল কিনে নিয়েছি। আমাদের দেশেও কমলা চাষ হয় এই প্রথম দেখলাম। আগে কখনো দেখি নাই।”
মো. আলিয়ার শেখ নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, “সারাজীবন বাজার থেকে কমলা কিনে খাইছি। ছরোয়ারের বাগানে এসে গাছ থেকে কমলা ছিঁড়ে খেতে খুবই ভালো লাগছে। আমারও ইচ্ছা আছে, এ রকম একটি বাগান করবো।“
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম শহীদ নূর আকবর বলেন, বর্তমানে রাজবাড়ীর অনেক চাষি কমলা ও মাল্টা চাষে আগ্রহী ও উদ্যোগী হয়েছেন। তাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।