বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে হামলার ঘটনায় আতঙ্কে হল ও ক্যাম্পাস ছেড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী হল-ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন বলে কলেজটির অধ্যক্ষ মো. খলিল উদ্দিন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “সোমবার রাতে কলেজে আবাসিক ছাত্রদের ওপর সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। এরপর থেকে ফের হামলার আতঙ্কে শিক্ষার্থী হল ও ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।”
বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভোকেশনাল ও পলিটেকনিকের কোটা বাতিলের দাবিতে গত বুধবার থেকে আন্দোলন করছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এর মধ্যে গত সোমবার কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন করতে আসেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তার আগমন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত রেখে মিছিলে অংশ নিতে বলা হয়।
মিছিলে যেতে অপরাগতা প্রকাশ করায় ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের তর্ক-বির্তক হয়। তখন তাদের ওপর হামলারও চেষ্টা করা হয়। পরে কলেজ অধ্যক্ষকের কাছে নিরাপত্তা চান শিক্ষার্থীরা।
পরে সোমবার রাতে কলেজের ছাত্রাবাসে প্রবেশ করে ছাত্রদের এক পক্ষ অপর পক্ষকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেন।
হামলায় আহত তিনজনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা হলেন- সিফাত হাসান, আশিকুজ্জামান সজীব ও আতিক শাহরিয়ার।
শাহরিয়ার অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগের সাকিব ভূঁইয়ার নেতৃত্বে কলেজের ১০/১২ শিক্ষার্থীসহ বহিরাগত ২০/২৫ জন রামদা, স্ট্যাম্প, লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রাবাসে হামলা চালানো হয়।
সাকিব ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কলেজে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল হতে দিতে চায়নি বিএনপি-জামায়াতের একটি পক্ষ। তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে ম্যুরাল ভাঙার চেষ্টা করে। তখন প্রতিরোধ করলে মারামারি হয়েছে।”
কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সোমবার সন্ধ্যায় থানায় গিয়ে আবেদনও করা হয়েছে। তারাও (পুলিশ) নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তবুও বাইরে হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় তারা চলে গেছে।
“শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে এসেছে। তাদের পরিবারও আতঙ্কে আছে। পরিবারের চাপে হয়তো তারা চলে গেছে।”
সোমবারের হামলার ঘটনায় কোনো অভিযোগ দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, “হামলায় আহত চার শিক্ষার্থী হাসপাতালে রয়েছে। তারা মামলা করবে কিনা, সেটা তাদের বিষয়। কলেজের পক্ষ থেকে করা হবে না।”
শিক্ষার্থীদের পাঠদান সম্পর্কে অধ্যক্ষ বলেন, “শিক্ষার্থীরা ভোকেশনাল ও পলিটেকনিকের কোটা বাতিলের দাবিতে গত বুধবার থেকে আন্দোলনে রয়েছে। তারা পাঠ নেওয়া থেকে বিরত ছিল। হামলার পর শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে চলে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
অনলাইনেও পাঠদানের ব্যবস্থা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ।
সরেজমিনে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ময়মনসিংহের বাসিন্দা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন।
বিকালে হল ত্যাগ করা শিক্ষার্থী সোহান, নাজমুল হাসান, তানিম হোসাইন ও সাবিনা ইয়াসমিন জানান, কলেজের ৬টি ব্যাচে ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। তারা সবাই আতঙ্কিত। কলেজ খোলা থাকার পরও হল-ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে হয়েছে।
আরও পড়ুন: